মেলবোর্নের পর এই স্টেডিয়ামও তো ‘ম’ দিয়ে শুরু

মহেন্দ্র সিংহ দাঁড়িয়ে থাকলেন ঝাড়া দশ মিনিট। স্টিভ ওয়র মতো মাঠে নয়। মাঠের বাইরে। ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠানে। যে ঘটনাকে ঘিরে কিছুটা বিতর্কের বাতাবরণ তৈরি হয়ে গেল ভারত বনাম বাংলাদেশ ওয়ান ডে সিরিজের চব্বিশ ঘণ্টা আগে।

Advertisement

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

ঢাকা শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৫ ০৩:২৫
Share:

মহেন্দ্র সিংহ দাঁড়িয়ে থাকলেন ঝাড়া দশ মিনিট।

Advertisement

স্টিভ ওয়র মতো মাঠে নয়। মাঠের বাইরে। ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠানে। যে ঘটনাকে ঘিরে কিছুটা বিতর্কের বাতাবরণ তৈরি হয়ে গেল ভারত বনাম বাংলাদেশ ওয়ান ডে সিরিজের চব্বিশ ঘণ্টা আগে।

প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী, যে কোনও সিরিজ শুরুর আগে ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। যেখানে দু’টো টিমের অধিনায়ক আসেন। চিত্রসাংবাদিকদের জন্য ছবি তোলার বন্দোবস্ত থাকে। ভারত-বাংলাদেশের ওয়ান ডে সিরিজেরটা যেমন ছিল আজ, বুধবার। সন্ধে সাতটায়, টিম হোটেলে। নিয়ম মেনে সেখানে নির্ধারিত সময়ে ভারত অধিনায়ক উপস্থিত হলেন। কিন্তু বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরফি মর্তুজা এলেন তার দশ মিনিট পর।

Advertisement

ট্রফি উন্মোচন অনুষ্ঠানে কোনও বিতর্ক হয়নি। সেখানে এমএসডিকে বাংলাদেশ অধিনায়কের পিঠ চাপড়ে দিতেই দেখা গিয়েছে। যা হয়েছে, তার আগের ঘটনাকে ঘিরে। প্রেক্ষাপটকে ঘিরে। মিনিট দশেক অপেক্ষার পর একটা সময় ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট ঠিক করে ফেলে, আর দু’মিনিটের মধ্যে মাশরফি না এলে ধোনিকে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া হবে। ক্ষুব্ধ ভাবে বলাবলি শুরু হয় যে, বাংলাদেশ বোর্ডের কাছে জানতে চাওয়া হবে এটা কেন হল? কিছু না জানিয়ে ধোনিকে কেন দাঁড় করিয়ে রাখা হবে? ব্যাপারটা বাড়াবাড়ির দিকে এগোয়নি দু’টো কারণে। এক, মাশরফি প্রায় সঙ্গে সঙ্গে এসে উপস্থিত হন। আর দুই, বাংলাদেশ বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট জানতে পারে, মাশরফি নমাজ-পাঠ করছিলেন। তাই সময় খেয়াল করতে পারেননি।

রাতের দিকে ভারতের প্রশাসনিক ম্যানেজার বিশ্বরূপ দে বলছিলেন, “আমরা এটা নিয়ে আর বিতর্ক বাড়াতে চাই না। আমাদের বাংলাদেশ বোর্ড থেকে বলা হয়েছে যে, মাশরফি সাঁতার আর তার পর নমাজ পড়তে গিয়ে সময়ের খেয়াল রাখতে পারেননি।” বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের কেউ কেউ আবার বললেন যে, ধোনিকে আগাম জানিয়ে রাখা হয়েছিল ব্যাপারটা। টিমের ম্যানেজার খালিদ মাহমুদ সুজন বলছিলেন, “ধোনিকে তো মাশরফি জিজ্ঞেস করেছিল, নমাজ পড়ে এলে অসুবিধে হবে কি না? ধোনি জানত সব।” যে যুক্তি আবার মানছে না ভারতীয় শিবির। বলছে, তাই যদি হত তা হলে ভারত অধিনায়ক দশ মিনিট পরেই নামতেন। আগে নয়। কতক্ষণে অনুষ্ঠান শুরু হবে, সেটাও নাকি জিজ্ঞেস করতেন না।

বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালের পর ভারত-বাংলাদেশের এটা প্রথম ওয়ান ডে সাক্ষাত্‌ বলে একটা চাপা উত্তেজনা ঢাকায় এমনিতেই আছে। মেলবোর্নের পর এ বার মীরপুর। বিশ্বকাপে যে ম্যাচকে নিয়ে ধুন্ধুমার লেগে গিয়েছিল। কোয়ার্টার ফাইনাল হারের পর বাংলাদেশ শিবির থেকে অভিযোগ উঠেছিল অন্তত তিনটে সিদ্ধান্ত তাঁদের বিপক্ষে গিয়েছে। তত্‌কালীন আইসিসি প্রেসিডেন্ট মুস্তাফা কামাল প্রকাশ্যে আম্পায়ারিং নিয়ে প্রতিবাদ তুলেছিলেন। পরে সেই গণ্ডগোলের গিরিমুখ থেকে লাভা-উদ্‌গিরণ এতটাই হয় যে, আইসিসি চেয়ারম্যান নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের সঙ্গে তুমুল লাগে কামালের। শেষ পর্যন্ত কামাল ইস্তফা দিয়ে চলে যান।

বুধবার কামালকে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে পাওয়া গেল না। তিনি বিদেশে। রবিবার ফিরবেন। কিন্তু দুই দেশের দুই অধিনায়ককে পাওয়া গেল।

মহেন্দ্র সিংহ ধোনি মনেই করতে পারলেন না, কবে ঝামেলাটা হয়েছিল! কোন ম্যাচে হয়েছিল! ম্যাচটা বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনাল শুনে বললেন, তার থেকে একটা ব্যাপারই মনে আছে। সে দিনের ক্রিকেটটা মনে আছে।

মীরপুরের পূর্বাভাস সকাল ছ’টা থেকে সন্ধে ছ’টা পর্যন্ত বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হাল্কা থেকে
মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। ছ’টার পর বৃষ্টি না হলেও আকাশ মেঘলা থাকার আশঙ্কা।

মাশরফি মর্তুজা মনে করতে পারলেন। তবে বললেন যে, ও সব ভুলে গিয়েছেন। দেশবাসীর উদ্দেশে বার্তা দিলেন, বিশ্বকাপের সঙ্গে আসন্ন ওয়ান ডে সিরিজকে না গুলোতে। পুরনো কাসুন্দি ঘেঁটে আর উত্তেজিত না হতে। বিরাট কোহলি বনাম রুবেল হোসেন মুখরোচক যুদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন এল। মাশরফি বললেন, “রুবেলের পাগলামিতে যদি টিমের ভাল হয়, তা হলে হোক না। তবে ওদের মধ্যে কোনও ঝামেলা নেই।”

বোঝা গেল, প্রকাশ্যে কেউ আগুন দূরে থাক, ফুলকিও ছড়াবেন না। কিন্তু ঠারেঠোরে সে সব বেরোচ্ছে। সময় প্রলেপ দিলেও কাপ-ক্ষতের যন্ত্রণা এখনও শুকোয়নি নাকি এ-পার বাংলার। বাংলাদেশ মিডিয়াকুলের কেউ কেউ বলছিলেন, মেলবোর্নের রাতে অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে কোনও কোনও ক্রিকেটার বলে ফেলেছিলেন, তাঁদের হারানো হয়েছে। তাঁরা হারেননি। রুবেল হোসেন তার অনেক দিন পরেও নাকি ঘনিষ্ঠদের বলেছেন যে, ভারত সিরিজই তাঁর আসল লক্ষ্য। অধিনায়ক মাশরফি ‘দেইখ্যা লমু’ জাতীয় হুঙ্কার তোলেননি। কিন্তু শীতল শাসানি দিয়ে রাখছেন। তাঁর পেস বোলিং বিশ্বের যে কোনও ব্যাটিংকে নাকি ধ্বংস করে ছাড়তে পারে। তাঁর টিম মাঠে নামলে কোনও নাকি ফেভারিট দেখে না! মেলবোর্ন ফিরবে মীরপুরে? কে জানে।

দু’টো স্টেডিয়ামের নাম তো আবার শুরু ‘ম’ দিয়ে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement