সাউথ ক্লাবের নির্বাচন ঘিরে বিতর্কের সুর

কলকাতায় টেনিসের পীঠস্থান বলে পরিচিত সাউথ ক্লাব এই মুহূর্তে আসন্ন নির্বাচন ঘিরে উত্তপ্ত। ২৯ সেপ্টেম্বর ক্লাবের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে প্রাক্তন ডেভিস কাপার এবং বাংলার সর্বকালের সেরা ক্রীড়াবিদদের অন্যতম জয়দীপ মুখোপাধ্যায়কে দাঁড় করিয়েছেন ক্লাবের একটা বড় অংশ। যেখানে খেলোয়াড়দের সংখ্যাই বেশি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৩৬
Share:

দ্বৈরথ: জয়দীপ মুখোপাধ্যায় ও রজত মজুমদার।

কলকাতায় টেনিসের পীঠস্থান বলে পরিচিত সাউথ ক্লাব এই মুহূর্তে আসন্ন নির্বাচন ঘিরে উত্তপ্ত। ২৯ সেপ্টেম্বর ক্লাবের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে প্রাক্তন ডেভিস কাপার এবং বাংলার সর্বকালের সেরা ক্রীড়াবিদদের অন্যতম জয়দীপ মুখোপাধ্যায়কে দাঁড় করিয়েছেন ক্লাবের একটা বড় অংশ। যেখানে খেলোয়াড়দের সংখ্যাই বেশি।

Advertisement

পরিস্থিতি অন্য বাঁক নিয়েছে কারণ, জয়দীপের বিরুদ্ধে প্রার্থী পদ জমা দিয়েছেন প্রাক্তন আইপিএস অফিসার এবং সারদা কেলেঙ্কারিতে অন্যতম অভিযুক্ত রজত মজুমদার। যার ফলে এক দিকে নির্বাচনের দামামা তো বেজেইছে, পাশাপাশি সারদা কেলেঙ্কারিতে যুক্ত থাকা কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় বিতর্কও হচ্ছে।

আগামী বছরই শতবর্ষ উদযাপন হতে চলেছে ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাবের। সেখানে সারদা মামলায় গ্রেফতার হওয়া প্রাক্তন পুলিশ কর্তা ক্লাবের প্রধান পদে নির্বাচিত হলে সাউথ ক্লাবের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন অনেক সদস্য।

Advertisement

প্রাক্তন টেনিস খেলোয়াড় অজিত লাল বলছেন, ‘‘সাউথ ক্লাবের ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখেই শতবর্ষে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দরকার জয়দীপের মতো খেলোয়াড়কে। কারণ তিনি এক সময়ে দেশের হয়ে খেলে বহু সম্মান এনে দিয়েছেন। সেখানে শতবর্ষে সাউথ ক্লাবের প্রেসিডেন্ট পদে যদি কারাবাস করে আসা কেউ বসেন, মোটেও ক্লাবের জন্য খুব ভাল বিজ্ঞাপন নয়।’’

কলকাতার প্রাক্তন নগরপাল এবং সাউথ ক্লাবের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট তুষার তালুকদার বলে দিচ্ছেন, ‘‘শতবর্ষের সাউথ ক্লাবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক টেনিস দুনিয়ায় পরিচিত মুখকেই দেখতে চাইবেন সদস্যরা। কোনও রকম আর্থিক কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত হয়ে কারাবাস করে আসা প্রেসিডেন্ট মোটেও বাঞ্ছনীয় নয়।’’

রজত মজুমদার এই মুহূর্তে কারাবাসে নেই। তিনি জামিনে মুক্ত। শোনা গিয়েছে, জেরার জন্য তাঁকে আবার ডাকতে পারে সিবিআই। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে সাউথ ক্লাবের কয়েক জন সদস্য অবশ্য বলে চলেছেন, ‘‘সারদা কেলেঙ্কারির কোনও কিছুই এখনও প্রমাণিত নয়। আদালত চার্জ গঠন না করা পর্যন্ত নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে আইনত অসুবিধে নেই।’’ প্রাক্তন নগরপাল তুষার তালুকদার বলছেন, ‘‘ক্লাবের সংবিধানে হয়তো কিছু বলা নেই। তাই এই মনোনয়ন বৈধ বলে বিবেচিত হচ্ছে।’’

সাউথ ক্লাবের আর এক সদস্য এবং আখতার আলির ভাই আনোয়ার আলি সারদা মামলার প্রসঙ্গ না তুলেও বলে দিচ্ছেন, ‘‘জয়দীপ মুখোপাধ্যায় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রাক্তন টেনিস তারকা। দেশে-বিদেশে সর্বত্র তাঁর যোগাযোগ রয়েছে। রজতবাবুও প্রশাসনে ছিলেন। কাজেই প্রেসিডেন্ট পদে লড়াইটা কঠিন। যিনি অতীতে ক্লাবের জন্য ভাল কাজ করেছেন, ক্লাব উপকৃত হয়েছে, ভোটটা তাঁকেই দেব।’’ আখতার আলি অবশ্য বলেন, ‘‘নির্বাচনী কাজিয়ায় ঢুকতে চাই না।’’

তবে প্রেসিডেন্ট পদে লড়াই যে এ বার ঝড় তুলতে পারে, তা মানছেন প্রাক্তন ফুটবলার শ্যাম থাপা ও প্রাক্তন ডেভিস কাপার নরেশ কুমারও।

যাঁকে নিয়ে এত বিতর্ক, আলোচনা সেই রজতবাবুকে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বললেন, ‘‘যাঁরা আমাকে যোগ্য মনে করবেন না, ভোট দেবেন না। যাঁরা মনে করবেন দেবেন। সারদা মামলায় হাই কোর্ট বা সুপ্রিম কোর্ট কী রায় দিয়েছে, তা বুক বাজিয়ে বলব না। সাউথ ক্লাব খেলাধুলোর জায়গা। আমার বিরুদ্ধে যাঁরা প্রচার করছেন, তাঁদের আমি কিছুই বলব না। ঘাতের বিরুদ্ধে প্রত্যাঘাতে আমি বিশ্বাসী নই।’’ তাঁর প্রতিপক্ষ জয়দীপ মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘সাউথ ক্লাবেই আমার বড় হওয়া। আমাকে অনেক সদস্য অনুরোধ করায় মনোনয়ন জমা দিয়েছি। আমার লক্ষ্য, সাউথ ক্লাবে গৌরবময় দিন ও আন্তর্জাতিক টেনিস কলকাতায় ফিরিয়ে আনা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement