মরিয়া: আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে শেষ ম্যাচে নেরোকার বিরুদ্ধে জিততেই হবে ইস্টবেঙ্গলকে। বুধবার সকালে যুবভারতীতে তার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত আমনা, ডুডু-রা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
আই লিগের মরণ-বাঁচন ম্যাচে আজ, বৃহস্পতিবার যুবভারতীতে ইস্টবেঙ্গলের প্রতিপক্ষ নেরোকা এফসি না মিনার্ভা এফসি? আশ্চর্যজনক ভাবে ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে এই প্রশ্নটাই উঠে আসছে। নেপথ্যে মিনার্ভা এফসি কর্ণধার রঞ্জিৎ বাজাজের বিস্ফোরক অভিযোগ।
সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন সূত্রে খবর, মঙ্গলবার গভীর রাতে মিনার্ভা কর্ণধার ই-মেল করে এআইএফএফ-কে জানান— এক) মিনার্ভা কোচ খগেন সিংহকে ইস্টবেঙ্গলের গোলরক্ষক কোচ আব্দুল সিদ্দিকি বলেছেন, পরের মরসুমে সন্তোষ কাশ্যপ দায়িত্ব নিচ্ছেন চেঞ্চোদের। তাই চার্চিলকে ম্যাচ ছেড়ে দিলে পরের মরসুমে খগেনকে লাল-হলুদের কোচ করা হবে। দুই) অ্যালভিটো ডি’কুনহা চেন্নাই সিটি এফসি কোচ ভি. সুন্দররাজন-কে বলেছিলেন, মিনার্ভাকে হারালে পুরস্কৃত করা হবে।
চলতি আই লিগে এর আগেও ম্যাচ গড়াপেটার অভিযোগ করেছিলেন মিনার্ভা কর্ণধার। জানুয়ারি মাসের শুরুতে তিনি দাবি করেছিলেন, তাঁর দুই ফুটবলারকে ৩০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ম্যাচ ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে জুয়াড়িরা। সেই ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিবিআই)-কে দিয়েছে ফেডারেশন। এ বার সরাসরি ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় তোলপাড় পড়ে যায় ভারতীয় ফুটবলে। বুধবার সকালেই ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় ফেডারেশনের ইনটিগ্রিটি অফিসার, প্রাক্তন সিবিআই আধিকারিক জাভেদ সিরাজ-কে। চণ্ডীগড় থেকে ফোনে মিনার্ভা কর্তা বললেন, ‘‘বেশ কয়েক দিন ধরেই আমাদের নানা রকম প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। এই কারণেই ই-মেল করে ফেডারেশনকে সব জানিয়েছি।’’ ফেডারেশনের ইনটিগ্রিটি অফিসারের কথায়, ‘‘মিনার্ভার অভিযোগ পেয়েছি। বৃহস্পতিবার আই লিগ শেষ হওয়ার পরেই তদন্ত শুরু করব।’’
ইস্টবেঙ্গলের শীর্ষ কর্তা দেবব্রত সরকার যদিও মিনার্ভা শিবিরের অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তাঁর কথায়, ‘‘এই ব্যাপারে ফেডারেশনের তরফে সরকারি ভাবে আমাদের কিছু জানানো হয়নি।’’ আর চেন্নাই সিটি-কে পুরস্কৃত করার আশ্বাস? ইস্টবেঙ্গল কর্তার ব্যাখ্যা, ‘‘পরিস্থিতি অনুযায়ী অন্য দলকে ম্যাচের আগে উৎসাহ দেওয়া, শুভেচ্ছা জানানোর মধ্যে কোনও অন্যায় আছে বলে মনে করি না।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘চেন্নাইকে যদি ম্যাচ ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হতো, তা হলে সেটা অপরাধ। আমাদের দলের অনেকেরই বন্ধু রয়েছে চেন্নাই সিটি-তে। বন্ধুদের ওরা বলতেই পারে, জিতলে পুরস্কৃত করা হবে।’’ লাল-হলুদ কর্তার যাবতীয় ক্ষোভ ফেডারেশনের বিরুদ্ধে। তিনি বললেন, ‘‘লাজং এফসি-র বিরুদ্ধে শিলংয়ের দশ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সোমবার আমরা খেলেছি। বৃহস্পতিবার নেরোকা এফসি-র বিরুদ্ধে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ যুবভারতীতে খেলতে হবে প্রায় ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস গরমে। অথচ আমরা মাত্র এক দিন বিশ্রামের সুযোগ পেলাম। কুশল দাস (ফেডারেশন সচিব) ও সুনন্দ ধর (আই লিগ সিইও) যদি দাবি করেন আমাদের সঙ্গে কথা বলে ক্রীড়াসূচি তৈরি করেছেন, তা হলে মিথ্যে কথা বলছেন। বাংলার দলগুলো ওঁদের জন্যই বারবার সমস্যায় পড়ছে।’’ এখানেই শেষ নয়। তিনি যোগ করেন, ‘‘বারবার খারাপ রেফারিংয়ের শিকারও হতে হচ্ছে আমাদের।’’ ইস্টবেঙ্গলের অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করে ফেডারেশনের এক কর্তার জবাব, ‘‘আই লিগের ক্রীড়াসূচি বানিয়েছে টেলিভিশনে ম্যাচ সম্প্রচারকারী সংস্থা। আমাদের হাতে কিছু নেই।’’
কে কোথায় দাঁড়িয়ে
• মিনার্ভা এফসি ৩২ পয়েন্ট
• নেরোকা এফসি ৩১ পয়েন্ট
• মোহনবাগান ৩০ পয়েন্ট
• ইস্টবেঙ্গল ৩০ পয়েন্ট
খেতাব জেতার অঙ্ক
• ফেভারিট মিনার্ভা-ই। অবনমনে থাকা চার্চিল ব্রাদার্সকে হারালেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে তারা। যে সুযোগ অন্য তিন ক্লাবের নেই।
• নেরোকা যদি ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে জেতে তা হলেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে মিনার্ভা ড্র করলেই খেতাব পাবে তারা।
• ইস্টবেঙ্গল জিতলেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে না। মিনার্ভা এবং মোহনবাগান ড্র করলে বা হারলে তবেই খালিদ জামিলের দল চ্যাম্পিয়ন হবে।
• মিনার্ভা হেরে গেলে এবং নেরোকা ও ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ ড্র হলে মোহনবাগান চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে। তবে সে ক্ষেত্রে দিপান্দা ডিকাদের জিততেই হবে।
• মিনার্ভা ড্র করল। ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান জিতল। তখন গোল পার্থক্যে ঠিক হবে চ্যাম্পিয়ন।
মিনার্ভার অভিযোগকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি যতই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠুক, লাল-হলুদ ফুটবলারদের একমাত্র লক্ষ্য নেরোকাকে হারানো। বৃহস্পতিবার জিতলে ইস্টবেঙ্গলের পয়েন্ট হবে ৩৩। কিন্তু মিনার্ভা ঘরের মাঠে চার্চিল ব্রাদার্সকে হারিয়ে দিলেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে। আবার পঞ্জাবের দলটি হারলেও খেতাব নিশ্চিত নয় মহম্মদ আল আমনা-দের। কারণ, কোঝিকোড়ে গোকুলম এফসি-র বিরুদ্ধে জিতলে মোহনবাগানেরও পয়েন্ট হবে ৩৩। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে মুখোমুখি সাক্ষাতে এগিয়ে থাকায় চ্যাম্পিয়ন হবেন
দিপান্দা ডিকা-রা।
ইস্টবেঙ্গলের কোচ থেকে ফুটবলার— সকলেরই দাবি, আই লিগের অঙ্ক নিয়ে তাঁরা নাকি একেবারেই ভাবছেন না। বুধবার সকালে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন সংলগ্ন মাঠে প্রস্তুতির পরে আমনা বললেন, ‘‘আমরা এই মুহূর্তে শুধু নিজেদের নিয়েই ভাবছি। কারণ, এই ম্যাচটা আমাদের জিততেই হবে।’’ হাল ছাড়তে নারাজ আর এক তারকা ডুডু ওমাগবেমিও। কিন্তু তাঁর চিন্তা ক্রমশ বাড়তে থাকা চাপ নিয়ে। প্র্যাক্টিসের পরে বলছিলেন, ‘‘এখনও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি। কিন্তু যে ভাবে জুনিয়র ফুটবলারদের উপরে চাপ বাড়ানো হচ্ছে, তাতে ওরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। মাঠে নেমে স্বাভাবিক খেলা খেলতে পারছে না।’’ আর সাংবাদিক বৈঠকে কোচ খালিদ জামিল বললেন, ‘‘আই লিগে শেষ ম্যাচ জেতা ছাড়া অন্য কিছু ভাবছি না। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়।’’
চ্যাম্পিয়ন না হলে খালিদের বিদায়ও যে প্রায় নিশ্চিত।
বৃহস্পতিবার আই লিগে:
ইস্টবেঙ্গল বনাম নেরোকা এফসি (যুবভারতী), মোহনবাগান বনাম গোকুলম এফসি (কোঝিকোড়)
ও মিনার্ভা এফসি বনাম চার্চিল ব্রাদার্স (পঞ্চকুল্লা)। সব ম্যাচ শুরু বিকেল ৩.০০ থেকে।