প্রত্যয়ী: ট্রফির আশায় এটিকের গারসন। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
নয় বছর আগে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। যে দলের সদস্য ছিলেন ব্রাজিলীয় ফুটবলের বর্তমান অধিনায়ক নেমার দা সিলভা স্যান্টোস (জুনিয়র), ফিলিপে কুটিনহো, কাজ়েমিরোরা। ছিলেন রাশিয়া বিশ্বকাপে ব্রাজিলের গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকারও।
ছোট্ট নেমারের সেই অধিনায়ক গারসন ফ্রাগা ভিয়েরা রাজারহাটের হোটেলে শুক্রবার দুপুরে মোবাইল ঘাঁটছিলেন একমনে। দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই তিনি হিন্দিতে প্রথমে বললেন, ‘‘আ জা মেরে দোস্ত।’’ তার পরে আরও অবাক করে বাংলায় তাঁর মন্তব্য, ‘‘বসো, বসো। আড্ডা মারি।’’ বলেই হো হো করে হাসতে লাগলেন এটিকে-র ৩৩ নম্বর জার্সি পরা গারসন। নিজেই বলে দিলেন তাঁর হিন্দি ও বাংলার শিক্ষকের নাম।
ঝরঝরে ইংরেজিতে এ বার পাঁচ ফুট এগারো ইঞ্চি উচ্চতার ব্রাজিলীয় ফুটবলার বলেন, ‘‘মুম্বই সিটি এফসি-তে খেলার সময় আশুতোষ মেটা হিন্দিটা শিখিয়েছে। বাংলাটা অনেকটা শিখেছি আমার ‘বাবুমশাই’ অরিন্দম ভট্টাচার্যের কাছে। রসগোল্লা-সন্দেশের নেশাটা ওরাই ধরিয়েছে।’’
চব্বিশ ঘণ্টা পরেই আইএসএলের উদ্বোধনী ম্যাচে কলকাতার দল এটিকের হয়ে খেলতে নামবেন কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে। তার আগে এটিকে ডিফেন্ডার ফুরফুরে মেজাজে। সকালে সল্টলেক সেন্ট্রাল পার্কের মাঠে অনুশীলনের সময়ই মজা করছিলেন ইউজেনসন লিংডো, প্রণয় হালদারদের সঙ্গে। দুপুরে আনন্দবাজারের সঙ্গে আড্ডার সময় বলে দিলেন, ‘‘নতুন মরসুম শুরু করছি শনিবার। গত বছর এটিকে দশ দলের লিগে নবম হয়েছিল তা জানি। কিন্তু তার জন্য টেনশনে থাকার কিছু নেই। এখনও পর্যন্ত এটিকে বনাম কেরল ব্লাস্টার্সের ১০ বার সাক্ষাতে ৫-১ এগিয়ে রয়েছি আমরাই। এ বার আইএসএল ট্রফি তৃতীয় বার পেতেই হবে।’’ বলার সময় মুখে ঝকঝকে হাসির সঙ্গে ফুটে ওঠে আত্মবিশ্বাসও।
২০০৯ সালে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে তাঁর অধিনায়কত্বে মেক্সিকো ও সুইৎজ়ারল্যান্ডের কাছে হেরে গ্রুপের বাধা টপকাতে পারেনি ব্রাজিল। সে কথা উঠলে গারসন পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘‘গত বছর কলকাতায় অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের ম্যাচে গোটা স্টেডিয়াম আমার দেশ ব্রাজিলকে সমর্থন করেছিল তা টিভিতে দেখেছি। কলকাতা লিগের মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল ডার্বিটাতেও দেখলাম স্টেডিয়াম ভর্তি। আমাদের প্রথম ম্যাচ থেকেই সেই ফুটবল পাগল সমর্থকরা আসবেন তো? ওঁরা এলেই আইএসএলে হ্যাটট্রিকের প্রেরণা মিলবে।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘প্রবীর, অরিন্দম, ফৈয়জদের থেকে ‘পাগলু ডান্স ডান্স’ গানটা তোলার সঙ্গে নাচটাও শিখেছি। এটিকে-কে তৃতীয় আইএসএল ট্রফিটা দিতে পারলে স্টেডিয়ামেই ওই নাচটা করব সতীর্থদের সঙ্গে।
২০১৬ ও ২০১৭-১৮ পর পর দুই মরসুম খেলেছেন রণবীর কপূরের দল মুম্বই সিটি এফসিতে। শুক্রবার ছিল গারসনের প্রাক্তন দলের মালিক রণবীরের জন্মদিন। সে কথা জানাতেই তাঁর চটজলদি উত্তর, ‘‘সকালেই শুভেচ্ছা জানিয়েছি। রণবীর খুব ‘স্মার্ট’ ছেলে। শাহরুখও দারুণ। তবে আমার প্রিয় সলমন খান। ওঁর ‘সুলতান’ ছবিটা দেখেই ফ্যান হয়ে গিয়েছি। বলিউড আমার
দারুণ লাগে।’’
আর প্রিয় বলিউড অভিনেত্রী কে? ক্যাটরিনা কাইফ না প্রিয়ঙ্কা চোপড়া? এ বার থিয়াগো সিলভা, মিরান্দার ভক্ত বলেন, ‘‘এত কঠিন প্রশ্ন করা চলবে না। কাকে ছেড়ে কাকে বাছি বলুন তো?’’
উঠে আসে তাঁর প্রাক্তন সতীর্থের কথা। রাশিয়া বিশ্বকাপে ব্রাজিল অধিনায়ক নেমারের পারফরম্যান্স ও ‘অভিনয়’-এর প্রসঙ্গ। যা শুনেই গম্ভীর গারসন। বলেন, ‘‘এ বার বিশ্বকাপটা অল্পের জন্য ফস্কে গেল। কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামের কাছে হারের দিন জাপানে ছিলাম। হতাশা কাটতে এক সপ্তাহ লেগেছে।’’ এ বার ফুঁসে ওঠেন, ‘‘কে বলে নেমার অভিনেতা? ও জাদুকর! ব্রাজিলের অনূর্ধ্ব-১৭ দলে খেলার সময় রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটা ম্যাচে ওর সঙ্গে আমার প্রথম আলাপ। ভেবেছিলাম লিকলিকে ছেলেটা শক্তপোক্ত রুশদের টপকাবে কী ভাবে? কিন্তু মাঠে বিশালদেহী রুশ ডিফেন্ডারদের নিয়ে ও যা করেছিল তাকে বলে ম্যাজিক। কাতার বিশ্বকাপে অন্য নেমারকে দেখবেন।’’
আড্ডায় এ বার ওঠে স্টিভ কপেল-সঞ্জয় সেনের কোচিং জুটির মাহাত্ম্য। এটিকের ব্রাজিলীয় ডিফেন্ডারের উত্তর, ‘‘স্টিভ দারুণ কোচ। মাঠে ও মাঠের বাইরে আমাদের চনমনে রেখেছেন। আর মোহনবাগানের প্রাক্তন কোচ সঞ্জয় স্যার তো আই লিগ জয়ী কোচ। ট্রফি হাতে তাঁর উচ্ছ্বাস ইউটিউবে দেখেছি। এই দুই অভিজ্ঞ কোচের মূল্যবান পরামর্শই আমাদের ট্রফি জয়ের হ্যাটট্রিকের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘আপনাদের জোসে রামিরেজ ব্যারেটো আমার শহরের লোক। আমার মতোই গ্রেমিয়ো অ্যাকাডেমির ফসল। তিনি বলেছেন, কলকাতায় ট্রফি দিলেই তুমি নায়ক। আইএসএলে ব্যারেটোর এই কথাটাও একটা প্রেরণা।’’