মহড়া: কেরল ব্লাস্টার্সের হয়ে আইএসএলের প্রস্তুতিতে হিউম-রা।
ইন্ডিয়ান সুপার লিগে তিন বারের মধ্যে দু’বার ফাইনালে উঠেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন অধরা থেকে গিয়েছে কেরল ব্লাস্টার্স এফসি-র। দু’বারই হার এটিকে-র বিরুদ্ধে। যাঁর ভরসায় এ বার ‘চোকার্স’ তকমা মুছে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া কেরল, তিনি স্যর আলেক্স ফার্গুসনের প্রাক্তন সহকারী রেনে মেউলেনস্টিন।
ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের যুব দলে বারো বছর কোচিং করিয়েছেন রেনে। নেদারল্যান্ডস কোচের প্রশিক্ষণেই প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলার থেকে তারকা হয়ে উঠেছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো-রা। এ বার তিনি কেরল ব্লাস্টার্স এফসি-র দায়িত্বে। ১৭ নভেম্বর কোচির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে এটিকের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে হয়তো দেখা যাবে, টেকনিক্যাল এরিয়ায় বাঘের মতো ঘুরছেন মেউলেনস্টিন। কিংবদন্তি ফার্গুসনের সহকারী হিসেবে যে উচ্চতায় পৌঁছেছিলেন, স্বাধীন ম্যানেজার হিসবে তা তিনি পারেননি। তবুও ৫৩ বছর বয়সি মেউলেনস্টিনের যোগদান শুধু কেরল ব্লাস্টার্সের নয়, ভারতীয় ফুটবলের পক্ষেও সুখবর। তিনি কি পারবেন অভিষেকের বছরেই কেরল ব্লাস্টার্সকে খেতাব এনে
দিতে? হয়তো।
আরও পড়ুন: সারা দিনে এক উইকেট, বাংলা ফের কোণঠাসা
কেরল ব্লাস্টার্সের ভক্ত মানেই সব চেয়ে উৎসাহী শুধু নয়, তাঁদের চাহিদাও প্রচুর। একই সঙ্গে তাঁরা ক্ষমাশীলও। যদিও মেউলেনস্টিনের কাছে যা নিশ্চিত ভাবে পাওয়া সম্ভব নয়। তিনি যে শিখেছিলেন স্বয়ং ফার্গুসনের কাছে। তারকাদের ছেঁটে ফেলতেও যিনি কখনও ভয় পাননি। নতীস্বীকার করেননি কোনও চাপের কাছে। তাঁর মন্ত্র ছিল সহজ— কেউ ক্লাবের চেয়ে বড় নয়। কেরলের দায়িত্ব নেওয়ার পরেই মেউলেনস্টিন স্পষ্ট বার্তা দিয়েছিলেন, সমর্থকদের প্রিয় হলেই দলে জায়গা পাওয়া নিশ্চিত, কেউ যেন ধরে না নেন। বলেছিলেন, ‘‘অলসতা পরিবর্তন আনতে পারে না। উন্নতি করতে পারে না ক্লাবও।’’ তাঁর প্রশিক্ষণে কেরল প্রচুর যুব ফুটবলারের উত্থান দেখবে বলেও জানিয়েছেন।
মেউলেনস্টিন বিশ্বাসী ‘কোয়েভার মেথড’-এ। এই পদ্ধতিতে প্রশিক্ষণের অর্থ, বিশেষ এক জনকে নয়। গোটা দলকেই শেখানো হয়, কী ভাবে ব্যক্তিগত দক্ষতা বাড়িয়ে তা দলের কাজে লাগানো যায়। বরাবর জোর দিয়ে এসেছেন দলগত ভাবে সকলের রিসিভিং, পাসিং-এর দক্ষতা বাড়িয়ে নেওয়ার উপর। শেখাতে চেয়েছেন, একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে কী করা উচিত। গতির ব্যবহার এবং গোলের সামনে নিখুঁত থাকা। সমর্থকদের জন্য সর্বোচ্চ বিনোদন যে এ রকম ফুটবলই।
আগের কোচ স্টিভ কপেলের আমলে কেরল ছিল শ্রমজীবী দল। হারানো ছিল দুঃসাধ্য। জিতত কষ্ট করে। ন্যূনতম ব্যবধানে। মেউলেনস্টিনের দলের ফুটবলারদের ভরসা টেকনিক আর দলগত সংহতি। খেলার ধরন আগের চেয়ে সম্পূর্ণ বিপরীত। যা কেরলকে এনে দিতে পারে কাঙ্খিত সাফল্য। রোনাল্ডো, রুদ ফান নিস্তেলরুই, রবিন ফান পার্সি-ও উপকৃত হয়েছেন মেউলেনস্টিনের কোচিংয়ে। রোনাল্ডোর ফ্রি-কিক অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিল তাঁরই ছোট্ট পরামর্শে। এক সাক্ষাৎকারে মেউলেনস্টিন বলেছিলেন, ‘‘ফ্রি-কিকের সময় এক পা সরে
দাঁড়াতে বলেছিলাম।’’
মেউলেনস্টিন বিশ্বাস করেন লড়াইয়ে, আপৎকালীন পরিস্থিতিতে, পঁচাত্তর শতাংশই যেখানে মানসিক যুদ্ধ। কেরল ব্লাস্টার্সের ফুটবলারদের সঙ্গে সমর্থকরাও তৈরি থাকতে পারেন, আইএসএল যুদ্ধের জন্য। আরও এক বার। মেউলেনস্টিন আছেন সঙ্গে যখন, অন্যতম ফেভারিটও তাঁরা।