ফুটবলের অ্যাংগ্রি ইয়ং ম্যান এখন তিনি।
‘ইয়ং’ বলাটা হয়তো ভুল হবে। কারণ যাঁর বয়স ৩১, ফুটবল খেলায় তিনি প্রায় বুড়ো! কিন্তু রাগী তো তিনি বটেই।
সাংবাদিক সম্মেলনে মেসির নাম শুনলেই তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠছেন। তারকা সতীর্থ বেঞ্জিমা-বেলের সঙ্গে ডিনার করতে ভালবাসেন না। নিজের দলের অন্য কেউ গোল করলেও তাঁর মুখ গোমড়া। মিডিয়ার সামনে বলতেও দ্বিধা করেন না, তাঁর নিজের মতো দলের বাকি দশ জন নয়!
কিন্তু এই রাগী লোকই এ বারের ম্যান অব দ্য উইক। প্রমাণ করে দিয়েছেন, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মেসি দু’গোল করলে তিনি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো চার গোল করবেন!
গত শনিবার রাতে লা লিগা চলছিল। আর টুইটারে রিয়াল সমর্থকরা তখন সিআর সেভেনের মুণ্ডপাতে সরব। ‘রোনাল্ডো ঠিক করেনি সতীর্থদের সম্পর্কে খারাপ কথা বলে,’ পোস্ট এক রিয়াল-ভক্তের। টিভিতে অভূতপূর্ব দৃশ্য— সেল্টা ভিগোর বিরুদ্ধে রোনাল্ডো বল পেলেই তাঁর ঘরের মাঠ বের্নাবাও-ই টিটকিরি দিচ্ছে। কিন্তু তিনিও রোনাল্ডো। তার মধ্যেও একাই চার গোল! যার মধ্যে একটা তাঁর সেই ট্রেডমার্ক নাকল-বল ফ্রিকিকে। বিখ্যাত কমিক্স-হিরো হাল্কের আদলে সেলিব্রেশন করে রোনাল্ডো যেন বুঝিয়ে দিলেন, যত আমায় কটাক্ষ করবে ততই আমি উন্নতি করব। রোনাল্ডো যেন এখন হলিউডের র্যাম্বো। যিনি একার হাতে বিপক্ষকে ধ্বংস করতে পারেন।
মঙ্গলবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আবার ৯০ গোলের মাইলফলক ছুঁয়ে রোনাল্ডো এখনও টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা। রোনাল্ডোর রাগের পিছনে অবশ্য আর এক কারণ হতে পারে ব্যালন ডি’অর জিততে না পারা। তিন ফাইনালিস্টের মধ্যে এ বার রোনাল্ডোই সবচেয়ে বেশি গোল করেছিলেন। কিন্তু ফিফা এক বছর বেশি গোল করার ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দেয়, আবার কোনও বছর ট্রফি জিতেছে বেশি কে, সেটার উপর যাবতীয় ফোকাস করে।
রোনাল্ডো একাই একশো হতে পারেন। কিন্তু এ বারও তাঁর রাস্তায় দাঁড়িয়ে সেই থ্রি মাসকেটিয়ার্স— এমএসএন। লা লিগার দল এইবারকে হারিয়ে ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত। ইন্টারনেট নিষ্ঠুর এক জায়গা। রোনাল্ডো এক ম্যাচে চার গোল করেছেন ঠিকই। কিন্তু এখন ‘মেমের’ যুগ। যেখানে ফুটবলারদের কার্টুন তৈরি করা হয়। পুরোটাই ঠাট্টা করতে। মেসি-ভক্তরা তাই কার্টুন তৈরি করে মনে করাতে চাইছেন, স্প্যানিশ ত্রিমুকুট নিয়ে বার্সোলোনা কোচ এনরিকে হাসতে হাসতে বেরিয়ে যাচ্ছেন সিআর সেভেনের সামনে দিয়ে।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের রূপকথার সফর আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। ওয়াটফোর্ডকে হারিয়ে পাঁচ পয়েন্ট ক্লিয়ার লেস্টার। আগামী মরসুমে ১ বিলিয়ন পাউন্ডের টিভিস্বত্ব ঢুকছে ইপিএলে। অনেক বিশেষ়জ্ঞ তাই ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, এ বার দুর্বল দলরাও অবনমন বাঁচাতে ঝাঁপাবে টিভি স্বত্ত্বর জন্য। কিন্তু ‘শেয়াল’রা টিভি স্বত্বর জন্য নয়, ঝাঁপিয়েছে প্রিমিয়ার লিগ ট্রফিটার জন্যই। লেস্টার প্রমাণ করেছে, অর্থটাই সব কিছু নয় ফুটবলে। তাই তো কোচ র্যানিয়েরি বলেছেন, ‘‘আমরা সেই বিখ্যাত ফরেস্ট গাম্প। ফরেস্টের মতো শুধু ছুটে চলতে হবে।’’
ম্যান অব দ্য উইক: ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো