লক্ষ্যে-স্থির: বিপক্ষকে সামলাতে মনঃসংযোগই বড় অস্ত্র পুজারার। ফাইল চিত্র
তাঁকে তুলনা করা হয় রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গে। বলা হয়, মূর্তিমান মনঃসংযোগ। সেই চেতেশ্বর পুজারা বলে দিচ্ছেন, স্লেজিং হল মনঃসংযোগ ভাঙারই একটা ফাঁদ। এবং, আশ্চর্য, তাঁর মতো আপাত শান্ত ব্যক্তিরও মাঝেমধ্যে মনে হয়েছে, দিই পাল্টা জবাব দিয়ে!
২০১৮-তে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের অন্যতম কারিগর ছিলেন পুজারা। ৫২১ রান ছিল তাঁর ঝুলিতে। সব মিলিয়ে সিরিজে ব্যাট করেছিলেন ৩০ ঘণ্টা। একটি চ্যানেলের অনুষ্ঠানে কথা বলতে গিয়ে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের নতুন প্রাচীর বলেছেন, ‘‘ইনিংসের শুরুতে স্লেজিং সামলাতেই হয়। এক বার ক্রিজে থিতু হয়ে গেলে প্রতিপক্ষ আর বিরক্ত করতে চায় না। তখন ওরা ব্যস্ত হয়ে ওঠে, কী ভাবে আমার উইকেটটা তোলা যায়, তা নিয়ে।’’ তাতেই অবশ্য বাগ্যুদ্ধের নিষ্পত্তি হয়ে গেল, ভাবার কারণ নেই। পুজারা যোগ করছেন, ‘‘যখন ওরা উইকেট তুলতে ব্যর্থ হয়, হতাশ হয়ে পড়ে। আর তখন ওদের স্লেজিং আবার শুরু হয়ে যায়। আসলে ওরা চেষ্টা করে মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটাতে।’’
এর পরেই আসল তথ্য ফাঁস করেন ভারতীয় দলের সব চেয়ে শান্ত ক্রিকেটার বলে পরিচিত পুজারা। এমন সময়ও নাকি তাঁর ক্রিকেটজীবনে উপস্থিত হয়েছে, যখন তাঁর মনে হয়েছে, পাল্টা জবাব দেবেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি সাধারণত জবাব দিতে যাই না। কিন্তু কখনওসখনও মনে হয় যে, উত্তর দিই। তার পরে নিজেকে সামলে নিই। কারণ আমি নিজে তো জানি আমার কাজটা কী। সে দিকেই তাই মনটা দিই।’’
পুজারা মনে করেন, স্লেজিং একটা ফাঁদ। প্রতিপক্ষ তা পাতে মনঃসংযোগ নষ্ট করে ব্যাটসম্যানকে আউট করার জন্য। ‘‘উত্তর দিতে যাওয়া মানে ওদের ফাঁদে পা দেওয়া। আমি তাই বিরত থাকি। ওরা যা পারে বলে যাক, আমি নিজের দুনিয়ায় থাকি। এটাই আমার মন্ত্র,’’ বলছেন তিনি। রাহুল দ্রাবিড়ের ক্রিকেট দর্শনের কথা তোলেন পুজারা। বলেন, ‘‘ওঁর ক্রিকেট জীবনের দিকে যদি তাকান, অনেক উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু কখনও ভারসাম্য হারাননি। সব সময় শান্ত মেজাজ ধরে রেখেছেন। একটা নয়, অনেক গুণ ছিল ওঁর মধ্যে। আমার সেগুলো নতুন করে বলার দরকার নেই।’’
দ্রাবিড়ের আত্মত্যাগ তাঁর কাছে উদাহরণ। ‘‘টিমর জন্য যে কোনও কিছু করতে প্রস্তুত ছিলেন রাহুল দ্রাবিড়,’’ বলছেন পুজারা, ‘‘আমি কখনও উইকেটকিপিং করিনি। কিন্তু উনি সেটাও করেছিলেন, যখন ওয়ান ডে-তে দলের প্রয়োজন হয়েছিল। নিয়মিত কিপার না হলে কাজটা করা খুবই কঠিন।’’ এখানেই শেষ হচ্ছে না দ্রাবিড়ের প্রতি শ্রদ্ধা। পুজারা যোগ করছেন, ‘‘সব সময় টিমম্যান ছিলেন রাহুল দ্রাবিড়। তিন নম্বরে ব্যাট করতে গিয়ে অনেক পরীক্ষার সামনে পড়তে হয়। দীর্ঘ সময় ধরে সে সব চ্যালেঞ্জ সামলেছেন উনি। এবং, সব ধরনের ক্রিকেটে। কত দীর্ঘ সময় ধরে ওয়ান ডে ক্রিকেটেও খেলেছেন। কেরিয়ারের শেষের দিকে টি-টোয়েন্টি খেলতে নেমেও সফল হয়েছেন।’’ রাহুল ঘরানার হয়েও তিনি— চেতেশ্বর পুজারা যে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ব্রাত্য!