২০১৩তে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। ধোনির নেতৃত্বে।
আবার একটা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। আবার বিশ্ব ক্রিকেটের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। বিরাট কোহালি তো বলেই দিয়েছেন বিশ্বকাপের থেকেও অনেক বেশি কঠিন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। ইতিমধ্যেই সাতটি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দেখে ফেলেছে বিশ্ব ক্রিকেট। হাতে মাত্র ছ’দিন। তার পরই ইংল্যান্ডে শুরু হয়ে যাচ্ছে আট দেশের এক কথায় বিশ্ব জয়ের লড়াই। সদ্য আইপিএল খেলে ফিরেছে অনেকেই। সেই স্মৃতিকে পিছনে ফেলে এখন দেশের জন্য লড়তে তৈরি বিরাট কোহালি থেকে ধোনি সকলেই। এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক গত সাতবারের চ্যাম্পিয়নদের।
আরও খবর: চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অশ্বিন-জাডেজাতেই বাজি ধরছেন প্রসন্ন
১৯৯৮: সে বার খেলা হয়েছিল বাংলাদেশে। ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চার উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকা। টস জিতে ক্যারিবিয়ানদের ব্যাট করতে পাঠিয়েছিল আফ্রিকা। ওপেনার ফিলো ওয়ালেসের ১০০ রানের দুরন্ত ইনিংসও জেতাতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। কারণ এক জনের ১০০ রানের ইনিংসের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ধসে গিয়েছিল ৪৯.৩ ওভারে ২৪৫ রানে। পরে ব্যাট করে ছ’উইকেট হারিয়ে জয়ের রান তুলে নিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই সময় দলে ছিলেন হ্যান্সি ক্রোনিয়ে।
২০০০: এ বার ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল নিউজিল্যান্ড ও ভারত। সে বার ভারতকে হারিয়ে নাইরোবি থেকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দেশে নিয়ে গিয়েছিল কিউইরা। টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। শুরুটা দারুণ করেছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভারত। ২৬ ওভারে কোনও উইকেট না হারিয়ে ১৪১ রান তুলে ফেলেছিল দল। কিন্তু ৬৯ রান করে সচিন তেন্ডুলকর রান আউট হতেই ছন্দ পতন। এর মধ্যেও অধিনায়কের ব্যাট থেকে এসেছিল ১১৭ রানের ইনিংস।কিন্তু ক্রিস কেয়ার্নসের শত রানের সুবাদে দু’বল বাকি থাকতেই জয়ের রান তুলে নেয় নিউজিল্যান্ড।
২০০২: এ এক অভিনব চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনাল ছিল। এই ফাইনাল খেলা হয়েছিল ১১২ ওভারের কিন্তু তার পরও কোনও ফলাফল হয়নি। শেষ পর্যন্ত যৌথ চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়েছিল শ্রীলঙ্কা ও ভারতকে। একটি রিজার্ভ ডে ছিল। প্রথম দিন ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেস্তে যাওয়ার পর দ্বিতীয় দিন আবার প্রথম থেকে ম্যাচ শুরু হয়েছিল। এটা নিয়ে পরবর্তিতে অনেক জলঘোলা হয়েছিল কিন্তু উত্তর মেলেনি কেন রিজার্ভ ডেতে পুরো ম্যাচ খেলানো হল তা নিয়ে। তার উত্তর আজও মেলেনি। কলোম্বোয় সে বার ম্যাচ অমিমাংসিতই থেকে গিয়েছিল শেষ পর্যন্ত।
২০০৪: এখনও পর্যন্ত এটাই ছিল সব থেকে রোমাঞ্চকর ফাইনাল। যেখানে ওভালের মাটিতে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে জয়ের ধ্বজা উড়িয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৪৯.৩ ওভারে গুটিয়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। ট্রেস্কোথিকের ১০৪ রানের ইনিংস কাজে লাগেনি। একইভাবে বল হাতে কাজে লাগেনি অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের দুরন্ত স্পেল। সারওয়ান, লারা, ব্রাভোদের পর পর ফিরিয়ে দিয়েছিলেন প্যাভেলিয়নে। ১৪৭ রানের ৮ উইকেট চলে গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের। তখনও বাকি ছিল আসল ড্রামা। যখন ধরেই নেওয়া হয়েছিল ইংল্যান্ডের জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা তখনই ব্যাট হাতে রুখে দাঁড়ালেন কার্টনি ব্রাউন ও ইয়ান ব্র্যাডশ।৪৮.৫ ওভারে জয়ের রান তুলে দিলেন এই দু’জন টেন এন্ডার। ২৫ বছর পর আবার বিশ্ব ক্রিকেটের কোনও ট্রফি জিতল ক্যারিবিয়ানরা।
২০০৬: এ বারও ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। উল্টোদিকে তখন অস্ট্রেলিয়া। প্রথমে ব্যাট করে পাঁচ ওভারে ৪৯ রান তুলে ফেলেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ভাবা হয়েছিল বিরাট রানের টার্গেট দেবে তারা। কিন্তু তার পরই ছন্দপতন। ৩০.৪ ওভারে ১৩৮ রানেই শেষ হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস। সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে খাটতে হয়নি অস্ট্রেলিয়াকে। শেন ওয়াটসন ও ড্যামি মার্টিনের দুরন্ত ইনিংসে বাজিমাত করে অস্ট্রেলিয়া। ডাক ওয়র্থ লুইস মেথডে ৪১ বল পবাকি থাকতে ২৮.১ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ১১৬ রান কের ম্যাচ জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া। এই একটি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিই হয়েছিল ভারতে।
২০০৯: এ বারটিও ছিল অস্ট্রেলিয়ার। ভারত ছাড়া দু’বার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি চ্যাম্পিয়ন এই দেশই। এ বার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার শিকার নিউজিল্যান্ড। সেঞ্চুরিয়নের ফ্ল্যাট পিচে কোনও রান না করে ব্রেন্ডন ম্যাকালামের ফিরে যাওয়ার ধাক্কাটা কাটিয়ে উঠতে পারেনি কিউইরা। যার ফল ৯ উইকেট হারিয়ে ২০০ রানেই গুটিয়ে যায় কিউইদের ইনিংস। জবাবে ব্যাট করতে নেমে আবারও সেই শেন ওয়াটসন। তাঁর অপরাজিত ১০৬ রানের ইনিংসেই লেখা ছিল জয়ের কাহিনী। ৪.৪ ওভার বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতে নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ৪ উইকেটে ২০৬ রান করে অস্ট্রেলিয়া।
২০১৩: এই ফাইনালেও ছিল বৃষ্টির ভ্রুকূটি। মনে করা হচ্ছিল এ বারও ট্রফি ভাগাভাগি করে দিতে হবে। কারণ এই ম্যাচের কোনও রিজার্ভ ডে রাখা ছিল না। প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১২৯ রান তোলে ভারত। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১২৪ রান করে ইংল্যান্ড। পাঁচ রানে ফাইনাল জিতে এমএস ধোনিও পৌঁছে যান রেকর্ডে। অধিনায়ক ধোনির ঝুলিতে জায়গা করে নিল সব আইসিসি ট্রফি।