উত্তেজনা: ডার্বির আগে বিশ্রী হার। ম্যাচের পরে ক্ষিপ্ত ভক্তদের ক্ষোভের মুখে পড়লেন কর্তারাও। নিজস্ব চিত্র
যত কাণ্ড কল্যাণীতে!
গোকুলম এফসির বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে আবহ ছিল একেবারে অন্যরকম। ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্ডার বোরখা গোমেস পেরেসের সন্তানের আরোগ্য কামনায় গ্যালারিতে ব্যানার। বোরখা যে-হেতু তিন নম্বর জার্সি পরে খেলেন, তাই ম্যাচের তিন মিনিটে দর্শকদের সঙ্গে আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস গার্সিয়া ও রিজার্ভ বেঞ্চের অন্যান্যরা এক মিনিট ধরে তালে তালে হাততালি দিলেন। কিন্তু মার্তি ক্রেসপির আত্মঘাতী গোলে গোকুলম এগিয়ে যাওয়ার পর থেকেই উত্তপ্ত হতে শুরু করে আবহ। মার্কোস খিমেনেস দে লা এসপারা মার্তিনের পরিবর্তে নতুন বিদেশি স্ট্রাইকার আনার দাবিতে সরব হন সমর্থকেরা। পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে মার্কাস জোসেপ ৩-১ করার পরে। উপস্থিত প্রায় সাড়ে ন’হাজার দর্শক তখন হতাশ।
গ্যালারিতে বসে ম্যাচ দেখছিলেন ইস্টবেঙ্গলের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার (সিইও) সঞ্জিত সেন ও চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়। শতবর্ষে ক্লাবের এই হাল দেখে ভক্তরা প্রশ্ন তোলেন দল গঠন নিয়ে। তাঁরা বার বার জানতে চান, চূড়ান্ত ব্যর্থ মার্কোসের বদলে কেন নতুন বিদেশি স্ট্রাইকার আনা হবে না? এর পরেই সমর্থকদের যাবতীয় ক্ষোভ গিয়ে পড়ে দুই আধিকারিকের উপরে। শারীরিক ভাবে নিগৃহীত হন তাঁরা। ভিড়ের মধ্যে থেকে কেউ পপকর্নের প্যাকেট ছুড়ে মারেন, কেউ জুতো দিয়ে আঘাতও করেন। অভিযোগ, ইস্টবেঙ্গলের সিওও-ও পাল্টা হাত চালিয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গ্যালারিতে ওঠে পুলিশ। লাল-হলুদের দুই শীর্ষ আধিকারিককে তাঁরাই উদ্ধার করেন। তাতেও ক্ষোভ কমেনি। স্টেডিয়ামের বাইরে বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। ‘গো ব্যাক’ ধ্বনি দেন আলেসান্দ্রোর উদ্দেশেও।
সমর্থকদের হাতে নিগৃহীত হয়ে হতাশ সিইও বলেন, ‘‘একটা ম্যাচে হারের জন্য সমর্থকেরা যা করছেন, তাতে খুব খারাপ লাগছে। ওঁরা হয়তো ভেবেছেন, আমার তরফে খামতি রয়েছে। অথচ আই লিগে আমরাই সব চেয়ে বেশি খরচ করেছি।’’ যোগ করেছেন, ‘‘দিনের শেষে আমিও এক জন ইস্টবেঙ্গল সমর্থক। তাই হতাশ।’’
গোকুলমের বিরুদ্ধে জিতলে টেবলের দ্বিতীয় স্থানে উঠতে পারত ইস্টবেঙ্গল। সে ক্ষেত্রে মোহনবাগানের সঙ্গে পয়েন্টের ব্যবধান ২ পয়েন্টের থাকত। ৭ ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবলের শীর্ষে এই মুহূর্তে জোসেবা বেইতিয়ারা। এ দিনের হারের ফলে ৬ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে নেমে গেল ইস্টবেঙ্গল। তার চেয়েও বেশি উদ্বেগের ডার্বির আগে এই বিপর্যয়। কেন এই হাল দলের? এই মরসুমে কেন এ রকম দলগঠন হল? ইস্টবেঙ্গল সিইও দায়ী করলেন কোচকেই। বললেন, ‘‘কোচই ফুটবলার নির্বাচন করেছেন। কোন ফুটবলার কতটা দক্ষ, তা আমাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। কোচ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’ যোগ করেছেন, ‘‘আমরা সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছি কোচকে। দল কী ভাবে খেলবে, সেই সিদ্ধান্ত তিনি নেন। আমরা কখনওই কোনও ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করি না। এগুলো আমাদের এক্তিয়ারের বাইরে।’’ মার্কোসকে রাখা নিয়ে তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘এই বিদেশি ফুটবলারদের নিয়ে খুশি কি না, কোচকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি জানান, এই দল নিয়েই খুশি।’’
কয়েক দিন আগে ইস্টবেঙ্গল কর্তারা কোচের সঙ্গে আলোচনায় বসে তাঁর হাতে ফুটবলারদের তালিকা তুলে দেন। কেন সেই তালিকাকে গুরুত্ব দেওয়া হল না? সিইও-র জবাব, ‘‘ফুটবলার আনতে গেলে দেখতে হয়, তাঁর নিজের কী সিদ্ধান্ত। যে ক্লাবে খেলছেন, তারা কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে ছাড়ার ব্যাপারে।’’ এর পরেও কি আলেসান্দ্রো থাকবেন? সিইও বলছেন, ‘‘এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ক্লাবের মালিকেরা।’’