সাক্ষী মালিক ও বজরং পুনিয়া। ছবি: পিটিআই
২৩ এপ্রিল থেকে দিল্লির যন্তর মন্তরে আন্দোলন শুরু করেছিলেন কুস্তিগিরেরা। ভারতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের গ্রেফতারির দাবিতে বজরং পুনিয়া, সাক্ষী মালিক, বিনেশ ফোগটেরা পথে নেমেছিলেন। আন্দোলন শুরু হওয়ার ৪৫ দিন পরে অবশেষে তাঁদের কথা শুনল কেন্দ্র।
বুধবার কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের অনুরোধে তাঁর বাড়িতে বৈঠক করতে যান বজরংরা। সেখানে পাঁচটি দাবি জানান তাঁরা। পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলে সেই বৈঠক। সেই দাবিগুলির সব এখনই মানা না হলেও কিছু দাবি মেনে নিয়েছে কেন্দ্র। আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, ১৫ জুনের মধ্যে ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করা হবে। অনুরাগের থেকে এই আশ্বাস পাওয়ার পরেই আন্দোলন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেন কুস্তিগিরেরা। জানিয়ে দেন, ১৫ জুন পর্যন্ত তাঁরা কোনও বিক্ষোভ, আন্দোলন করবেন না। তা হলে কি কেন্দ্রের সঙ্গে বৈঠকের পরে বরফ গলার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে! কেন্দ্রের আশ্বাসে কি ভরসা দেখাচ্ছেন কুস্তিগিরেরা!
মঙ্গলবার মধ্যরাতে অনুরাগের টুইট
মঙ্গলবার রাত ১২.৪৭ মিনিটে টুইট করেন অনুরাগ। সেখানেই প্রথম বোঝা যায়, কুস্তি বিতর্কে সুর নরম করতে চাইছে সরকার। সাক্ষী, বজরংদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়ে ক্রীড়ামন্ত্রী লেখেন, “কুস্তিগিরদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছুক সরকার। সে কারণে আলোচনার জন্যে কুস্তিগিরদের কাছে আবার আমন্ত্রণ পাঠিয়েছি।”
আলোচনার অনুরোধ শাহেরও
এর মধ্যেই জানা যায়, খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নাকি ফোন করে কুস্তিগিরদের দ্বিতীয় বার আলোচনা করার অনুরোধ করেছেন। মঙ্গলবার একটি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন বজরং। তার পরেই তাঁর কাছে ফোন আসে শাহের। তিনি অনুরোধ করেন আর এক দফা বৈঠকের জন্য। শাহের অনুরোধের পরে বজরং পাল্টা জানান, গোপনে আর তাঁরা কোনও বৈঠক করতে রাজি নন। এর পরেই অনুরাগের বাড়িতে যান তাঁরা।
কুস্তিগিরদের পাঁচ দাবি
বুধবার কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কুস্তিগিরেরা যে পাঁচটি দাবি পেশ করেন সেগুলি হল— ১) জাতীয় কুস্তি সংস্থায় অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। ২) সংস্থার মাথায় মহিলা প্রধান নিয়োগ করতে হবে। ৩) ব্রিজভূষণ এবং পরিবারের কেউ যেন জাতীয় কুস্তি সংস্থার সঙ্গে জড়িত থাকতে না পারেন। ৪) নতুন সংসদ ভবনের সামনে প্রতিবাদ করতে যাওয়ায় কুস্তিগিরদের বিরুদ্ধে থানায় যে অভিযোগ জানানো হয়েছে তা খারিজ করতে হবে। ৫) ব্রিজভূষণকে গ্রেফতার করতে হবে।
অনুরাগের জবাব
কুস্তিগিরদের দাবিগুলির মধ্যে কিছু দাবি মেনে নিয়েছে কেন্দ্র। অনুরাগ বলেছেন, ‘‘ভারতীয় কুস্তি সংস্থায় একটি অভ্যন্তরীণ কমিটি তৈরি করা হবে। সেই কমিটির মাথায় থাকবেন এক জন মহিলা।’’ কুস্তিগিরদের দাবি মেনে তাঁদের বিরুদ্ধে করা সব এফআইআর তুলে নেওয়া হয়েছে বলেও জানান ক্রীড়ামন্ত্রী। অনুরাগ বলেছেন, ‘‘আমরা আশ্বাস দিয়েছি, ১৫ জুনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে চার্জশিট পেশ করা হবে। ভারতীয় কুস্তি সংস্থার নির্বাচন প্রক্রিয়া ৩০ জুনের মধ্যে শেষ হবে।’’ তবে ব্রিজভূষণকে গ্রেফতার করা দাবি এখনও মানেনি কেন্দ্র। অনুরাগ জানিয়েছেন, সুষ্ঠু ভাবে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
কুস্তিগিরদের সিদ্ধান্ত
ক্রীড়ামন্ত্রীর সঙ্গে পাঁচ ঘণ্টা বৈঠক করে বেরিয়ে আসার পর সাক্ষী বলেছেন, ‘‘আমরা দাবি করেছিলাম, আমাদের বিরুদ্ধে দিল্লি পুলিশ যে এফআইআর করেছিল সেগুলো তুলে নিতে হবে। ওঁরা তাতে রাজি।’’ এই আশ্বাসের পরেই আন্দোলন স্থগিত রেখেছেন কুস্তিগিরেরা। তবে ১৫ জুনের মধ্যে তদন্ত শেষ না হলে নতুন করে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বজরং, সাক্ষীরা। বজরং বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা আমাদের দাবি জানিয়েছি। উনি বলেছেন, ১৫ জুনের মধ্যে তদন্ত শেষ হবে। তত দিন আমরা আন্দোলন স্থগিত রাখছি। ১৫ জুনের পরে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।’’
ব্রিজভূষণ নেই, চাপমুক্ত কুস্তিগিরেরা
হরিয়ানার সোনপতে সাই (স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া) কমপ্লেক্সে অনূর্ধ্ব-১৫ ও অনূর্ধ্ব-২০ স্তরের এশিয়ান কুস্তি প্রতিযোগিতার ট্রায়াল চলছে। সেখানে অংশ নেওয়া কুস্তিগিরেরা জানিয়েছেন, ব্রিজভূষণ না থাকায় অনেক খোলা মনে লড়ছেন তাঁরা। ব্রিজভূষণ ভারতীয় কুস্তি সংস্থার সভাপতি হওয়ার পর থেকে যখনই কোনও ট্রায়াল হত তখনই সেখানে দেখা যেত তাঁকে। সোফায় বসে মাইক্রোফোন হাতে সবটা পরিচালনা করতেন তিনি। এমনকি, রেফারিদেরও নির্দেশ দিতে দেখা যেত ব্রিজভূষণকে। এ বার সেই ছবি নেই। ফলে অনেক শান্তিতে রয়েছেন কুস্তিগিরেরা। ট্রায়ালে অংশ নেওয়া এক কুস্তিগির বলেছেন, ‘‘আমরা কোনও চাপ ছাড়াই ট্রায়ালে অংশ নিয়েছি। অনেক খোলা মনে খেলতে পারছি। আগে সভাপতি মাইক্রোফোনে বার বার নির্দেশ দিতেন। তাতে আমাদের ছন্দ নষ্ট হত। এখন সেই সমস্যা হচ্ছে না।’’