আনন্দ-বধের আনন্দ। ম্যাচ শেষে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন কার্লসেন।
বিরাট ধাক্কা।
যে কোনও খেলা এগিয়ে নিয়ে যেতে দরকার হয় এক জন আইকনের। ভারতীয় দাবাও প্রায় দু’দশকে আনন্দের হাত ধরেই এগিয়ে গিয়েছে। আমাদের আশা, ভরসা, স্বপ্ন সব ভিশিকে ঘিরেই। তাই ভারতীয় দাবার জন্য চেন্নাইয়ের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের পর আরও একটা দুঃখের দিন। সোচিতে ৪৫ চালে বিশ্ব দাবার খেতাবি যুদ্ধের একাদশ গেমের ফয়সালা হয়ে যাওয়াটা ম্যাগনাস কার্লসেনকে টানা দ্বিতীয় বার চ্যাম্পিয়নের আসনে বসাল। হার মানল ভিশি। পয়েন্ট কার্লসেনের পক্ষে ৬.৫-৪.৫।
অথচ একটা সময় কিন্তু ভিশিই এগিয়ে ছিল। বিশেষ করে ২৩ নম্বর চালে (বোড়ে) ও যে ভাবে সুবিধে তৈরি করতে পেরেছিল দাবা বিশ্বের তাবড় খেলোয়াড় তার প্রশংসা করেছেন। ঠিক তার চার চালের মাথাতেই ঝুঁকি নিয়ে বসে। যার জন্য ওর সুবিধেজনক পজিশনটাই হাতছাড়া হয়ে যায়। দাবা বিশ্বও যা দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছিল। কেন আনন্দের মতো অভিজ্ঞ আর ঠান্ডা মাথার ছেলে এমন ঝুঁকি নিতে গেল? এই গেমটা ড্র করতে পারলেই তো ১২ নম্বর গেমে সাদা ঘুঁটি নিয়ে অল আউট খেলার সুযোগ ছিল ভিশির সামনে। তা হলে? প্রশ্নগুলো উঠতে শুরু করে।
আসলে বাইরে থেকে বলা যতটা সোজা, দাবার বোর্ডে বসে সেই পরিস্থিতি বোঝা ততটাই কঠিন। হয়তো আনন্দ উত্তেজনার বশে চালটা দিয়ে ফেলেছিল। সেটাকে আর সামলাতে পারেনি। তা ছাড়া চুয়াল্লিশের ভিশির কাছে তেইশের কার্লসেনের সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধে পাল্লা দেওয়াটাও তো সোজা নয়। ‘প্রায় দুর্বলতাহীন’ প্রতিদ্বন্দ্বী এমন সুযোগ পেলে তার পুরো ফায়দা তুলবে সেটাই স্বাভাবিক। সেটাই হল।
গেম শেষ হওয়ার পর দেখলাম, সাংবাদিক বৈঠকে আনন্দ স্বীকারও করল স্নায়ুচাপের জন্যই হয়তো চালটা দিয়ে ফেলেছিল। তবে হারলেও ভিশি এখনও বিশ্ব দাবায় ফিরে আসতে পারে। সাংবাদিক বৈঠকেও ও অবসর নিচ্ছে না সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছে। আমারও মনে হয় গত বার যে ভাবে খেতাব হারানোর দু’মাসের মধ্যে দারুণ ভাবে ফিরে এসেছিল এ বারও সেটা হবে। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটিয়ে আবার কার্লসেনকে চ্যালেঞ্জ জানাতে তৈরি হবে ও। ভিশির সেই চমকেরই অপেক্ষা এখন।