বুদাপেস্টে সাঁতারের নয়া বিস্ময় কেলব। ছবি: এএফপি
সাঁতারের দুনিয়ায় নতুন চমক। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সাতটা সোনা। যুক্তরাষ্ট্রের কেলব ড্রাসল বুদাপেস্টে এই নতুন নজির গড়ে ছুঁয়ে ফেললেন মাইকেল ফেল্পসকে। ২০০৭-এ ফেল্পস যে রেকর্ড গড়েন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে।
শুধু তাই নয়, বিশ্ব মিটে তিনি এমন একটা নজির গড়ে ফেলেছেন যা কিংবদন্তি মার্কিন সাঁতারু মাইকেল ফেল্পসেরও নেই। সাতটার মধ্যে একটা সেশনেই তিনটে সোনা জয়। আরও ভাল করে বললে ৯৮ মিনিটে সোনা জয়ের হ্যাটট্রিক। সব মিলিয়ে তিনটি ব্যাক্তিগত এবং চারটি রিলে ইভেন্টে চ্যাম্পিয়ন হন কেলব।
ছ’ফুট তিন ইঞ্চি লম্বা মার্কিন সাঁতারু গত এক সপ্তাহ ধরেই আগুনে ফর্মে রয়েছেন। এত দিন বলা হতো, মাইকেল ফেল্পেসের ছায়ায় চাপা পড়ে রয়েছেন তিনি। যাঁর ঝুলিতে ইতিমধ্যে রয়েছে দুটি অলিম্পিক্স সোনাও। রিও-তে যে সোনা জেতার সময় মাইকেল ফেল্পসের সঙ্গে রিলে দলে ছিলেন তিনি। বুদাপেস্টে অবশেষে তিনি ফেল্পসের ছায়া থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেন বলা হচ্ছে।
চার বছর আগেই জুনিয়র বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে কেলব নজির গড়েও ফেলেছিলেন। একশো মিটার ফ্রিস্টাইলে চ্যাম্পিয়নশিপ রেকর্ড গড়ে। বুদাপেস্টেও টুর্নামেন্টের প্রথম দিনই ৫০ মিটার বাটারফ্লাই ইভেন্টে জাতীয় রেকর্ড গড়েছিলেন কেলব। পরে সে দিনই ১০০ মিটার ফ্রি স্টাইল ইভেন্টেও জাতীয় রেকর্ড গড়েন তিনি।
আরও পড়ুন:চিনে নেমারকে নিয়ে উন্মাদনা, দল বদলাতে পারেন আজই
কেলবের বুদাপেস্টের পারফরম্যান্স হইচই ফেলে দিয়েছে বিশ্ব সাঁতারে। বুদাপেস্ট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের আগে তাঁর নামই কেউ ভাল করে জানত না। তাঁকেই এখন বলা হচ্ছে ফেল্পস আর রায়ান লখটের পরে বিশ্ব সাঁতারে নতুন মার্কিন বিস্ময়। সুইডেনের স্প্রিন্ট রানি সারা সসট্রম তো বলেই দিলেন, ‘‘সত্যি বলছি আমি জানতাম না গত বছর রিও অলিম্পিক্সে কেলব নেমেছিল কি না। কোনও সন্দেহ নেই এ বছর ও বিরাট লাফ দিয়েছে।’’ যুক্তরাষ্ট্রের অলিম্পিক্স ব্যাকস্ট্রোক চ্যাম্পিয়ন রায়ান মার্ফি বলেছেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রের পুরুষ সাঁতারুদের বিশ্বমিটে সেরা পাঁচ পারফরম্যান্সের মধ্যে সম্ভবত এটাও থাকবে। বাকি চারটে মাইকেল ফেল্পস আর রায়ান লখটের। আশা করছি এটা সবে শুরু এ রকম আরও নজির ওর কেরিয়ারে দেখব।’’
আর নায়ক নিজে কী বলছেন?
টুইটারে ভক্তদের ধন্যাবাদ দিয়ে কেলব সোমবার লিখেছেন, ‘‘এত সমর্থনের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। বুদাপেস্টে দারুণ কাটল।’’ তবে রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে ওঠার পরে কেলবের ইঙ্গিত এটা সবে শুরু। ‘‘ভীষণ ক্লান্ত লাগছে এখন। খুব ভাল একটা টুর্নামেন্ট গেল। বছরটাও ভাল কেটেছে। গত সাত দিন যে রকম গিয়েছে দারুণ লাগছে। তবে এই সাত দিন মানুষ যে পারফরম্যান্স দেখেছে আমার, এ রকম আরও সাফল্য আসবে আশা করছি। তাই সব মিলিয়ে আমি খুব খুশি।’’ তিনি যে কী কাণ্ড করে ফেলেছেন তার গুরুত্ব বুঝতে পারছেন? কেলব বলেছেন, ‘‘জানি না কতদিনে ব্যাপারটা হজম করতে পারব। এটাই এই প্রশ্নের সবচেয়ে ভাল উত্তর।’’
কেলবের এই পারফরম্যান্সের জোরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে শেষ করল ৩৮টি পদক নিয়ে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রিটেনের চেয়ে প্রায় পাঁচগুন পদক বেশি জিতে। ব্রিটেন জিতেছে সাতটি পদক।
তবে, মাইকেল ফেল্পসের সঙ্গে তাঁর তুলনা হতে শুরু করে দিলেও বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা সাঁতারুর ধারেকাছে যেতে হলে কেলবকে এখনও যে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে সেটা নিশ্চিত। তবে এটা ঠিক বুদাপেস্টে কিংবদন্তি সতীর্থের কৃতিত্ব ছোঁয়ার দিকে বেশ বড় পদক্ষেপে এগিয়ে গেলেন ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের কুড়ি বছর বয়সি ছাত্র।