অনুমতি নিয়ে এক মাস আগেই ওয়েস্ট ইন্ডিজে মায়াঙ্ক

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ভারতের প্রথম টেস্ট ২২ অগস্ট থেকে। কিন্তু কেমার রোচ, শ্যানন গ্যাব্রিয়েল, ওশেন থমাসদের দেশের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি তিনি শুরু করে দিচ্ছেন এক মাস আগে থেকেই।

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৯ ০৪:০২
Share:

মরিয়া: ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেই প্রথম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি চান মায়াঙ্ক। ফাইল চিত্র

অনেক লড়াই করে অস্ট্রেলীয় সফরে ভারতীয় টেস্ট দলে সুযোগ পেয়েছিলেন মায়াঙ্ক আগরওয়াল। অভিষেকেই বক্সিং ডে টেস্টে প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্কদের বিরুদ্ধে তাঁর ৭৬ রানের ইনিংস দলের ওপেনিং-বিভ্রাট দূর করতে সাহায্য করেছিল। সিডনিতে জীবনের দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নেমে ৭৭ রান করার পরে দলে স্থায়ী জায়গা করে নেন কর্নাটকের এই ওপেনার। আসন্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তাই ছোটবেলার বন্ধু কে এল রাহুলের পাশে তাঁকেই ওপেন করতে দেখা যাবে।

Advertisement

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ভারতের প্রথম টেস্ট ২২ অগস্ট থেকে। কিন্তু কেমার রোচ, শ্যানন গ্যাব্রিয়েল, ওশেন থমাসদের দেশের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি তিনি শুরু করে দিচ্ছেন এক মাস আগে থেকেই। ভারতীয় নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান এম এস কে প্রসাদকে বিশেষ অনুরোধ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’র বিরুদ্ধে চলতি বেসরকারি টেস্ট সিরিজে খেলার অনুমতি চান মায়াঙ্ক। তাই শুক্রবারই দ্বীপরাষ্ট্রে রওনা দিচ্ছেন কর্নাটক ব্যাটসম্যান।

বৃহস্পতিবার আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকারে মায়াঙ্ক বলেন, ‘‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোনও পিচে বল বেশি বাউন্স করে। কোনও উইকেটে স্পিনারেরা সাহায্য পায়। এ ধরনের ব্যতিক্রমী পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে বিশেষ প্রস্তুতি নিতেই হবে। তাই নিজেই প্রসাদ স্যরকে অনুরোধ করি, ভারতীয় ‘এ’ দলের হয়ে খেলতে দেওয়ার জন্য।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘যত ম্যাচ পাব, ততই পরিস্থিতির সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারব। বর্তমান ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের পেস ব্যাটারি বিশ্বের অন্যতম সেরা। তাদের বিরুদ্ধে নিজের সেরাটা দেওয়ার জন্য বাড়তি পরিশ্রম করতেই হবে।’’

Advertisement

বিশ্বকাপ থেকে ফিরে আসার পরে বেঙ্গালুরুতে নিয়মিত দু’বেলা অনুশীলন করতেন মায়াঙ্ক। বাউন্স ও সুইংয়ের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য কংক্রিটের উপরে প্লাস্টিকের বলে ব্যাট করে নিজেকে তৈরি করেছেন। সঙ্গে টেনিস বল ভিজিয়েও ব্যাট করে গিয়েছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এ ধরনের প্রস্তুতির কার্যকারিতা কী? মায়াঙ্ক বলেন, ‘‘প্লাস্টিকের বল এমনিতেই সুইং করে। শক্ত প্লাস্টিক বলে সুইংয়ের সঙ্গে বাউন্সও পাওয়া যায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজে এ ধরনের বাউন্স ও সুইং আশা করছি। কারণ ডিউকস বল এমনিতেই সুইং বেশি করে। উইকেটে বাউন্স থাকলে এ ধরনের ডেলিভারি আমাকে চ্যালেঞ্জ করবেই।’’

ছোটবেলার বন্ধু কে এল রাহুলের সঙ্গে অনূর্ধ্ব-১৩ থেকে খেলে আসছেন। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে একসঙ্গে ওপেন করেছেন। এমনকি রঞ্জি ট্রফির অভিষেক ম্যাচেই তাঁর ওপেনিং পার্টনার ছিলেন রাহুল। এ বার টেস্টে একসঙ্গে ওপেন করার জন্য মুখিয়ে রয়েছেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৩৯৬৪ রান করা ব্যাটসম্যান। বলছিলেন, ‘‘বন্ধুর সঙ্গে ওপেন করার বাড়তি সুবিধা তো অবশ্যই পাব। একই রাজ্যের হয়ে রঞ্জি ট্রফি খেলেছি। দীর্ঘদিন একসঙ্গে ওপেন করেছি। কর্নাটককে অনেক ম্যাচ জিতিয়েছি। ‘রানিং বিটউইন দ্য উইকেটস’-ও আমাদের সাবলীল। অনেক সময় চোখের ইশারাতেই কঠিন রান সম্পূর্ণ করে ফেলা যায়। আমরা সেটা নিয়মিত করতাম। এ বার ভারতের হয়ে একই ছন্দে খেলে যেতে হবে।’’

তাঁকে স্থায়ী ওপেনার হিসেবে দেখা হলেও বর্তমান ভারতীয় দল পারফরম্যান্সে বিশ্বাসী। ব্যর্থ হলেই দরজা বন্ধ হয়ে যেতে পারে যে কোনও ক্রিকেটারের। মায়াঙ্ক এই পরিস্থিতিকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখেন। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতিযোগিতা না থাকলে প্রত্যেক ম্যাচে পারফর্ম করার তাগিদ কমে যেতে পারে। সেটা দলের জন্য ক্ষতিকারক। রান করার মানসিকতা নিয়ে না নামলে দল জিতবে কী করে? ভারত ‘এ’-র হয়ে যারা খেলছে, তারাও নিয়মিত রান করে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সুযোগ পাওয়ার অপেক্ষায়। পারফর্ম করলে সুযোগ তো দিতেই হবে।’’

মায়াঙ্কও জাতীয় স্তরে নিজেকে যথেষ্ট প্রমাণ করেই ভারতীয় দলে এসেছেন। ২০১৭-১৮ মরসুমে ২৭ দিনের মধ্যে এক হাজারের ওপর রান করেছিলেন। তার পরেই সুযোগ পান অস্ট্রেলিয়া সফরে। এ বার সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ। গ্যাব্রিয়েল, রোচদের মধ্যে কাকে সব চেয়ে ভয়ঙ্কর হিসেবে দেখছেন? ‘‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যে কোনও দলই কঠিন। আগের দিনই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ৮৫ রানে অলআউট করে চমকে দিয়েছে আয়ারল্যান্ড। তেমনই ওয়েস্ট ইন্ডিজের যে কোনও বোলারের বিরুদ্ধেই সতর্ক থাকতে হবে। নিজেদের দিনে ওরা কী করতে পারে তা বিশ্বকাপেই দেখিয়ে দিয়েছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে ভাবে ওশেন থমাস, শেল্ডন কটরেল, আন্দ্রে রাসেলরা বিপক্ষ শিবিরকে বাউন্সার-বৃষ্টিতে শেষ করে দিয়েছিল তা অনবদ্য। যে কোনও দিন, যে কোনও পরিবেশে, যে কোনও উইকেটে ওদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতেই হবে।’’

অস্ট্রেলিয়ায় ৭০-এর ঘরে আটকে গিয়েছেন দু’বার। প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির স্বপ্ন কি বিদেশের মাটিতেই দেখছেন? মায়াঙ্ক শেষে বললেন, ‘‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেই দেখছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement