আসল ও নতুন। এক ফ্রেমে দুই ‘নেইমার’
রিও অলিম্পিক্সে ব্রাজিল ভক্তদের চোখ দুই নেইমারে। প্রথম জন বার্সেলোনার। দ্বিতীয় জন তাঁরই প্রাক্তন ক্লাব সান্তোসের। গাবিগল। দু’জনই বিতর্ক কাটিয়ে এখন দেশকে অলিম্পিক্সে সোনা জেতাতে নেমে পড়েছেন।
কোচ রোজারিও মিকালেওই সেটা ফাঁস করেন। শনিবার জাপানের বিরুদ্ধে ফ্রেন্ডলি ম্যাচে নেইমারই অধিনায়কত্ব করবেন সেটা ঘোষণা করার পর ব্রাজিলের অলিম্পিক্স কোচ বলেন, ‘‘নেইমারের সঙ্গে আমার এক বার কথা বলে মনে হয়েছে এই টিমে ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব নেওয়ার দিক থেকে ওই সেরা। নেইমার আমার প্রত্যাশা ছাপিয়ে গিয়েছে। এ রকম বড় মনের প্লেয়ার, যে সব সময় টিমের সবাইকে সাহায্য করতে রাজি, তাকে তো সবাই পছন্দ করবেই। তাই ওই আমার ক্যাপ্টেন।’’
ঘোষণা আগেই হয়ে গিয়েছিল। তিনিই রিও অলিম্পিক্সে ব্রাজিলের ক্যাপ্টেন্সির আর্মব্যান্ড হাতে নামবেন। তবু বিতর্ক তুলছিলেন প্রাক্তন ব্রাজিল ফুটবলাররা তাঁকে ক্যাপ্টেন করা নিয়ে। গত বছর কোপা আমেরিকায় তিনি ক্যাপ্টেন হয়ে কোন সাফল্যটা পেয়েছেন? প্রশ্ন উঠেছিল। বিতর্কের সেই আগুনে নিজেই জল ঢেলে দেন নেইমার। কোচকে এটা বুঝিয়ে যে দলের জন্য তিনিই সেরা অধিনায়ক। তাঁর নেতৃত্বেই অলিম্পিক্সে জ্বলে উঠবে সেলেকাও হলুদ জার্সি।
অলিম্পিক্সে সোনা জিতে বিশ্বকাপের ব্যর্থতা কিছুটা হলেও ভুলতে তৈরি নেইমার ব্রিগেডও। যে যুদ্ধে ব্রাজিল অলিম্পিক্স টিমের সবচেয়ে ব়ড় অস্ত্র আগুনে ফরোয়ার্ড লাইন। ব্রাজিলের মিডিয়া জানাচ্ছে, নেইমার-সহ বাকি দুই ফরোয়ার্ড গাব্রিয়েল জেসাস ও গাবিগল (যাঁকে ব্রাজিলের নতুন নেইমার বলা হচ্ছে) তিন ফরোয়ার্ডের মূল্য নাকি ১৫২ মিলিয়ন ইউরো। গাব্রিয়েল আসন্ন মরসুমে ম্যাঞ্চেস্টার সিটিতে যাচ্ছেন ৩২ মিলিয়ন ইউরোয় আর গাবিগলের কাছে ২০ মিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাব রয়েছে জুভেন্তাসে যাওয়ার।
ব্রাজিলের ফরোয়ার্ড লাইনের সামনে চ্যালেঞ্জটা অবশ্য সোজা নয়। সেটা মাথায় রেখেই ‘নতুন নেইমার’ পাল্টা হুঙ্কার দিতেও ছাড়ছেন না। ‘‘আমরা সব শুনছি। সবাইকে সম্মান দিয়েই বলছি আমরা অলিম্পিক্সে এটা দেখিয়ে দিতে চাই যে বিশ্বের সেরা ফুটবল আর সেরা ফুটবলারদের পাওয়া যায় শুধু ব্রাজিলেই।’’
অবশ্য রিও অলিম্পিক্সের চ্যালেঞ্জ যত এগিয়ে আসছে ব্রাজিল ভক্তদের ভরসাও বোধহয় সেলেকাও ক্যাপ্টেনের উপর জোরালো হচ্ছে। শুক্রবারই যেমন এক ভক্ত ব্রাজিলের টিম হোটেলে লুকিয়ে ছিলেন নেইমারের সঙ্গে দেখা করতে। পুলিশ খবর পেয়ে তাঁকে গ্রেফতার করে পরে সতর্ক করে ছেড়ে দেয়।
গত বছর কোপা আমেরিকাতে কোয়ার্টার ফাইনালে হারের পিছনে অনেকে নেইমারকে দায়ী করেছিলেন। শেষ গ্রুপ ম্যাচে কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে সে বার মাথা গরম করে লালকার্ড না দেখলে প্যারাগুয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচে তিনি ব্রাজিলকে বাঁচানোর একটা সুযোগ পেতেন। ক্যাপ্টেন এ রকম হঠকারী সিদ্ধান্ত কেন নেবেন সেই প্রশ্নও উঠেছিল। অনেক প্রাক্তন ব্রাজিল ফুটবলারই তাই নেইমারকে অলিম্পিক্সে অধিনায়ক করার বিরোধী ছিলেন। তাই দুঙ্গার পর দায়িত্বে আসা ব্রাজিল কোচ তিতে নেইমারকে অধিনায়ক করা নিয়ে আগাম কোনও মন্তব্য করতে চাননি। ব্রাজিলের অলিম্পিক্সের জন্য দায়িত্বে থাকা কোচ মিকালেও কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারছিলেন না।
শেষ পর্যন্ত নেইমার তাঁকে ভরসা জোগানোর পর এ বার তাঁর নেতৃত্বে হলুদ জার্সির ঝড় রিওতে সোনার দৌড়ে উঠে আসে কি না সেটাই দেখার।