ব্রাজিল মানেই চমক!
ব্রাজিল মানেই অভিনবত্ব।
অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে আসা ব্রাজিল দলের সাপোর্ট স্টাফের সংখ্যা চোদ্দো!
শনিবার প্রথম ম্যাচে স্পেনকে হারিয়ে সাম্বা ও ফাঙ্ক ড্যান্সে কোচির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়াম মাতিয়েছিল পাওলো হেনরিক সাম্পাইও ফিলফো (পাওলিনহো) ও লিঙ্কন ডস স্যান্টোস। টিম হোটেলেও গভীর রাত পর্যন্ত চলেছিল উৎসব। আর রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় পানামপিল্লাই নগরের মাঠে ব্রাজিল চমকে দিল অভিনব অনুশীলনে।
কী রকম?
স্পেনের বিরুদ্ধে প্রথম একাদশে খেলা ফুটবলারদের ব্রাজিল কোচ কার্লোস আমাদেউ-ও এ দিন অনুশীলন করাননি। পাওলিনহো-দের বিশেষ ক্লাস নিলেন ফিটনেস কোচ রদরিগো সার।
রিজার্ভ বেঞ্চের ফুটবলাররা যেখানে প্র্যাকটিস করছিল, তার ঠিক উল্টো দিকে রদরিগো নিয়ে যান লিঙ্কন-দের। দু’জন করে ফুটবলার মুখোমুখি দাঁড়াল। এক জন ডান হাতের তর্জনী ধীরে ধীরে অন্য ফুটবলারের মুখের সামনে ঘোরাতে শুরু করল। প্রথমে ঘড়ির কাঁটা যে দিকে ঘোরে, সে ভাবে। তার পরে উল্টো দিকে।
এই অনুশীলনের বিশেষত্ব কী? জানা গিয়েছে, লক্ষ্যে স্থির থাকা এবং মনঃসংযোগ বাড়ানোর জন্যই ম্যাচের পরের দিন এই ধরনের অনুশীলন করানো হয় ব্রাজিল ফুটবলারদের।
আরও পড়ুন: ফিরছে বরিস, কলম্বিয়াকে সমীহ করেই নামছে ভারত
মিনিট দশেক এই অনুশীলন চলার পরেই আসল চমক।
এ বার পাঁচ জন করে ফুটবলারকে নিয়ে একটা দল গড়লেন ব্রাজিলের ফিটনেস কোচ। যার পায়ে বল রয়েছে, তার ঠিক চোখের সামনে পেন্সিল বক্সের আকারে কালো রঙের একটি বোর্ড এমন ভাবে ধরে রেখেছে উল্টো দিকে দাঁড়ানো ফুটবলারটি, সামনে কিছুই দেখা যাবে না। একটু দূরে কোণাকুণি দাঁড়িয়ে আরও দুই ফুটবলার। এ ছাড়া আরও একজন ফুটবলার থাকবে বল যার পায়ে আছে, তার ঠিক পাশে। যাকে ঘাড় না ঘুরিয়েও চোখের কোণ দিয়ে দেখা যাবে। পাশে দাঁড়ানো সেই ফুটবলারটি যখন হাত তুলবে, তখন উল্টো দিকে কোণাকুনি দাঁড়ানো সতীর্থকে বল দিতে হবে।
ফুটবল শিখতে ভর্তি হওয়া ছাত্রদের প্রথম দিনই কোচরা বলেন, বল নিয়ে দৌড়নোর সময় বিপক্ষের ফুটবলারদের জন্য সামনেটা আড়াল হয়ে যায়। তখন দলের অন্য কাউকে পাস দেবে। তাই দু’দিকে সতীর্থ কারা আছে সব সময় দেখতে হবে। এ দিন লিঙ্কন-রা সেই অনুশীলনই করলেন। তবে দলটা যে হেতু ব্রাজিল, তাই পুরোটাই অভিনবত্বে ভরা।
কী অভিনবত্ব?
বাঁ দিকে দাঁড়ানো ফুটবলার হাত তুলেলেও বল দিতে হবে ডানদিকের থাকা সতীর্থকে! অর্থাৎ, ম্যাচে বাঁ প্রান্ত থেকে উঠে আসা কোনও ফুটবলার হাত তুললে প্রতিপক্ষ ধরেই নেবে বলটা তাকেই দেওয়া হবে। আসলে কিন্তু পাস দেওয়া হবে ডানদিকের প্রান্ত থেকে উঠে আসা ফুটবলারকে। সোজা কথায় বিপক্ষের ফুটবলারদের বিভ্রান্ত করে দেওয়া। অনেকটা ক্রিকেটের রিভার্স সুইং বা গুগলির মতো!
ব্রাজিলীয় ফুটবলে এই স্ট্র্যাটেজি যদিও নতুন নয়। পেলে, গ্যারিঞ্চা, ডিডি, ভাবা, জাগালো থেকে রোনাল্ডো, রোনাল্ডিনহো ও রিভাল্ডো— এই অস্ত্রেই বিপক্ষের ফুটবলারদের বারবার বিভ্রান্ত করেছেন। এখন করেন নেমার দ্য সিলভা স্যান্টোস (জুনিয়র), গ্যাব্রিয়েল জেসাস-রা। সেই ঘরানাতেই ভবিষ্যতের তারকাদের তৈরি করছেন ব্রাজিল কোচ।
এই স্ট্র্যাটেজির সাফল্য যে পুরোটাই বোঝাপড়ার ওপর নির্ভর করছে, অনুশীলনের পর খোলাখুলি জানাল মার্কোস আন্তোনিও। স্পেনের বিরুদ্ধে তার পাস থেকেই গোল করেছিল পাওলিনহো। ব্রাজিল মিডফিল্ডারের কথায়, ‘‘আমাদের দলের প্রধান শক্তি নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া। গত দু’বছর ধরে আমরা একসঙ্গে খেলছি। তাই জানি মাঠে নেমে কী করতে হয়।’’
স্পেনের বিরুদ্ধে আন্তোনিও নিজেই গোল করতে পারত। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সতীর্থ পাওলিনহো-কে পাস দেয়।