সোনার পদক গলায় নেইমাররা।
ফাইনালে ওঠার পর ব্রাজিলীয় ডিফেন্ডার ডগলাস স্যান্টোস জানিয়েছিলেন, জার্মানির বিরুদ্ধে ফাইনালটাকে তাঁরা বদলার ম্যাচ হিসাবে দেখছেন না। দেখছেন ঈশ্বরের দেওয়া দ্বিতীয় সুযোগ হিসাবে।ফুটবল ঈশ্বর যে তাঁর অন্যতম প্রিয় সন্তানদের দেশকে দ্বিতীয়বার বঞ্চিত করতে চাননি, তার প্রমাণ পেল শনিবার রাতের মারাকানা। স্বয়ং ঈশ্বরই যেন রক্ষা করছিলেন সেলেকাওদের গোলপোস্ট। কখনও ক্রস পিস তো কখনও বার হয়ে রুখে দিচ্ছিলেন মুহুর্মুহু জার্মান আক্রমণ।যার শেষটা হল নেইমার ডি স্যান্টোসের পা থেকে। ওয়ান্ডার কিডের শট জার্মান গোলে আছড়ে পড়তেই ৭৮ হাজারের মারাকানা গর্জে উঠল, চ্যাম্পিয়ন। যেন শাপমুক্ত হল ব্রাজিল।
মুখে স্বীকার না করলেও উৎসবের আতিশয্যই কিন্তু বলে দিচ্ছিল, বদলা নিতেই চেয়েছিল ব্রাজিল। যদিও বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল আর অলিম্পিক্সের কৌলিন্য এক নয়। ধারে ভারে অনেকটাই এগিয়ে বিশ্বকাপ। তবু এ দিন ব্রাজিলীয় সমর্থকরা মারাকানা ভরিয়েছিল প্রিয় দলের জয় দেখতে। অলিম্পিক্সের নিয়ম অনুযায়ী, দলে ২৩ বছরের নীচের ফুটবলার থাকতে হবে অন্তত ৮ জন। সেই নিয়মে অভিশপ্ত ৮ জুলাইয়ের প্রায় কেউই ছিল না এ দিন। কিন্তু ছিলেন সমর্থকরা। দুই ম্যাচেই মাঠে থাকা এক দর্শক বলেই ফেললেন, “৭ গোলের বদলা নেওয়া হয়ত সম্ভব নয়, কিন্তু আজকের জয় কিছুটা মলমের কাজ করবে।”
জয়ের গোলের পর উচ্ছ্বাস সেলেকাওদের।
মারাকানায় এ দিন কিন্তু দাপট বেশি ছিল জার্মানিরই। প্রথমার্ধের ১১ মিনিটে ব্র্যান্ডেটের শট ক্রসবারে লাগা থেকে শুরু। এর পর বহু সুযোগ হারিয়েছে জার্মানি। কখনও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পোস্ট তো কখনও গোলকিপার। মাঝে মধ্যে পাল্টা আক্রমণ করছিল ব্রাজিলও। তেমনই এক আক্রমণ রুখতে গিয়ে নেইমারকে ফাউল করেন জিন্টার। বক্সের প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে জীবনের সেরা ফ্রি কিক নেন নেইমার। প্রথমার্ধে এক গোলে এগিয়েই মাঠ ছাড়ে ব্রাজিল। দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের ধার আরও বাড়ায় জার্মানি। ৫৯ মিনিটে ম্যাক্স মেয়ারের গোলে সমতা ফেরায় তারা। অতিরিক্ত সময় পর্যন্ত আর কোনও গোল হয়নি। এমনকী টাইব্রেকারেও প্রথম চারটি শটেই গোল করে দু’পক্ষ। নিলস পিটারসেনের পঞ্চম শট আটকে যাওয়ার পর শট নিতে আসেন নেইমার। তাঁর শট জালে জড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইতিহাস।
একই সঙ্গে আজ তিনটি অভিশাপ থেকে মুক্ত হল ব্রাজিল। জার্মানির বিরুদ্ধে বছর দু’য়েক আগের সেই ম্যাচের বদলা নেওয়ার পাশাপাশি অভিশপ্ত মারাকানায় রেকর্ডটা একটু ভাল করল ব্রাজিল। ১৯৫০ সালে বিশ্বকাপ ফাইনালে উরুগুয়ের কাছে অবাক হারের পর এই মাঠে প্রথম বড় কোনও টুর্নামেন্ট জিতল তারা। পাশাপাশি অলিম্পিকের ইতিহাসে প্রথম বার সোনা জিতল নেইমাররা।