ডানকান ফ্লেচার, জো ডস ও ট্রেভর পেনি। এই ত্রয়ীকে কি আর দেখা যাবে ভারতীয় নেটে?
বছর সাতেক আগে পর্যন্ত এটা তাঁরই সাম্রাজ্য ছিল। ইংরেজ টিমটার তিনি-ই সে সময় ছিলেন অভিভাবক। বর্তমানে তাঁর অবস্থা যতই শোচনীয় হোক, কোনও কোনও প্রাক্তন ইংরেজ ক্রিকেটারের গলা থেকে আজও তাঁর টেকনিক-জ্ঞান নিয়ে মুগ্ধতা ঝরে পড়ে।
অথচ পুরনো ছাত্রদের সামনে আজ কী অবস্থাই না ডানকান ফ্লেচারের! তাঁর পুরনো সংসার আর নতুনের মধ্যে ফারাকটাও বেশ চোখে লাগে।
ডানকান ফ্লেচারের নতুন সংসার বিদেশে বিধ্বস্ত হয়ে নতুন টিম ডিরেক্টরের হাত ধরে মযার্দা-রক্ষায় উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। চেষ্টা করছে, টেস্ট সিরিজের মতো অ্যালিস্টার কুকদের ওয়ান ডে-তেও ‘বুলডোজার’ চালানোটা আটকে দিতে।
ডানকান ফ্লেচারের পুরনো সংসার উত্তেজিত। তারা বারো বছর আগে কোনও এক কেভিন পিটারসেনের অভিষেকের প্রেক্ষাপট খুঁজে পাচ্ছে! ইনিও কেপি-র মতোই লম্বা চওড়া। কিং পিটারের মতো ইনিও বিখ্যাত মারকুটে ব্যাটিংয়ের জন্য। ইনি নাকি ইংরেজ ক্রিকেটের ‘নেক্সট বিগ থিং।’ ইনি— অ্যালেক্স হেলস।
সোমবার লর্ডসে যে জনা কয়েক ভারতীয় ক্রিকেটারকে প্র্যাকটিসে নামতে দেখা গেল, তাঁদের সঙ্গে ডানকান ফ্লেচার ছিলেন। হিসেব মতো তাঁর বর্তমানে একটু বিচলিত থাকা উচিত। রবি শাস্ত্রীকে তাঁর মাথার উপর বোর্ড ওয়ান ডে সিরিজের জন্য বসিয়ে দিয়েছে। ধোনির টিমের ডিরেক্টর এখন শাস্ত্রী। শোনা গেল, এ দিনও ভারত অধিনায়কের সঙ্গে আবারও ক্লোজ ডোর মিটিং করেছেন নতুন টিম ডিরেক্টর। তার উপর ফ্লেচারের দুই বিশ্বস্ত যোদ্ধা। জো ডস আর ট্রেভর পেনিকে সরকারি ভাবে ঘোষণা না করা হলেও ঠারেঠোরে বোঝানো হয়েছে, তোমাদের বিদায় আসন্ন। আপাতত বিশ্রামে, বোর্ড সচিব সঞ্জয় পটেল শুধু শেষে জুড়ে দিয়েছেন, “চাইলে ভারতে ফিরে আসতে পারে ওরা। আমাদের কোনও অসুবিধে নেই।” কিন্তু অর্ন্তনিহিত বার্তাটা বুঝতে অসুবিধে হয় না। এই পরিস্থিতিতে তো ফ্লেচারকে বিচলিত দেখানো উচিত। পেনি-ডসকেও দেখানো উচিত।
কিন্তু দেখাচ্ছে না।
পেনি-ডসকে ‘বিশ্রামে’ পাঠিয়ে যাঁদের আনা হচ্ছে ওয়ান ডে সিরিজের জন্য, সেই সঞ্জয় বাঙ্গার, ভরত অরুণ বা আর শ্রীধর— কেউ এখন ইংল্যান্ডে পৌঁছোননি। আর পেনি-ডসদের যা হাবভাব এ দিন দেখা গেল লর্ডসে, তাতে বাঙ্গাররা না এসে পড়লে তাঁরা ‘বিশ্রামে’ যাচ্ছেনও না। পেনি যেমন রায়নাদের স্লিপ ফিল্ডিং প্র্যাকটিস করিয়ে গেলেন সমানে, ডসও সমানে নেটে দাঁড়িয়ে বোলারদের বোলিং দেখালেন। কয়েক জন ব্যাটসম্যানকে থ্রো-ডাউনও দিলেন।
দু’জনের মধ্যে ডস যেন আবার একটু বেশি ব্যস্ত। দেখে কে বলবে, সম্ভবত এটাই তাঁদের ভারতীয় দলের সঙ্গে শেষ অনুশীলন পর্ব? আর ফ্লেচার? আর পাঁচ দিন যেমন হয়, তেমনই। শুক্রবার থেকে মিডলসেক্সের বিরুদ্ধে প্র্যাকটিস ম্যাচে নামছে ভারত। টিমের অধিকাংশ ক্রিকেটারই প্র্যাকটিসে আসেননি। ধোনিও না। শুধু সঞ্জু স্যামসনকে দেখা গেল, দীর্ঘ সময় ধরে নেটে পড়ে থাকতে।
গাজায় আক্রান্তদের জন্য অর্থসংগ্রহে লন্ডনে আয়োজিত চ্যারিটি ডিনারে ধোনি, ওয়াসিম আক্রম,
সাকলিন মুস্তাক, মহম্মদ ইউসুফ, আব্দুর রজ্জাক ও আজহার মেহমুদ। ছবি: টুইটার
ও দিকে, ইংল্যান্ড আবার প্রস্তুত হচ্ছে হেলসকে ভারতীয় বোলিংয়ের উপর সোমবার ব্রিস্টল ওয়ান ডে থেকে ভারতীয় বোলিংয়ের উপর ছেড়ে দিয়ে বিশ্বকাপের প্রস্তুতিটা শুরু দিতে! নটিংহ্যামশায়ারের হেলস ৩২-টা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন দেশের হয়ে, কিন্তু দেশের ওয়ান ডে জার্সিতে এই প্রথম। এবং নামার আগেই পিটারসেনের অভিষেকের সঙ্গে তুলনা! যা নিয়ে বেশ বিব্রতই হেলস। বলছেন, “কেভিন পিটারসেনের সঙ্গে এক নিঃশ্বাসে আমার নাম উচ্চারণ হওয়া একটু বাড়াবাড়ি রকমের প্রশংসা। কেভিনের মতো ব্যাটসম্যান হতে গেলে আমাকে এখনও অনেক খাটাখাটনি করতে হবে, অনেক রান করতে হবে। ও আর মার্কাস ট্রেসকথিক আমার ছোটবেলার দুই নায়ক ছিল। যাদের দেখে আমি ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম,” বলে দিয়েছেন হেলস। কিন্তু তাঁর কাউন্টি কোচ থেকে সতীর্থ— সবাই বলতে শুরু করেছেন পিটারসেনের চেয়েও হেলস অনেক বেশি কপিবুক ব্যাটসম্যান, ওঁর কাট-ড্রাইভ দেখলেই সেটা বোঝা যায়। আর ব্যাট হাতে মাঠে উত্তেজনাটা তিনি কেপি-র মতোই ছড়ান।
কিন্তু মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজে কতটা উত্তেজনা ছড়াবেন?
হেলসের সংক্ষিপ্ত জবাব, “আশা করছি যা চাওয়া হচ্ছে আমার থেকে, আমি সেটা দিতে পারব। জানি ভারতের বিরুদ্ধে ওয়ান ডে-তে ভাল কিছু করতে পারলে বিশ্বকাপে খেলার সুযোগটাও বেড়ে যাবে। আমি আত্মবিশ্বাসী। মাঠে নেমে যা করার করব।”
বিস্ফোরণের প্রেক্ষাপট কিন্তু আগাম তৈরি করে রাখলেন ব্রিটিশ মিডিয়া-বর্ণিত ‘নতুন কেপি!’