প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর স্ত্রী জেনির সঙ্গে সাক্ষাৎ বিরাট কোহালি ও অনুষ্কার। পিটিআই
অস্ট্রেলীয় অধিনায়কদের সর্বকালের সেরাদের তালিকা হলে নিশ্চয়ই তাঁর নাম তাতে থাকবে না। কিন্তু সেরা বক্তার পুরস্কার থাকলে তিনি জিতে নিতে পারেন। নতুন বছরের প্রথম দিন প্রধানমন্ত্রীর চায়ের আসরেও তার কোনও ব্যতিক্রম হল না।
বিরাট কোহালির দলের বিরুদ্ধে মাঠের লড়াইয়ে পিছিয়ে থেকেও তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন পেন। যা সকলের মন জয় করে নিল। দেশের প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দাঁড়িয়ে বিরাট এবং তাঁর দলকে উদ্দেশ্য করে পেন বললেন, ‘‘যে রকম স্পিরিট নিয়ে এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতার সঙ্গে তোমরা এই সিরিজে খেলছ, তা অস্ট্রেলিয়ার মানুষকে ফের ক্রিকেট মাঠে টেনে এনেছে। তাঁদের ক্রিকেট প্রেম ফিরিয়ে এনেছে।’’
দক্ষিণ আফ্রিকায় বল-বিকৃতি কেলেঙ্কারিকে কেন্দ্র করে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে ঝড় বয়ে গিয়েছে। সিরিশ কাগজ দিয়ে বল ঘষার ছবি সারা পৃথিবীর মানুষ দেখে ফেলার পরে লজ্জায় প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকেই বিশেষ নির্দেশ গিয়েছিল, দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দাও।
শোনা যায়, প্রধানমন্ত্রীর দফতরই চায়নি, স্টিভ স্মিথ আর ক্যাপ্টেন থাকুন। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের সেই কঠিন সময়ের দিকে ইঙ্গিত করেই পেন প্রতিপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে গেলেন। আরও বললেন, ‘‘গত এক মাসের উপর অস্ট্রেলিয়ায় আসার পর থেকে যে উচ্চ মানের ক্রিকেট তোমরা খেলেছ, তা আমাদেরও সাহায্য করেছে নিজেদের দেশের ক্রিকেট অনুরাগীদের মন জয় করতে। তোমাদের তাই ধন্যবাদ দিতে চাই।’’
অস্ট্রেলীয় অধিনায়কের বক্তব্য শোনার পরে উপস্থিত সকলে হাততালি দিয়ে ওঠেন। চলতি সিরিজে মাঠের মধ্যে ভারতীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে বাগ্যুদ্ধে সব চেয়ে বেশি জড়িয়েছেন টিম পেন। পার্থে তাঁর সঙ্গে লেগেছিল বিরাট কোহালির। দু’জনের প্রায় ধাক্কাধাক্কি হওয়ার উপক্রমও হয়েছিল। দুই অধিনায়কের কথার লড়াই স্টাম্প মাইক্রোফোনে ধরা পড়ে বিতর্কও তৈরি হয়েছিল। আম্পায়ারকে পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করতে হয়। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলে ওঠেন, ‘‘অনেক হয়েছে। এ বার কথাবার্তা থামাও। ভুলে যেও না তোমরা অধিনায়ক।’’
মেলবোর্নে কোহালি চুপচাপ ছিলেন। তিনি কোনও সংঘাতে জড়াননি। কিন্তু পেনের সঙ্গে সমানে স্লেজিং চলে ঋষভ পন্থের। ভারতীয় উইকেটকিপার ব্যাট করতে এলে অস্ট্রেলীয় উইকেটকিপার তাঁকে বলেন, ‘‘ধোনি তো টিমে এসে গিয়েছে, তুমি আমাদের হোবার্ট হ্যারিকেনসে চলে এসো। হোবার্ট দারুণ জায়গা। খুব ভাল জায়গায় তোমাকে ফ্ল্যাটেরও ব্যবস্থা করে দেওয়া যাবে।’’ এখানেই না থেমে তিনি বলে চলেন, ‘‘তুমি কি বেবিসিট করতে পারো? তা হলে তুমি এলে আমি স্ত্রীকে নিয়ে সিনেমায় যাব। তুমি আমার বাচ্চাদের রাখতে পারবে তো?’’ এর পর পেন ব্যাট করতে এলে কটাক্ষ ফিরিয়ে দেন পন্থ। বলতে থাকেন, ‘‘আমাদের এক জন স্পেশ্যাল গেস্ট এসেছে ক্রিজে। যে শুধু কথা বলতেই ভালবাসে, আর কিছু পারে না।’’ মায়াঙ্ক আগরওয়ালের দিকে তাকিয়ে ঋষভ বলতে থাকেন, ‘‘কখনও অস্থায়ী অধিনায়ক হিসেবে কিছু শুনেছিস মায়াঙ্ক। দেখে নে এখন। তোর চোখের সামনেই রয়েছে।’’
এ দিন প্রধানমন্ত্রীর চায়ের আসরে গিয়ে ‘বেবিসিটার’ অধ্যায়ের দ্বিতীয় এপিসোড যোগ হয়েছে। এ বার টিম পেনের স্ত্রী বোনি একটি ছবি পোস্ট করেছেন ইনস্টাগ্রামে। তাতে তিনি রয়েছেন ঋষভ পন্থের সঙ্গে। ঋষভের কোলে পেনের সন্তান। আর বোনি লিখছেন, ‘বেস্ট বেবিসিটার’। মুহূর্তে এই ছবি ভাইরাল হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। অনেকে বলতে থাকেন, দেখা যাচ্ছে, রসবোধ ব্যাপারটা পেন পরিবারেরই অঙ্গ। স্লেজিং হলেও তা যে ব্যক্তিগত আক্রমণের স্তরে পৌঁছয়নি, সেটাও প্রমাণ হয়ে গিয়েছে এই ছবিতে। ঋষভকে ছবিতে দেখা যাচ্ছে বেশ হাসিমুখেই বোনি পেনের সঙ্গে বাচ্চা কোলে দাঁড়িয়ে। অর্থাৎ, তিনিও আর মনে রাখেননি মাঠে কী ঘটেছে। নতুন বছরের প্রথম দিনে প্রধানমন্ত্রীর চায়ের আসরে অস্ট্রেলীয় অধিনায়কের বক্তব্যেও সেই সুর। মাঠের মধ্যের বিবাদ, প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভুলে প্রতিপক্ষকে টুপি খুলে কুর্নিশ জানাতে ভুললেন না তিনি।
পেন বলে যাওয়ার পরে অতিথি দলের অধিনায়কের ডাক পড়ল। পেন যেমন সস্ত্রীক এসেছিলেন, তেমন ভারত অধিনায়কও গিয়েছিলেন অনুষ্কাকে নিয়ে। কোহালি প্রথমেই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বললেন, ‘‘এখানে আসতে পারাটাই একটা বিরাট সম্মান।’’ তার পর ঢুকলেন ক্রিকেটে। ‘‘অস্ট্রেলিয়ায় এসে অস্ট্রেলিয়াকে খেলাটা ক্রিকেট বিশ্বের সব চেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ। শুধু যে অস্ট্রেলিয়া টিমের বিরুদ্ধেই আমরা খেলছি, তা নয়। ব্যাট করতে যখন মাঠে নামবে, তখন পুরো স্টেডিয়াম তোমাকে আউট করতে চাইছে।’’ উপস্থিত সকলে হেসে উঠলেন। ভারত অধিনায়ক বলে চললেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়ার খেলাধুলোর সংস্কৃতি বা ক্রিকেট সংস্কৃতি এ রকমই। হারতে চায় না কেউ। তাই আমি ছেলেদের বলেছি, এমন এক দেশে এসে প্রথম তিনটি টেস্টে তোমরা যে রকম ক্রিকেট খেলেছ, তাতে গর্বিত হওয়া যায়। আমার মনে হয়, স্কোরলাইন যা-ই বলুক দু’টো দলই গর্বিত হতে পারে দারুণ উপভোগ্য ক্রিকেট উপহার দেওয়ার জন্য।’’
কোনও সন্দেহ নেই যে, ২-১ থাকা অবস্থায় সিডনিতেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলবে। হয়তো ফের স্লেজিংও দেখা যাবে। তবে সংঘাতের মধ্যেও যে সৌজন্য হারায়নি দু’দল, নববর্ষের সিডনি প্রমাণ করে দিল।