দুই-মেরু: পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে হতাশ সেরিনা ও উচ্ছ্বসিত বিয়াঙ্কা। এএফপি
তীরে এসে তরী ডুবল। আপাতত অধরা মার্গারেট কোর্টের ২৪টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের অনন্য নজির। ফ্লাশিং মেডোজে যুক্তরাষ্ট্র ওপেন ফাইনালেও হেরে গেলেন ২৩ গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিক সেরিনা উইলিয়ামস। তাও ১৯ বছরের কানাডিয়ান মেয়ে বিয়াঙ্কা আন্দ্রেস্কুর কাছে। এই আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামেই ২০ বছর বয়সে জীবনের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছিলেন কিংবদন্তি মার্কিন মেয়ে। শনিবার সেখান থেকেই ফিরতে হল চূড়ান্ত হতাশা নিয়ে। হতাশা কন্যাসন্তানের জন্ম দেওয়ার পরে কোর্টে ফিরে বারবার গ্র্যান্ড স্ল্যামে ব্যর্থ হওয়ার। নিউ ইয়র্কে এই হার তাঁর কথায় ‘‘ক্ষমার অযোগ্য।’’
দৃশ্যত ভেঙে পড়া সেরিনা বলেছেন, ‘‘বিয়াঙ্কাকে ভালবাসি। ও দারুণ মেয়ে। তবে আজই এ বারের টুর্নামেন্টের সব চেয়ে খারাপ ম্যাচটা খেললাম। কেন এতটা খারাপ খেললাম, নিজেও বুঝলাম না।’’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘এমন নয় যে, বিয়াঙ্কা খারাপ খেলেছে। বরং উল্টোটা সত্যি। বিশেষ করে ওর রিটার্নের প্রশংসা করতে হবে। যেটা আমার সার্ভিসের উপরেও চাপ বাড়াচ্ছিল। কিন্তু আমিও নিজে যা খেললাম সেটা ভাবা যায় না। কোনও অজুহাতও দেওয়া যায় না।’’
ফাইনালে ৩৩টি উইনার মারলেও ঠিক একই সংখ্যায় নিজের ভুলে সেরিনা পয়েন্ট দিয়েছেন বিয়াঙ্কাকে। ন’টি ‘এস’ মারলেও ডাবল ফল্ট ১১টি। এবং তাঁর ৪৪ শতাংশ সার্ভিস মাত্র ঠিক জায়গায় পড়েছে। যা ২৩টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিকের কাছে সত্যিই অপ্রত্যাশিত। হলই বা তাঁর বয়স ৩৭। ‘‘এর চেয়ে অনেক ভাল খেলার ক্ষমতা আমার এখনও আছে। আজও নিজেকে সেরা জায়গায় নিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। আর একটু চেষ্টা করলে হয়তো সত্যিকারের সেরিনাও হয়ে উঠতে পারতাম। এখন মনে হচ্ছে, আগামী দিনে নিজেকেই দেখাতে হবে, ফাইনালে ঠিক কেমন খেলতে হত,’’ বলেছেন সেরিনা।
অলিম্পিয়ার জন্ম দিয়ে সার্কিটে প্রত্যাবর্তনের পরে মার্গারেট কোর্টকে ধরার লক্ষ্যে দৌড়তে থাকা সেরিনা এর আগে দু’বার উইম্বলডন ফাইনালেও হেরেছেন। বারবার কেন এ রকম হচ্ছে? সেরিনার ব্যাখ্যা, ‘‘বিশ্বাস করুন সেটা নিজেও জানি না। আজ হেরে এতটা হতাশ হয়েছি যে বলার নয়। ওই রেকর্ডটার এত কাছে পৌঁছেও যেন মনে হচ্ছে অনেক অনেক দূরে পড়ে রয়েছি এখনও।’’ সেরিনার আরও মন্তব্য, ‘‘নিজেও জানি না আজকের হারের পরে কী বলব। শুধু এটুকু বলতে পারি যে, পেশাদার সার্কিটে নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখতে চেষ্টা করে যেতে হবে।’’ সামনের মাসেই আটত্রিশে পা দেবেন সেরিনা। আর কত দিন পারবেন চেষ্টা করে যেতে? জবাব, ‘‘যদি ভাবেন যে শুধু রেকর্ডের জন্যই খেলে যাচ্ছি, তা হলে ভুল করবেন। রেকর্ড নয়, আমি শুধু গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে চাই। সেটাই স্বপ্ন। তাই বারবার খালি হাতে ফেরাটা, তা-ও ফাইনালে উঠে, চূড়ান্ত হতাশার। পাশাপাশি এটাও ঘটনা যে, এখনও অনেকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যাচ্ছি। যাচ্ছি বলেই গ্র্যান্ড স্ল্যামের ফাইনালে আপনারা আমাকে দেখছেন।’’
অবিশ্বাস্য হলেও এটা ঘটনা যে দ্বিতীয় সেটে এক সময় সেরিনা ১-৫ পিছিয়ে পড়েন। সেখান থেকে অবশ্য ঘুরে দাঁড়িয়ে রীতিমতো ম্যাচ পয়েন্ট বাঁচানোর লড়াইও চালিয়েছেন। ‘‘এ ভাবে হেরে যেতে ভাল লাগছিল না। তাই চেষ্টা করলাম আর একটু ভাল খেলার। সত্যি ১-৫ পিছিয়ে পড়ে মনে হচ্ছিল একটা ভয়ঙ্কর অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছি।’’ ১-৫ পিছিয়ে পড়ার অবস্থা থেকে ৫-৫ করার পিছনে সেরিনা পেয়েছেন দর্শকদের অকুণ্ঠ সমর্থন। কিন্তু নির্ণায়ক সেটের ১২ নম্বর গেমে বিয়াঙ্কা আবার ব্রেক করে ম্যাচ জিতে যান। সেরিনা বলেন, ‘‘নিজেকে বলছিলাম, সারা টুর্নামেন্টে তুমি বেশি হলে দু’বার সার্ভিস নষ্ট করেছ। কিন্তু আজ তোমার কী হল? আজ তো একটাও প্রথম সার্ভিস জায়গায় রাখতে পারছ না।’’
কোর্টে ফিরে চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালে হার। সেরিনা বলেন, ‘‘কের্বেরের কাছে হারকে ধরছি না। তখন আমার মেয়ের বয়স আট মাস। বিধ্বস্ত অবস্থায় ফাইনাল খেলেছিনাম। আর হালেপের বিরুদ্ধে যা খেলেছি আজ তার চেয়ে একটু হলেও ভাল খেলেছি। কিন্তু এই ভালটা কখনওই সেরা নয়। হতে পারে আজ থেকে কুড়ি বছর পরে মনে হবে, এই টুর্নামেন্টগুলোয় মোটেই খারাপ খেলিনি। কিন্তু এই মুহূর্তে অত ভাল কিছু ভাবতে পারছি না।’’