ইতিহাসের ইডেনে এক স্বপ্নের দৌড় শুরু
Bengal

তিন পেসারে দল সাজাচ্ছে বাংলা, ওপেনে নেই ঈশ্বরন

বাংলার শক্তি তাদের পেস আক্রমণ। প্রথম একাদশে ফেরানো হচ্ছে আকাশ দীপকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:১১
Share:

অভিযান: ঘরের মাঠে কর্নাটকের বিরুদ্ধে রঞ্জি ট্রফির সেমিফাইনাল আজ। তার আগে শুক্রবার ইডেনে চূড়ান্ত প্রস্তুতি বাংলা দলের। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

ইডেনের বাইরে জড়ো হয়েছিলেন সমর্থকেরা। প্রিয় তারকার সঙ্গে দেখা করার আশা নিয়ে। সেই প্রিয় তারকা বাংলার কোনও ক্রিকেটার নন। তিনি কে এল রাহুল। শেষমেশ তাঁদের অপেক্ষার অবসান। ঘড়ির কাঁটায় তখন ১টা বেজে ২০ মিনিট। ইডেনের গেটের বাইরে এলেন তাঁদের প্রিয় তারকা। অপেক্ষায় থাকা সমর্থকদের স্রোত এগিয়ে গেল তাঁর দিকে।

Advertisement

সই সংগ্রাহকদের হাসি মুখে অটোগ্রাফ দিলেন। নিজস্বী তুললেন খুদে সমর্থকদের সঙ্গে। তাঁর আচরণ দেখে বলে দেওয়াই যায়, নিশ্চিন্তে রয়েছেন ভারতীয় তারকা। শনিবার বাংলার বিরুদ্ধে রঞ্জির সেমিফাইনালে রাহুলকে নিশ্চয়ই এই রূপে দেখতে চাইবে না বাংলা। যত দ্রুত তাঁর মুখ থেকে হাসি কেড়ে নেওয়া যায়, সেটাই লক্ষ্য থাকবে আকাশ দীপ, ঈশান পোড়েল, মুকেশ কুমারদের। ইডেনের ঘাসে ভরা বাইশ গজে তাই তিন পেসার নিয়ে দল সাজাচ্ছেন কোচ অরুণ লাল।

বাংলার শক্তি তাদের পেস আক্রমণ। প্রথম একাদশে ফেরানো হচ্ছে আকাশ দীপকে। নীলকণ্ঠ দাসের পরিবর্তে। আকাশকে সঙ্গ দেবেন মুকেশ ও ঈশান। কিন্তু বিপক্ষের দুর্বলতা খোঁজা কঠিন। পেস বিভাগকে নেতৃত্ব দেবেন প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ ও অভিমন্যু মিঠুন। প্রথম জন নাইট শিবিরের মূল পেসার। দ্বিতীয় জন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। তৃতীয় পেসার হিসেবে খেলবেন রনিত মোরে। তাঁর গতি প্রথম দু’জনের চেয়েও বেশি। প্রসিদ্ধ ও মিঠুনকে খেলার অভিজ্ঞতা থাকলেও রনিত বিস্ময় প্রতিভা। বাংলার ক্রিকেটারেরা তাঁকে কী ভাবে সামলান, দেখার।

Advertisement

এ বার আসা যাক স্পিন বিভাগে। একজন স্পিনার নিয়েই নামছে কর্নাটক। তিনি কৃষ্ণাপ্পা গৌতম। অভিজ্ঞ অফস্পিনার গত ম্যাচে কর্নাটকের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ইনিংসে সাত উইকেট পেয়েছেন। যে কোনও পিচেই তিনি ভয়ঙ্কর। কর্নাটকের ব্যাটিং বিভাগ সব চেয়ে শক্তিশালী। রাহুল ও দেবদূত পাড়িক্কালের বিধ্বংসী জুটির বিরুদ্ধে মূল পরীক্ষা আকাশ, ঈশানদের। তার পরে একে একে আসতে শুরু করবেন করুণ নায়ার, মণীশ পাণ্ডে, কে সিদ্ধার্থ, এস শরৎ, গৌতমেরা। কাকে আটকাবে বাংলা?

ঈশান পোড়েল বলে দিলেন, ‘‘রাহুলের উইকেট দ্রুত তুলে নিতে পারলেই বিপক্ষ অনেকটা চাপে পড়ে যাবে। প্রাণপণ চেষ্টা করব ওর উইকেট পাওয়ার। কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের অধিনায়ক ও। আমিও সে দলে রয়েছি। অধিনায়কের উইকেট নিতে পারলে নজরে উঠে আসা যাবে।’’

নেটে খুব একটা ছন্দে দেখা গেল না রাহুলকে। স্থানীয় নেট বোলারের বিরুদ্ধে বেশ কয়েক বার পরাস্ত হন। যা দেখে বাংলার আকাশ দীপের মুখে হাসি। বলছিলেন, ‘‘ক্রিকেট বাইশ গজে খেলা হয়। আসল লড়াইটা হবে কাল।’’

বিপক্ষে একাধিক তারকা দেখেও বাংলা শিবির ফুরফুরে। মহড়ার শুরুতেই দলের প্রত্যেককে জড়ো করে বেশ কিছুক্ষণ কথা বললেন। কী বললেন জানতে চাইলে অরুণের উত্তর, ‘‘চিন্তার কোনও কারণ নেই। কর্নাটকের ক্রিকেটারদের কি অতিরিক্ত হাত-পা আছে! ওরা রাহুলকে নিয়ে এসেছে, আমাদেরও আকাশ ফিট। মণীশ পাণ্ডের বিরুদ্ধে ঈশানই যথেষ্ট। করুণ নায়ারের বিরুদ্ধে আমাদের মুকেশ কী কম?’’ যোগ করেন, ‘‘এত দিনের পরিশ্রমের ফল পাব এই ম্যাচে। ছেলেরা একেবারেই ভয় পাচ্ছে না। বরং নায়ক হয়ে মাঠ ছেড়ে বেরনোর তাগিদে ফুসছে। এই বাংলা কুঁকড়ে যেতে শেখেনি। পাল্টা জবাব দিতে জানে। তা ছাড়া ২০০৬-’০৭ মরসুমে কর্নাটককে হারিয়েই শেষ বার ফাইনালে উঠেছিল বাংলা। তার পুনরাবৃত্তির জন্য মরিয়া প্রত্যেকে।’’

বাংলার উদ্বেগ, তাদের উপরের সারির ব্যাটসম্যানেরা। অভিমন্যু ঈশ্বরন, অভিষেক রামন ও কৌশিক ঘোষ সেরা ছন্দে নেই। তাই কর্নাটকের বিরুদ্ধে ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন হতে পারে। কৌশিকের সঙ্গে ওপেন করানো হতে পারে রামনকে। তিন নম্বরে নামার পরিকল্পনা ঈশ্বরনের। অরুণ বলছিলেন, ‘‘অভিমন্যুর উইকেট খুব গুরুত্বপূর্ণ। শুরুতেই ওকে হারালে দল চাপে পড়ে যাবে। তাই রামন ও কৌশিক ওপেন করুক। তিন নম্বরে আসুক অভিমন্যু।’’

আরও একটি পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। অর্ণব নন্দীর পরিবর্তে দলে ফেরানো হতে পারে সুদীপ চট্টোপাধ্যায়কে। অরুণের ব্যাখ্যা, ‘‘সাত জন ব্যাটসম্যান নিয়ে নামতে চাইছি। টপ অর্ডার ব্যর্থ হলে মিডল অর্ডারে একজনকে লাগবে, যে দায়িত্ব নিতে পারে।’’ মনোজ তিওয়ারি, অনুষ্টুপ মজুমদারের সঙ্গে সুদীপের অভিজ্ঞতাও কাজে লাগাতে চায় বাংলা। কিন্তু ইডেনের পিচ প্রস্তুতকারকের কাছ থেকে অরুণ জানতে পেরেছেন, শেষ দু’দিন বল ঘুরবে। তাই সুদীপ খেলবেন না অর্ণব, তা নিয়েই ধন্দে শিবির।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement