পরীক্ষা: প্রস্তুতিতে কোনও ফাঁক রাখতে চান না অরুণ। ফাইল চিত্র
ভুবনেশ্বরে বাংলা যে হোটেলে উঠেছে, সেখান থেকে মাঠের দূরত্ব প্রায় ৪৫ কিলোমিটার। মঙ্গলবার দুপুরে অভিমন্যু ঈশ্বরন, ঈশান পোড়েলদের মাঠে আসতে সময় লেগেছে দেড় ঘণ্টা। বাংলা শিবিরে উদ্বেগ, পাঁচ দিনের ম্যাচ খেলতে আসার জন্য প্রত্যেক দিন ক্রিকেটারদের ভোর পাঁচটার মধ্যে ঘুম থেকে উঠতে হবে। না হলে ঠিক সময় মাঠে পৌঁছনো যাবে কি না সন্দেহ।
মাঠে পৌঁছনোর রাস্তা যদিও মন ভাল করে দেওয়ার মতো। মহানদীর তীর ধরে অনেকটা রাস্তা। দুপুরের মিঠে রোদের আলো জলের রং সোনালি করে তোলে। সেখানেই প্রচুর পরিযায়ী পাখির ভিড়।
ওড়িশার ড্রিমস ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পরিবেশও সুন্দর। ক্রিকেট মাঠের সংলগ্ন বেশ কয়েকটি মাঠ রয়েছে। কোথাও বিকেলে হকি স্টিক নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন পড়ুয়ারা। কোথাও জোরকদমে চলছে ফুটবল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এই ছবি, অনেকের মন কাড়তে বাধ্য।
বাংলা শিবিরও মাঠের পরিবেশ দেখে বেশ প্রসন্ন। কোচ অরুণ লাল বলছিলেন, ‘‘খুব ভাল জায়গায় ম্যাচ দেওয়া হয়েছে। দারুণ আউটফিল্ড। পিচেও বেশ ঘাস লক্ষ্য করলাম।’’
বোর্ড অনুমোদিত পিচ প্রস্তুতকারক এল প্রশান্ত জানিয়ে দিলেন, শক্ত মাটি দিয়ে বানানো হয়েছে এই বাইশ গজ। যেখানে শুরুর দিকে পেসারেরা সাহায্য পাবেন। সমস্যায় ফেলবে বাউন্স। সকালের দু’ঘণ্টা পরে পিচ হয়ে উঠবে ব্যাটসম্যানদের স্বর্গ। প্রশান্তের কথায়, ‘‘এই পিচে সামান্য ঘাস রাখা হয়েছে আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য। কটকের বাতাসে আর্দ্রতা কম। এই ঘাসই পিচকে পাঁচ দিনের ম্যাচের জন্য আদর্শ করে তুলবে।’’ যোগ করেন, ‘‘এই উইকেট থেকে স্পিনারেরা সে রকম সাহায্য পাবে না। মাটি একেবারে শক্ত। সকালের আর্দ্রতা কাজে লাগিয়ে পেসাররা কিছুটা প্রভাব ফেলবে। বাউন্সও পাবে। লাঞ্চের পর থেকে একেবারে ব্যাটিং-সহায়ক উইকেট হয়ে যেতে পারে।’’
পিচ থেকে বাউন্স পাওয়ার ইঙ্গিত পেয়ে মুখে এক গাল হাসি ঈশান পোড়েলের। বাউন্সই তাঁর অস্ত্র। সতীর্থ আকাশ দীপের চোট এখনও সারেনি। এ দিন অনুশীলনে দৌড়তেও পারছিলেন না তিনি। সে ক্ষেত্রে মুকেশ কুমার ও ঈশানকে বিপক্ষ শিবিরে ত্রাস তৈরি করার কাজ করতে হবে। কিন্তু বিপক্ষেরও অস্ত্র তো তাদের পেস আক্রমণ। ড্রিমস ক্রিকেট স্টেডিয়ামে যে চারটি ম্যাচ ওড়িশা খেলেছে, পেসাররাই পেয়েছেন ৬৭টি উইকেট। বাংলার বিরুদ্ধে গতির পিচ দেখে তাঁরাও নিশ্চয়ই প্রসন্ন।
মঙ্গলবার সকালে অনুশীলন করেছে ওড়িশা। দুপুরে ছিল বাংলার। কোচ অরুণ লাল শুরুতেই নীচের সারির ব্যাটসম্যানদের আগে ব্যাট করিয়ে নেন। কারণ, বাংলার ওপরের সারি এখনও সে ভাবে জ্বলে ওঠেনি। রান করেছেন মাঝের সারির ব্যাটসম্যানেরা। কোয়ার্টার ফাইনালে প্রয়োজনে নীচের সারির ব্যাটসম্যানদেরও দায়িত্ব থাকবে বড় জুটি গড়ার। মুকেশ, ঈশানরা ব্যাট করে বেরনোর পরেই নেটে প্রবেশ করেন অভিমন্যু, কৌশিক ঘোষরা। সিএবি-র প্রথম ডিভিশন লিগের ম্যাচ থাকার জন্য রাতে দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সুদীপ চট্টোপাধ্যায়। ব্যাটিং অর্ডারের তিন নম্বরে ফেরানো হতে পারে তাঁকে। কোচ বলছিলেন, ‘‘সুদীপ নিজের ছন্দ ফিরে পেয়েছে। স্থানীয় ক্রিকেটে রান করেছে বলেই ওকে নেওয়া হয়েছে। কোয়ার্টার ফাইনালের আগে ওর মতো ছন্দে থাকা ব্যাটসম্যানই আমাদের প্রয়োজন ছিল। আশা করি, নিজেকে প্রমাণ করবে ও।’’
এ দিকে ওড়িশা দলের স্পিন বিভাগ সামলাচ্ছেন এক বাঙালি। পিকনিক গার্ডেনে বাড়ি। কাকিমার কাছে মানুষ হয়েছেন। কখনও মা, বাবার মুখ দেখেননি। কী ভাবে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তারও কোনও আন্দাজ নেই। কলকাতায় প্রথম ডিভিশনে দীর্ঘ আট বছর খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে ২৪ বছর বয়সি এই বাঁ-হাতি স্পিনারের। তিনি পাপ্পু রায়। সাউথ সুবার্বান, পুলিশ এসি, ডালহৌসি অ্যাথলেটিক ক্লাবের হয়ে খেলে গিয়েছেন। কিন্তু বাংলার হয়ে খেলার সুযোগ না পেয়ে ওড়িশা চলে এসেছেন। পাপ্পু বলছিলেন, ‘‘প্রচুর উইকেট পেয়েছি। কিন্তু বাংলার হয়ে খেলার স্বপ্নপূরণ হয়নি। ওড়িশা আমাকে প্রচুর সুযোগ দিয়েছে। এখানে পারফর্ম করে ভারতীয় ‘এ’ দলের হয়েও খেলেছি। বাংলা আমাকে যা দিতে পারেনি, ওড়িশা দিয়েছে।’’
বর্তমান বাংলা দলের অনেকের সঙ্গেই তিনি খেলেছেন। তাই বিপক্ষ অধিনায়ক শুভ্রাংশু সেনাপতির কাছে এই বাঙালিই অস্ত্র বিপক্ষের শক্তি ও দুর্বলতা সম্পর্কে জানার। পাপ্পু বলছিলেন, ‘‘ওদের সঙ্গে খেলার ফলে জানি, কার কোথায় সুবিধা। সতীর্থদের সে বিষয়ে জানিয়েছি। আমরাও কোয়ার্টার ফাইনালে যাত্রা শেষ করতে চাই না।’’
বাংলাকে উদ্বেগে রাখতে পারে কটকের তাপমাত্রাও। দুপুরে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে অনুশীলন করতে হয়েছে অভিমন্যুদের। কলকাতার ঠান্ডা পরিবেশ থেকে এসে এই গরমে মানিয়ে নেওয়াও বাংলার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।