পদকের স্বপ্নে রিও পাড়ি বাংলার ছেলের

ভারতের ব্লেজার। টি-শার্টের বুকে আঁকা তেরঙ্গা। অলিম্পিক্স কিটস হাতে পাওয়ার পর থেকে অন্য ধরনের উত্তেজনা টের পাচ্ছেন নিজের মধ্যে।

Advertisement

মহাশ্বেতা ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৪৬
Share:

ভারতের ব্লেজার। টি-শার্টের বুকে আঁকা তেরঙ্গা।

Advertisement

অলিম্পিক্স কিটস হাতে পাওয়ার পর থেকে অন্য ধরনের উত্তেজনা টের পাচ্ছেন নিজের মধ্যে। আর যখনই ভাবছেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পা মেলাচ্ছেন বিশ্বের তাবড় অ্যাথলিটদের সঙ্গে, জিকা ভাইরাস, গল্ফের সেরাদের সরে দাঁড়ানো নিয়ে বিতর্ক, গেমস ভিলেজে দুর্দশার সাতকাহন— সব ফিকে হতে হতে মুছে যাচ্ছে মনের নোট প্যাড থেকে।

বরং বুধবার সন্ধ্যায় রিও রওনা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে মোবাইলের ওপ্রান্তে দারুণ উদ্দীপ্ত তিনি। বলে দিলেন, ‘‘টি-শার্টের বুকে ভারতীয় পতাকাটা দেখার পর থেকে অসম্ভব ইতিবাচক লাগছে। অদ্ভূত অনুভূতি। অন্য সব কিছুর থেকে একদম আলাদা। এমনকী পেশাদার সার্কিটে খেতাব জেতার সঙ্গেও মেলানো যায় না।’’

Advertisement

এই টি-শার্ট পরেই অলিম্পিক্স গল্ফ কোর্সে টি-অফ করবেন কলকাতার তারকা গল্ফার শিবশঙ্কর প্রসাদ চৌরাসিয়া। একশো বারো বছর পর অলিম্পিক্সে গল্ফের ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনের গেমসে বিশ্বের আটষট্টি নম্বর অনির্বাণ লাহিড়ীর সঙ্গে যিনি প্রতিনিধিত্ব করছেন দেশের।

এশিয়ার চার নম্বর গল্ফারের চলতি মরসুমে পুরস্কার অর্থে উপার্জন এর মধ্যেই তিন লক্ষ ডলার ছাপিয়েছে। শিবশঙ্কর কিন্তু প্রথম অলিম্পিক্স অভিজ্ঞতার প্রতিটা মুহূর্তের রসাস্বাদনে ঠিক করে নিয়েছেন, তারকাদের মতো হোটেল-টোটেলে নয়, থাকবেন গেমস ভিলেজে। তা সে ভিলেজের দুর্দশা নিয়ে যতই অভিযোগ থাক না কেন।

জিকা-আতঙ্কে সেরা গল্ফারদের অনেকে রিও যাচ্ছেন না। সেই প্রসঙ্গ তুলতেই সাফ বুঝিয়ে দিলেন, ব্যাপারটা সমর্থন করেন না। বললেন, ‘‘দেখুন সবার নিজস্ব মতামত থাকে। আমি জিকা ভ্যাকসিন নিয়ে নিয়েছি। তা ছাড়া এত অ্যাথলিট তো যাচ্ছে। অযথা ভয় পাব কেন। আমাকে যদি জিজ্ঞাসা করেন, বলব ওদের নাম তুলে নেওয়া উচিত হয়নি।’’

টাকা নেই, তাই গল্ফের সেরা চার-সহ অনেকে রিওয় নেই বলে গেমস অয়োজন কমিটির প্রেসিডেন্ট কার্লোস নুজম্যানের অভিযোগও মানছেন না শিবশঙ্কর। ‘‘কথাটা আমিও শুনেছি। কিন্তু খেলাধুলোর সবচেয়ে বড় মঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার গৌরব কখনও টাকা দিয়ে মাপা যায় না। আমরা গল্ফাররা তো এই সুযোগ পাই-ই না। একশো বছরেরও পরে সুযোগটা এসেছে। প্রত্যেকে মুখিয়ে আছে।’’ একটু থেমে বললেন, ‘‘জিকা যে আছে সেটা তো ঠিক। জর্ডান স্পিথ, রোরি ম্যাকিলরয়দের সরে দাঁড়ানোর সেটাই কারণ।’’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘ক’জন সরলে ফিল্ড দুর্বল হয় না। ওরা না থাকায় অলিম্পিক্স গল্ফের মান মোটেই পড়ে যাবে না।’’

তাঁর নিজের অলিম্পিক্স কোর্স দেখার তর সইছে না। ব্রাজিলে গল্ফের আন্তর্জাতিক আসর এই প্রথম। শিবশঙ্করেরও এটাই প্রথম ব্রাজিল যাত্রা। সমুদ্র লাগোয়া ‘মারাপেন্ডি ন্যাচরাল রিজার্ভ’ ম্যানগ্রোভ, জাকারান্দাস পাইন, বিরল গাছ, পাখি ও প্রাণীর বাসস্থান। বিশ্বের অন্যতম সংরক্ষিত প্রাকৃতিক অ়ঞ্চল। সেখানে প্রায় ৯৮০ বর্গমিটার জুড়ে তৈরি হয়েছে অলিম্পিক্স কোর্স। ভিলেজ থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে।

একেবারে অচেনা কোর্সে মানাতে সমস্যা হবে না? শিবশঙ্কর বলছেন ‘‘হবে না। ইউরোপের চেয়ে কঠিন কন্ডিশনস আর কোথাও নেই। ওখানে আট-ন’বছর খেলেছি। খুব এলোমেলো হাওয়া চলে। রিওতেও সমুদ্রের ধারে তেমন হাওয়া থাকতে পারে। তবে দিন তিনেক পাব কোর্সের সঙ্গে মানিয়ে নিতে।’’

পাঁচ তারিখ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মার্চপাস্টে থাকবেন। তার পরের দিন যাচ্ছেন কোর্স দেখতে। ইন্ডিয়ান ওপেন চ্যাম্পিয়ন জানালেন, কোর্সটা বাকিদের কাছেও নতুন। তাই কেউ এগিয়ে নেই। বললেন, ‘‘অনির্বাণ আর আমি গত কয়েক মাসে বিভিন্ন কন্ডিশনে খেলছি এবং উন্নতি করেছি। সমস্যায় পড়ব বলে মনে করি না।’’

রিওয় পুরুষদের গল্ফ ১১-১৪ তারিখ। স্বাধীনতা দিবসের ঠিক আগে দেশকে কি পারবেন পদক উপহার দিতে? কলকাতার ছেলে এই প্রথম উত্তর দিতে সময় নিলেন। ‘‘পদকের কথা জানি না। তবে নিজেদের সেরাটা ওখানে দেবই।’’ প্রতিজ্ঞার মতো শোনাল কথাটা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement