বিশ্বকাপ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে যাক চাইছে ভারতীয় বোর্ড।
ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা আইসিসি বনাম বিশ্বের সব চেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ড। দু’পক্ষের মধ্যে বাড়তে থাকা অশান্তি করোনাভাইরাস অতিমারির মধ্যে আরও উত্তপ্ত বাঁক নেবে কি না, ঠিক হয়ে যেতে পারে আজ, বুধবার।
অশান্তির কেন্দ্রে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আইসিসি-র বিলম্ব নীতি। ভারতীয় বোর্ডের শীর্ষস্থানীয় কর্তারা চান, এ নিয়ে আর টালবাহানা না-করে এসপার-ওসপার সিদ্ধান্ত হয়ে যাক। আগের দিন বিদায়ী আইসিসি প্রধান শশাঙ্ক মনোহরের নেতৃত্বে যে সিদ্ধান্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং তথ্য ফাঁস নিয়ে ভারতীয় বোর্ডের দিকে আঙুল তোলা হয়েছে, তা নিয়ে কেউ প্রসন্ন নন। গত কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন দেশের বোর্ডের সঙ্গে কথা বলেছেন ভারতীয় কর্তারা। সমর্থন আদায় করার চেষ্টা করেছেন। অনেকের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতিও পেয়েছেন। করোনা সংক্রমণের এমন কঠিন সময়ে অনেক দেশের বোর্ডই বিপুল আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে। তাদের রক্ষাকর্তা হয়ে দাঁড়াতে পারে ভারতীয় বোর্ড। বিরাট কোহালিরা কোনও দেশে গিয়ে ক্রিকেট সিরিজ খেলা মানে সে দেশের কোষাগার ভরে ওঠা। করোনার জেরে আর্থিক মন্দার বাজারে তাঁদের চাহিদা আরওই বেশি হতে চলেছে।
বিভিন্ন দেশের বোর্ডই চাইছে, বিশ্বকাপ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে যাক। যাতে পরিষ্কার ছবি পাওয়া যায় এবং করোনা-পরবর্তী আগামী কয়েক মাসের পরিকল্পনা কী হতে পারে, তা ভেবে রাখা যায়। ইংল্যান্ড আর বসে না-থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজ চালু করে দিচ্ছে। এমনকি, করোনা-পরিবর্ত চলে আসছে ক্রিকেটে। বিভিন্ন দেশের দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বন্ধ হয়ে রয়েছে। তাতে কোটি কোটি টাকার লোকসান হচ্ছে।
আরও পড়ুন: আসছে কোভিড পরিবর্ত, বলে দিল আইসিসি
এ রকম পরিস্থিতিতে আইসিসি ক্রিকেট চালু করা বা না-করা নিয়ে দিশা দেখাতে ব্যর্থ। ভারতীয় বোর্ডের এক প্রভাবশালী কর্তা বলছিলেন, ‘‘এ রকম একটা কঠিন সময়ে আইসিসি কি না সভার সময় কাটিয়ে দিচ্ছে, কে ই-মেল ফাঁস করল, তা নিয়ে। লজ্জাজনক এবং নজিরবিহীন।’’
করোনার জেরে বিশ্বমানের সব প্রতিযোগিতা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেমন টোকিয়ো অলিম্পিক্স। ফুটবলে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ বা কোপা আমেরিকা। ২০২০-তে অনুষ্ঠেয় বিশ্বমানের ইভেন্টের মধ্যে একমাত্র টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ভাগ্য ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এমনকি, অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ডের মহাকর্তা পর্যন্ত জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতিতে বিশ্বকাপ করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হবে। তাঁদের দেশেই অক্টোবরে হওয়ার কথা ছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। অস্ট্রেলিয়া তো বটেই, অনেক দেশই এখনও আন্তর্জাতিক ভ্রমণের উপরে নিষেধাজ্ঞা তোলেনি। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কী ভাবে ১৬ দলকে নিয়ে বিশ্বকাপের মতো মহাযজ্ঞ আয়োজনের ঝক্কি নেওয়া হবে?
আরও পড়ুন: করোনা পরীক্ষা করে নিভৃতবাসে হোল্ডাররা
বুধবারের সভায় আইসিসি-র বিলম্ব নীতি দেখলে ভারতীয় বোর্ডের সুর চড়ানোর কথা। আগের দিনের মতো বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ই যোগ দেবেন ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ যদি বাতিল হয়ে যায়, অক্টোবর-নভেম্বরের ক্রিকেট ক্যালেন্ডার ফাঁকা হয়ে যাবে। তখন ফাঁকা হওয়া সেই সময়ে আইপিএল করার ভাবনা গতি পাবে। বিদেশি অনেক ক্রিকেটার এবং বিদেশের ক্রিকেট বোর্ডেরাও তাকিয়ে রয়েছে আইপিএল হওয়ার দিকে। অনেকের কাছেই এই টুর্নামেন্ট সোনার রাজহাঁস। ক্রিকেটারেরা মোটা টাকা কামান, তাঁদের বোর্ডেরাও পায় লভ্যাংশ। আইপিএল না-হওয়া মানে সে সবই বাতিল। ভারতীয় বোর্ডের প্রায় চার হাজার কোটি টাকা লোকসান হতে পারে।
বিশ্বকাপ নিয়ে টিভি সম্প্রচারকারী সংস্থার বক্তব্যও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে বলে কারও কারও পূর্বাভাস। ২০২০-তে অস্ট্রেলিয়ায়, ২০২১-এ ভারতে পর-পর দু’বছর দু’টি কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপ ছিল। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ পিছিয়ে ২০২১-এ করা মানে একই বছরে দু’টো বিশ্বকাপ হয়ে যাচ্ছে, যা টিভি স্বত্বের অধিকারী সংস্থা চাইছে না। ভারত চায়, ২০২১ বিশ্বকাপ এ দেশেই হোক। ২০২০ বাতিল হলে ২০২২-এ হোক অস্ট্রেলিয়ায়। আইসিসি-তে মনোহর এবং তাঁর কয়েক জন সমর্থক আবার ভারতে কর-ছাড় নিয়ে সমস্যার কথা তুলে বাগড়া দিতে শুরু করেছেন। সে সব নিয়ে সভা উত্তপ্ত হতে পারে।
মনোহরের মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে। তিনি আইসিসি-তে সংখ্যাগরিষ্ঠতাও হারিয়েছেন। পরবর্তী আইসিসি প্রধান নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হবে বৈঠকে। তবে এটা নিছকই প্রাথমিক আলোচনা, নির্বাচনী দামামা বাজার জন্য আরও কিছু দিন অপেক্ষা । আপাতত ‘হট টপিক’, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হচ্ছে কি না?