লোঢা কমিটির রায়ে বেসামাল আইপিএলকে সামলাতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে পড়ল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড।
বুধবার সন্ধ্যায় শহরে পৌঁছে আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান রাজীব শুক্ল চলে গেলেন বোর্ড প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়ার বাড়ি। সেখানেই বেশ কিছু সময় ধরে চলে বৈঠক। যেখানে বোর্ড প্রেসিডেন্ট নাকি জানিয়ে দিয়েছেন, বিচারপতি লোঢা কমিটির সুপারিশ মেনেই তাঁদের এগোতে হবে। আবার আইপিএলের গায়ে ছিটে ফোঁটা দাগও লাগতে দেওয়া চলবে না।
বৈঠকের পর রাজীব শুক্ল বিশেষ টাস্ক ফোর্সের ইঙ্গিত দিয়ে বলে গেলেন, ‘‘লোঢা কমিটির রিপোর্ট আগে আমাদের ভাল করে দেখতে হবে। তার পর সবার স্বার্থ যাতে বজায় থাকে, সেই মতো কিছু করতে হবে। পুরো ব্যাপারটা কার্যকর করার জন্য একটা বিশেষ গ্রুপ তৈরি করার ভাবনা আছে আমাদের।’’ বুধবার সন্ধ্যার বৈঠকে নাকি বোর্ড প্রেসিডেন্ট ডালমিয়াও তাঁকে স্পষ্ট বলেছেন, ‘‘ক্রিকেট, বিসিসিআই, আইপিএল ও ক্রিকেটারদের স্বার্থ বজায় রেখেই এগোতে হবে।’’
কিন্তু কী ভাবে বজায় রাখা হবে সবার স্বার্থ, তা নিয়েই এ দিন দিনভর আলোচনা চলল বোর্ড মহলে। বোর্ডের অন্দরমহলের খবর, নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নাকি কয়েকটি রাস্তা বার করেও ফেলেছেন শীর্ষকর্তারা। সেগুলিই প্রেসিডেন্টকে জানাতে তাঁর বাড়িতে এসেছিলেন শুক্ল।
কোন রাস্তায় এগোলে কী আইনি সমস্যা হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনার জন্য বোর্ডের আইনি পরামর্শদাতা ঊষানাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই বৈঠকে ছিলেন। সব শুনে নাকি ডালমিয়া বলে দেন, ‘‘লোঢা কমিটির সুপারিশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে হবে।’’
প্রেসিডেন্টের প্রাথমিক সম্মতি নিয়েই রবিবার মুম্বইয়ে আইপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের বৈঠকে বসতে চলেছেন শুক্ল। যিনি এ দিন রাতে বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে বলেন, ‘‘বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট ও সচিব দু’জনের সঙ্গেই কথা হয়েছে আমার। রবিবারের বৈঠকে আমরা একটা গ্রুপ তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিতে পারি। যাদের কাজ হবে লোঢা কমিটির রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে তা কার্যকর করা যায় কী ভাবে, তা স্থির করা।’’ এই গ্রুপে কারা থাকবে, তা নিয়ে অবশ্য কিছু বলতে চাইলেন না শুক্ল।
বোর্ডের অন্দরমহলের খবর, আট দলের আইপিএল-ই করার দিকে ঝুঁকে বিসিসিআই। কারণ, সম্প্রচার সংস্থা মাল্টি স্ক্রিন মিডিয়ার সঙ্গে তাদের চুক্তি আট দলের টুর্নামেন্ট করার। আরও শোনা যাচ্ছে, চেন্নাই সুপার কিংগসকে বাদ দিয়ে নাকি এগোনোর পক্ষপাতী নয় বোর্ডের একটা অংশ। প্রয়োজনে দু’বছরের জন্য নির্বাসিত দুই দলকে বোর্ডই চালাক, এমন প্রস্তাবও নাকি উঠে এসেছে। দু’বছর বাদে যখন দুই দলের মালিকপক্ষ নির্বাসনমুক্ত হয়ে ফিরে আসবে, তখন তাদের হাতে ফের দল ছেড়ে দেওয়া হবে।
বৈঠক শেষ। বোর্ড প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়ার বাড়ি থেকে বেরোচ্ছেন
আইপিএল চেয়ারম্যান রাজীব শুক্ল। বুধবার। —নিজস্ব চিত্র।
ভেসে উঠছে নতুন ফর্মুলা
নতুন দু’টি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে ডেকে নতুন দু’টি দল তৈরি করে খেলানোর ভাবনাও যে বোর্ডে নেই, তাও নয়। তবে সে ক্ষেত্রে একটা অসুবিধার অজুহাতও দেওয়া হচ্ছে। নতুন দলকে নিয়ে না হয় দু’বছর আইপিএল করা হল। তার পর যখন নির্বাসিত দুই দল ফিরবে, তখন তো দশটি দল নিয়ে আইপিএল করতে হবে। কিন্তু হোম-অ্যাওয়ে ফরম্যাটে পুরো লিগ ও নক আউট খেলাতে যে প্রায় দু’মাস সময় লাগবে, সেই উইন্ডো নাকি পাওয়া সম্ভব নয়। এর আগে যে আটের বেশি দল নিয়ে আইপিএল হয়নি, তা নয়। ২০১১-য় দশটি দল নিয়ে ও তার পরের দু’বছর ন’টি করে দল নিয়ে আইপিএল করা হয়েছিল। বোর্ডের যুক্তি, ২০১১-য় দশটি দলকে দু’টি গ্রুপে ভাগ করে খেলানো হয়েছিল। কিন্তু ফ্র্যাঞ্চাইজিরা নাকি সেই সূচি তেমন পছন্দ করেনি। তাই পরের দু’বার ন’টি দল হোম-অ্যাওয়ে পদ্ধতিতেই খেলেছিল। তাই দশ টিমের আইপিএল নিয়ে এখন থেকেই প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।
বোর্ডের একটা অংশ আবার অন্য ব্যাপার নিয়ে চিন্তিত। দু’টি দল চালাতে যে বিশাল খরচ হবে, তা নিয়েও অনেকে শঙ্কিত। তাঁদের মত, তার চেয়ে নতুন দু’টি ফ্র্যাঞ্চাইজি নতুন দু’টি দল তৈরি করলে বোর্ডের টাকা তো যাবেই না, উল্টে প্রচুর বাড়তি আয় হবে।
তবু প্রথম রাস্তায় যাওয়ার পক্ষে নাকি অনেকেই। অর্থাৎ বোর্ডই আপাতত দু’টি দলকে চালাক। যা দেখেশুনে ধারণা হতেই পারে যে, সিএসকে যাতে বাদ না পড়ে, তার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে বোর্ডের একাংশ। এবং মনে করা হচ্ছে, এদের মধ্যে বোর্ডের মাথাদের অনেকেই হয়তো আছেন।