অনুশীলনে ব্যস্ত বাংলাদেশ দল। শিলিগুড়িতে।-বিশ্বরূপ বসাক
মুক্তি চাই তাঁদের। ধর্মীয় গোড়ামি থেকে, হাজার বাধা থেকে, প্রচারের আলোয় না থাকার যন্ত্রণা থেকে। অস্ত্র একটাই— ফুটবল।
মেয়েদের সাফ কাপে সেই টার্গেট সামনে রেখেই এগোচ্ছে বাংলাদেশ। সে দেশের ফুটবল ফেডারেশনও তবে সাবিনা খাতুন, সনজিদা আখতারদের পাশে আছে। তবে অভিনব একটা সমস্যাও আছে ফেডারেশনের— ফুটবলারদের বিয়ে আতঙ্ক।
প্রত্যন্ত এলাকার অভাবী পরিবারের মেয়েদের সংখ্যাই সে দেশের ফুটবলে বেশি। গোঁড়া ধর্মীয় মনোভাবাপন্নদের বাধার সঙ্গে এই ফুটবলারদের বিয়ের আতঙ্ক বড় হয়ে উঠছে। মেয়ে একটু বড় হলেই বিয়ে দিতে চান পরিবারের লোকেরা। তাই নতুন নিয়ম আনতে হয়েছে বাধ্য হয়ে। অনূর্ধ্ব-১৪, অনূর্ধ্ব-১৬ মেয়েদের চার বছর বাধ্যতামূলক ভাবে ফুটবলটা খেলতে হবে।
ফুটবলের সুবাদে মেয়েদের কাজের সুযোগও তৈরি করে দিচ্ছে ফেডারেশন। সাফ দলে মহিলা ফুটবলারদের মধ্যে বাংলাদেশ আধা সামরিক বাহিনীতে চাকরি করছেন মুনমুন, আনুচিং মোগিনি, আনাই মোগনি, মুনমুন আখতাররা। সবিতা খাতুন, মাসুরা পারভিনদের মতো অন্তত ৮ জন চাকরি পেয়েছেন জুট মিলে। ফুটবল ফেডারেশন উদ্যোগী হয়েই সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছে।
কট্টরপন্থী বিভিন্ন সংগঠন একসময় প্রবল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল মেয়েদের ফুটবলের। ‘হিজাব’ সরিয়ে, হাফপ্যান্ট পরে মেয়েরা ফুটবল খেলবে তা কিছুতেই চায়নি তারা। তবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন এবং ফেডারেশনের মহিলা শাখা তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। পুরোপুরি সেই বাধা এখনও কাটেনি। নারগিস খাতুন, মাসুরা পারভিন, রওশন আরা-রা তাই বাধা টপকে বেরিয়ে আসতে চাইছেন ফুটবল পায়ে।
এ বছর সাফ মহিলা ফুটবলে বাংলাদেশের ২০ জনের স্কোয়াডে ১৪ জনই মুসলিম। বাকি ১ জন হিন্দু এবং ৪ জন খ্রিস্টান পরিবার থেকে আসা। তার মধ্যে প্রত্যন্ত এলাকার অনেক মহিলা ফুটবলারই প্রতিকূলতার মধ্যে দাঁড়িয়ে লড়ছেন।
সাবিনারা টুর্নামেন্টে কত দূর যাবেন সেটা সময় বলবে। তবে বুধবার সাফ কাপে মলদ্বীপকে ৯-০ গোলে উড়িয়ে সেমিফাইনালে যাওয়া অনেকটাই নিশ্চিত করে ফেলল নেপাল। কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে নেপালের সাবিত্রা ভান্ডারি একাই ৫টি গোল করেন। এ দিন অপর ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ২-০ গোলে হারায় ভূটানকে।