আজও বাঘের গর্জন শোনা যাবে কি? ছবি: রয়টার্স।
রাজকোটে আবহাওয়া কাল গুমোট ছিল। একই সঙ্গে গুমোট ছিল টিম বাংলাদেশের কোটি কোটি সমর্থকের মন। কাল সন্ধ্যায় জানা গিয়েছিল সাইক্লোন ‘মহা’র প্রভাবের কথা, ঝোড়ো হাওয়া আর বৃষ্টির আশঙ্কার কথা। আজ দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি মাঠে গড়াবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তাই সকলের মুখে। অথচ, আজ সকালেই ঢাকার আকাশ রোদ্দুরে উজ্বল। ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টির পর আজকের ম্যাচেও জয়ের স্বপ্ন উঁকি মারছে ঢাকা থেকে দূরের মফস্বল শহর পর্যন্ত সর্বত্র।
নয়াদিল্লিতে সিরিজের প্রথম ম্যাচটি নিয়ে প্রবল ভয় ছিল এখানে। একেই শাকিব- তামিম মাঠে নেই। দুই বড় ছায়া টিম থেকে দূরে থাকলে হার্টবিট বেড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক ক্রিকেটপ্রেমিকদের। আর তা যখন ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচ, তখন আগের আট দফা হেরে যাওয়ার স্মৃতি আসবেই। তাই বাংলাদেশের সমর্থকরা অনেকটাই আশংকা আর ভয় নিয়ে বসেছিলেন টেলিভিশনের সামনে। কিন্তু আজ সেই ছবিটাই একদম উল্টো। তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথমটিতেই আনায়াসে জয়। হাতে এখন দুটো ম্যাচ। যে কোনও একটিতে জিতলেই সিরিজ জয়। যা শাকিবের নিষেধাজ্ঞার পর বাংলাদেশ ক্রিকেটের ঘুরে দাড়ানোর ইতিহাস হয়ে থাকবে। দুই বড় মাপের ব্যাটসম্যান ছাড়াও আমরা পারি, এই ইতিহাস সৃষ্টির জন্যই অপেক্ষা চলছে।
শুক্রবার বাংলাদেশের ছুটির দিন। আজ খেলার দিনটি ছুটির দিনের আগের দিন, সে কারণেই সরকারি ও বেসরকারি আফিসে যেন একটু আগে কাজ শেষ করে ঘরে ফেরার তাড়া। অন্যদিকে, বন্ধুবান্ধব মিলে আয়েশে বসে খেলা দেখার জন্যও অনেকে প্রস্তত। হোয়াটসঅ্যাপ-ম্যাসেঞ্জারের গ্রুপে চলছে খেলা চলাকালে খাদ্য আয়োজনের চর্চা। জিতলে আনন্দের ধরন কী হবে, সেই আলোচনাও তুফান তুলছে।
আরও পড়ুন: বসবেন খলিল, খেলবেন শার্দুল? দেখে নিন আজ সমতা ফেরানোর লড়াইয়ে ভারতের সম্ভাব্য একাদশ
আরও পড়ুন: ‘প্রথম বল থেকে সেরা পারফরম্যান্স তুলে ধরতে হবে’
কিশোর তরুণদের প্রস্ততিটা আর একটু ভিন্ন। বড় পর্দায় খেলা দেখার আনন্দ নেওয়ার জন্য চলছে তাদের প্রস্ততি। শাহবাগ, বিশ্ববিদ্যালয় সহ ঢাকার কয়েকটি স্পটে বড় পর্দায় দলের খেলা দেখা গত কয়েক বছরে রীতি হয়ে উঠেছে। গ্যালারি হোক না হাজার মাইল দুরে, সামনের বিশাল পর্দাটাই বা কীসে কম স্টেডিয়ামের থেকে? আর লাইভ সম্প্রচারে কয়েক সেকেন্ডের সময় দূরত্বে কি আনন্দ উৎসবে কোনও বাধা পড়ে?
ঢাকার উচ্চবিত্ত পাড়া থেকে গ্রামের টেলিভিশন থাকা চায়ের দোকান। সবখানেই চলছে ম্যাচ দেখার প্রস্ততিপর্ব।উচ্চবিত্ত পাড়ায় যেমন নানা খাদ্য আয়োজন, তেমনই মফস্বলের চায়ের দোকানে অতিরিক্ত চা-পাতা, দুধের আয়োজন। বাড়তি ক্রেতার ভিড় সামাল দিতে যা কাজে আসবে। একইসঙ্গে কেবল সংযোগদাতাদেরও প্রস্ততি কম না। কোথাও যেন কভারেজের সংকট না হয়, সকাল থেকেই মাঠে আরেকবার দেখে নেওয়া চলছে হাতে-কলমে।
চলছে একই সঙ্গে বাংলাদেশের জেতা-হারার সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তর আলোচনা। একদিকে টিম ইন্ডিয়ার শক্তি আর অন্যদিকে ক্রিকেটে ক্রমশ উজ্বল হতে চলা বাংলাদেশ। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের জয়ের কারণেই সিরিজটি পেয়েছে অন্য উচ্চতা। এই ফরম্যাটে টানা আট দফা পরাজয়ের পর যে বিজয়ের সূচনা— সেই বিজয় এক ম্যাচে থেমে যাওয়ার নয়। নিশ্চয়ই থাকবে তার ধারাবাহিকতা। এই স্বপ্ন নিয়েই আজ বাংলাদেশ জুড়ে চলছে প্রস্ততি। এখন শুধু অপেক্ষা জয়ের উল্লাসের। প্রার্থনা, আজও যেন সেই উল্লাসের ধারাবাহিকতা থাকে।
প্রতিপক্ষ বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী টিম ইন্ডিয়া হলেও সবারই আশা লাগাতার আট ম্যাচে হারের দেওয়াল যখন ভেঙেছে, এই দেওয়াল আর সহজে উঠতে দেওয়া যাবে না। মাহমুদুল্লাহ, মুশফিকুররা যে অধরা স্বপ্নের বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে দিয়েছে, সেই স্বপ্ন যেন এতো সহজে ভেঙে না যায়। সে কারণেই আজ লাল-সবুজের সব সমর্থকের একটাই স্বপ্ন বা চাওয়া, রাজকোটে আরো একটা জয়। তাই তাদের আস্থার উচ্চারণ— প্রথম ম্যাচ জিতেছি, আজও জিতবো।
আরও পড়ুন: ফের স্পট-ফিক্সিংয়ের ছায়া ভারতীয় ক্রিকেটে, সিএম গৌতম সহ গ্রেফতার দুই রঞ্জি ক্রিকেটার