অপ্রতিরোধ্য: সেমিফাইনালে অনবদ্য। শুক্রবার অস্ট্রেলীয় ওপেনে স্ট্রেট সেটে ৬-০, ৬-২, ৬-২ জয়ের পরে নোভাক জোকোভিচ।—ছবি এএফপি।
এই না হলে বিশ্বের এক নম্বর! শুক্রবার নোভাক জোকোভিচ যে দাপট দেখিয়ে অস্ট্রেলীয় ওপেনের ফাইনালে উঠলেন, ভাবা যায় না। অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন লুকাস পুইকে হারিয়ে ফাইনালে জোকোভিচই উঠছেন, কিন্তু সেটা এত অনায়াসে আসবে ভাবিনি।
গোটা ম্যাচে মাত্র পাঁচটা আনফোর্সড এরর (অনিচ্ছাকৃত ভুল) করেছেন জোকোভিচ। তিন সেটের ম্যাচেও যা অকল্পনীয়! তবে এটাও বলব, জোকোভিচের বিরুদ্ধে কে খেলছিলেন সেটাও দেখতে হবে। এমন একটা ছেলে যাঁর কি না এটাই প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম সেমিফাইনাল। তাই ফরাসি তরুণ খুব চাপে ছিলেন, দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। পাঁচটা গ্র্যান্ড স্ল্যামে এটাই পুইয়ের সেরা ফল। হয়তো প্রতিযোগিতায় এত দূর আসার পথে মানসিক ভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। তা ছাড়া মেলবোর্নে এর আগে নোভাকের মতো দুরন্ত প্রতিপক্ষের সামনে কিন্তু তিনি পড়েননি। এত বড় মাপের ম্যাচের চাপ সামলানোর অভিজ্ঞতাও ছিল না। সেটাই ওঁর বিপক্ষে গিয়েছে।
টিভিতে ম্যাচটা দেখতে দেখতে এক সময় বুঝতে পারছিলাম না সেমিফাইনাল না প্রথম, দ্বিতীয় রাউন্ডের কোনও ম্যাচ দেখছি। দেড় ঘণ্টাও লাগল না জোকোভিচের জিততে। স্কোর ৬-০, ৬-২, ৬-২। রড লেভার এরিনায় অনেকে দর্শকাসনে গুছিয়ে বসতে না বসতেই ৫-০ এগিয়ে গিয়েছিলেন জোকোভিচ। একেবারে ইঞ্চি মাপা শটে ২৮ নম্বর বাছাইকে বিশেষত কোণাকুনি আক্রমণ করে গিয়েছেন তিনি। সাত বার প্রতিপক্ষের সার্ভিস ভেঙেছেন কিন্তু কখনও মনে হয়নি প্রতিপক্ষ ওঁর সার্ভিস ভেঙে দিতে পারেন।
এ বার সেই বহু প্রতীক্ষিত ফাইনাল! জোকোভিচ বনাম নাদাল। সাত বছর আগে এই অস্ট্রেলীয় ওপেনেই দু’জনের মহাকাব্যিক পাঁচ ঘণ্টা ৫৩ মিনিটের ফাইনালের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। এ বারও ঠিক সে রকমই দ্বৈরথের অপেক্ষায় টেনিস বিশ্ব। মঞ্চটাও তৈরি। দু’জনেই সেরা ছন্দে রয়েছেন। অনেকে অবশ্য জোকোভিচকেই এগিয়ে রাখছেন এই লড়াইয়ে। যে রকম ২০১২-র দ্বৈরথে জোকোভিচ জিতেছিলেন।
পরিসংখ্যানেও দেখছি মুখোমুখি লড়াইয়ে ২৭-২৫ এগিয়ে জোকোভিচ। তবে আমার বাজি কিন্তু এখনও নাদালই। আগের লেখাতেও তা বলেছি। সেমিফাইনালে জোকোভিচ যা খেলেছেন সে রকম কিন্তু রোজ খেলা যায় না। শুক্রবারের ম্যাচটার আগে কিন্তু অনেকেই নাদালকেই এগিয়ে রেখেছিলেন ফাইনালে। আমার মনে হয়, পুই যে ভাবে জোকোভিচকে দাপট দেখাতে দিয়েছেন, নাদাল সেই সুযোগটাই দেবেন না। উনি জোকোভিচের খেলা খুব ভাল করে জানেন। আগেও বলেছি জোকোভিচ কিন্তু নাদালের চেয়ে এক দিন কম বিশ্রাম পাচ্ছেন। যার জন্য কিছুটা হলেও সুবিধে পাবেন নাদাল।
দু’জনেই দুরন্ত অ্যাথলিট। চার ঘণ্টা, পাঁচ ঘণ্টা একই ভাবে খেলতে পারেন। অবশ্য এ বার ফাইনালটা পাঁচ-ছ’ঘণ্টা চলার সম্ভাবনা কম। কারণ অস্ট্রেলীয় ওপেনে ‘সুপার টাইব্রেক’ নামে নতুন নিয়ম চালু হয়ে গিয়েছে। যে নিয়মে পঞ্চম সেটে ৬-৬ গেমে চলে এলে ১০ পয়েন্টের টাইব্রেক হবে। টাইব্রেক জিততে হলে প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে দু’পয়েন্টে এগিয়ে থাকতে হবে। তবে যদি ১০-১০ পয়েন্ট হয়ে যায়, তা হলে সেট জিততে ১২-১০ করতে হবে।
অনেকেই প্রশ্ন করছেন, এই নতুন নিয়মে কে বেশি সুবিধে পাবেন? নোভাক না নাদাল? কে কোন স্ট্র্যাটেজিতে খেলতে পারেন? তাঁদের বলি, দু’জনেই যেহেতু পরস্পরকে কোর্টে খুব ভাল করে জানেন, তাই আমার মনে হয় নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটাই খেলতে চাইবেন রবিবারের ফাইনালেও।
নোভাককে বলা হয় ‘কাউন্টার পাঞ্চার।’ ওঁর রক্ষণ দুরন্ত। তার সঙ্গে বড় গুণ হল, রক্ষণাত্মক শটকেও আক্রমণে বদলে দিতে পারেন। তবে নাদালের ফোরহ্যান্ডও অনেক উন্নত হয়েছে। তাই ফাইনালে ফোরহ্যান্ড যদি ঠিকঠাক জায়গায় রাখতে পারেন তা হলে নাদালই এগিয়ে থাকবেন।
উফ! রবিবার দুপুরে ফাইনালটার জন্য আর তর সইছে না!