India

‘নেকড়ে’ দলের হামলায় বেসামাল পেনরা

হয়তো সোমবারই মেলবোর্নে আমরা একটা অসাধারণ জয় দেখে নিতে পারতাম, যদি প্যাট কামিন্সের ওই ক্যাচটা ঋষভ পন্থ নিয়ে নিত

Advertisement

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ ০৫:২৮
Share:

মোক্ষম: স্টিভ স্মিথের উইকেট নিয়ে অধিনায়ক রাহানে, পুজারার সঙ্গে উচ্ছ্বসিত বুমরা। সোমবার মেলবোর্নে দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় দিনে। গেটি ইমেজেস

আকাশটা কত কাছে। তৃতীয় দিনের শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ছয় উইকেটে দু’রান! হাতে দু’দিন সময়। আকাশটা এখন শুধু ছোঁয়ার অপেক্ষা।

Advertisement

হয়তো সোমবারই মেলবোর্নে আমরা একটা অসাধারণ জয় দেখে নিতে পারতাম, যদি প্যাট কামিন্সের ওই ক্যাচটা ঋষভ পন্থ নিয়ে নিত! দীর্ঘদিন কিপিং করেছি বলে জানি, ক্যাচটা খুব কঠিন ছিল না। কিপারদের একটা ব্যাপার মাথায় রাখতে হয়। স্পিনারদের বল পিচ পড়ার পরে বাউন্স হওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে উঠে দাঁড়াতে হয় কিপারদের। আগে বা পরে হলে হিসেবে গোলমাল হয়ে যাবে। ঋষভ সেকেন্ডের ভগ্নাংশ আগে উঠে দাঁড়িয়েছিল। যার ফলে অশ্বিনের বলটা কামিন্সের ব্যাটে লেগে গ্লাভসের ঠিক জায়গায় বসল না। ওই সময় স্কোর ছিল ছয় উইকেটে ১২১। ভারতের থেকে প্রথম ইনিংসে ১৩১ রানে পিছিয়ে থাকা অস্ট্রেলিয়া তখন তিন দিনেই হারের ভ্রুকুটি দেখছে। কে জানে, ওই ক্যাচটা ধরে নিলে হয়তো এ দিনই ঐতিহাসিক জয়ের সাক্ষী থেকে যেতাম আমরা। ঋষভ পরে গিয়ে ‘সরি’ও বলল অশ্বিনকে। কিন্তু লাভ কী।

এই একটা ঘটনা বাদ দিলে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত নিখুঁত ক্রিকেট খেলেছে। মনে রাখতে হবে, শুরুতে একটা স্বপ্নের ডেলিভারিতে জো বার্নসকে ফিরিয়ে দেওয়ার পরে চোট পেয়ে উঠে যায় উমেশ যাদব। ফলে অজিঙ্ক রাহানেকে চার বোলারে খেলতে হল বেশির ভাগ সময়। এখানেই অধিনায়ক রাহানের কৃতিত্ব। ও চার জনকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দারুণ ভাবে আক্রমণে রাখল। কখনও চাপটা আলগা হতে দেয়নি।

Advertisement

অস্ট্রেলিয়ার দুটো উইকেটের পিছনে রাহানের ক্রিকেট মস্তিষ্ক কাজ করেছে। প্রথমটা ট্রাভিস হেড। ব্যাট করতে নামার পর থেকেই অফস্টাম্পের বাইরের বল কাট করার একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছিল হেডের মধ্যে। রাহানেও সেটা লক্ষ্য করে থাকবে। কয়েকটা ওভার দেখার পরে ও দেখলাম মহম্মদ সিরাজের হাতে বল তুলে দিল আর দ্বিতীয় স্লিপ নিয়ে এল। বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানদের ক্ষেত্রে সিরাজ বলটাকে বাইরে নিয়ে যায় দারুণ ভাবে। প্রথম ইনিংসের পরে অস্ট্রেলিয়ার মার্নাস লাবুশেনও একই কথা বলেছিল। সিরাজের বলটা সামান্য মুভ করে বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার মুখে হাফ কাট হাফ ড্রাইভ গোছের একটা শট খেলল হেড। বল চলে গেল দ্বিতীয় স্লিপে দাঁড়ানো মায়াঙ্ক আগরওয়ালের হাতে।

দ্বিতীয়টা, অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক টিম পেনের আউটের ক্ষেত্রে ডিআরএস নেওয়া। রবীন্দ্র জাডেজার বলে আম্পায়ার কট বিহাইন্ডের আবেদন নাকচ করার পরে কারও সঙ্গে কথা না বলেই সোজা তৃতীয় আম্পায়ারের সাহায্য চায় রাহানে। হটস্পটে কিছু দেখায়নি। কিন্তু স্নিকোমিটার বোঝায়, বল ব্যাটে লেগেছে। এই আউটটা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। কিন্তু আমি বলব, প্রযুক্তির সাহায্য যখন নেওয়া হচ্ছে তখন প্রযুক্তির রায় মেনে নিতেই হবে।

ভারতীয় বোলারদের দেখে আমার নেকড়ের দলের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। নেকড়ে যেমন দল বেঁধে শিকার করে, ভারতীয় বোলাররাও এ দিন তাই করেছে। জাডেজা দুটো, বাকি চার বোলার একটা করে। জাডেজা হল একটা পরিপূর্ণ প্যাকেজ। ব্যাটে দুর্দান্ত হাফসেঞ্চুরি করল। রাহানের সঙ্গে সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ করে ম্যাচের রাশ হাতে রেখে দিল। আর বুদ্ধি করে উইকেট তুলল। মাত্র চার ওভার করে উঠে যাওয়ার আগে উমেশ ম্যাচের সেরা বলে অস্ট্রেলীয় ওপেনারকে ফিরিয়ে দেয়। অফস্টাম্পের উপরে পড়ে একটু দেরিতে সুইং করে বেরিয়ে যাওয়ার মুখে বার্নসের ব্যাটে চুমু খেয়ে চলে যায় উমেশের ডেলিভারিটা। ময়দানে একটা কথা আছে— ‘উপরে বল করো, বল চরে খাবে।’ অথার্ৎ, ব্যাটের কাছে বলটা রাখো, ব্যাটসম্যান ভুল করবেই। সেটাই হল।

টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে বলা হচ্ছিল, আগের বার ডেভিড ওয়ার্নার-স্টিভ স্মিথ ছিল না বলে ভারত সহজেই জিতেছিল। এ বার ওয়ার্নার এখনও খেলেনি ঠিকই, কিন্তু স্মিথ তো খেলছে! কোনও ফারাকই তো গড়তে পারল না। চার ইনিংস মিলিয়ে ওর রান ১০! ভারত স্মিথকে আউট করছে ওর শক্তিশালী জায়গায় বল করে। অর্থাৎ লেগস্টাম্প। অফস্টাম্পে ‘শাফল’ করে অনসাইডে শট খেলে স্মিথ। প্রথম ইনিংসে অশ্বিনের আর দ্বিতীয় ইনিংসে বুমরার বল লেগস্টাম্প লাইনেই ছিল। এ দিন বুমরার বলটা যখন প্যাডে লেগে লেগস্টাম্প ছুঁয়ে বেলটা ফেলে দিল, তখনও স্মিথ বুঝতে পারেনি ও আউট হয়েছে। রান নিতে দৌড়েছিল!

দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার রান ছয় উইকেটে ১৩৩। এগিয়ে দু’রানে। দেখতে হবে, অস্ট্রেলিয়ার ‘লিড’ যেন একশোর উপরে কিছুতেই না যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement