লিয়ঁ ৪-৭৫। ছবি: এএফপি।
দু’টো দিন। ছ’টা সেশন। বৃষ্টির পূর্বাভাস এবং চারশো রান।
মাইকেল ক্লার্কের অস্ট্রেলিয়াকে যদি অ্যাসেজ মহাযুদ্ধে ‘ওয়ান নিল’ করতে হয়, তা হলে তাদের সামনে এই ক্যালকুলাসটাই পড়ে থাকছে।
রাতের দিকে নেট খুঁজে দেখা গেল, ব্রিটিশ মিডিয়া ইতিমধ্যে নেমে পড়েছে অ্যালিস্টার কুকের টিমকে একহাত নিতে! বিলেতের সাংবাদিকদের মনে হচ্ছে নিয়ন্ত্রিত আগ্রাসন আর অস্থিরতার মধ্যের তফাতের কাঁটাতারটা খুব সূক্ষ্ম হয়, যা কুকের ইংল্যান্ড একেবারেই বুঝে উঠতে পারেনি। ম্যাচ যেখানে পুরোপুরি রিমোট কন্ট্রোলে চলে এসেছে, সেখানে অহেতুক তাড়াহুড়ো করে বিপক্ষকে প্রত্যাবর্তনের ন্যূনতম সুযোগটাও বা দেওয়া কেন? ২০৭-৪ থেকে ২৪৫-৮ হয়ে যাওয়াটা মোটেও বুদ্ধিমানের উদাহরণ নয়। লিড যতই শেষ পর্যন্ত চারশোর উপরে থাকুক, যতই অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট জয়ের সম্ভাবনাকে খাদের দিকে ঠেলে দেওয়া যাক। একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার মঞ্চ ছিল, ইংল্যান্ড সেটা ফেলে এসেছে।
মজার হল যে টার্গেটটা অস্ট্রেলিয়ার সামনে শুক্রবার ছুড়ে দেওয়া হল, সেটা তুলতে পারলে রেকর্ড হবে। ৪১২ আগে ওঠেনি, আর চতুর্থ ইনিংসে সেটা তোলা অসম্ভব না হলেও কঠিন কাজ। পিচকেও সহজ দেখাচ্ছে না। তার উপর নাথন লিয়ঁ তৃতীয় দিনে যা করে গেলেন, মইন আলির তাতে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে যাওয়া উচিত। উইম্বলডনের ভাষায় সব দিক থেকেই তো অ্যাডভান্টেজ ইংল্যান্ড!
দিনের শেষটা বাদ দিলে কার্ডিফের তৃতীয় দিনের বাকিটাও তাই। ২৬৪-৫ স্কোরে শুরু করেছিল অস্ট্রেলিয়া, মাত্র ৩০৮-এ শেষ হয়ে গেল। পনেরো ওভারও টিকতে পারেনি জেমস অ্যান্ডারসনদের দাপুটে বোলিংয়ে। অ্যান্ডারসন নিজে শেষ করলেন তিন উইকেট নিয়ে। দু’টো করে স্টুয়ার্ট ব্রড, মইন আলি আর মার্ক উড। মাইকেল ক্লার্কের অবস্থা তখন বেশ সঙ্গীনই বলা চলে। লাঞ্চের আগে প্রতিপক্ষ দ্বিতীয় বার ব্যাট করতে নেমে পড়ছে, হাতে আড়াইটে দিন আর ১২২ রানের লিডের কুশন— আতঙ্ক যে কোনও অধিনায়কেরই হবে। এবং অস্ট্রেলিয়ার বোলিং-বিশৃঙ্খলার সৌজন্য চা বিরতির আগেই লিডটা চলে গেল ২৭৩-এ। ইয়ান বেল আরও যন্ত্রণাটা বাড়াতে শুরু করলেন তার পর। ইংল্যান্ডে শেষ অ্যাসেজে তিনটে সেঞ্চুরি ছিল বেলের। এ দিন গোড়াতেই যে ভাবে মিচেল স্টার্ককে বাউন্ডারির পর বাউন্ডারি মেরে শুরু করেছিলেন, তাতে মনে হবে আরও একটা আসছে। এমনকী লিঁয়, যিনি কি না শুক্রবারের সফলতম অস্ট্রেলীয় বোলার (৪-৭৫), তিনি পর্যন্ত সুবিধে করতে পারেননি বেলের সামনে।
অস্ট্রেলিয়ার ভাগ্য ভাল, বেল সেঞ্চুরি পর্যন্ত যাননি। ষাটেই আটকে গেলেন। জো রুটের স্কোরও বেলের মতোই, কাকতালীয় ভাবে এক। ৮৯ বলে ৬০। কিন্তু তার পরেও ইংল্যান্ডের শেষ ছ’টা উইকেট চলে গেল মাত্র ৮২ রানে। লিয়ঁ চারটে তো নিলেনই, মিচেল জনসন, জশ হ্যাজেলউড, মিচেল স্টার্কও দু’টো করে তুলে নিয়ে গেলেন। কিন্তু তবু অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচে সুবিধেজনক অবস্থায় মোটেও রাখা গেল না। কারণ ওই পাহাড়প্রমাণ টার্গেট। যা দেখে ব্রিটিশ মিডিয়া অস্ট্রেলীয় ব্যাটিংকে যথাযথ সম্মান দেখিয়েও একটা কথা বলছে। বলছে এতটা এসেও যদি না জিততে পারে ইংল্যান্ড, ক্রিকেটাররা নিজেরা নিজেদের ক্ষমা করতে পারবেন তো?