নজরে: আকাশছোঁয়া চাহিদা বিরাট কোহালিদের ম্যাচের। ফাইল চিত্র
মাঠের মধ্যে বিরাট কোহালিদের সাফল্য এখন লক্ষ্মীলাভের দিক থেকেও সমস্ত পুরনো রেকর্ড ভেঙে দেওয়ার স্বপ্ন দেখাতে শুরু করে দিয়েছে। ভারতীয় ক্রিকেটের টিভি এবং ডিজিটাল সম্প্রচার স্বত্ব ঘিরে আকাশছোঁয়া সব দর হাঁকাহাঁকি শুরু হয়েছে। ‘বিলিয়ন ডলার’ অর্থাৎ একশো কোটিতে স্বত্ব বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
এই প্রথম ঐতিহাসিক ভাবে ই-অকশান হচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেটের স্বত্ব বিক্রি করার জন্য। ২০১৮ থেকে ২০২৩— পাঁচ বছরের জন্য দেশের মাটিতে সমস্ত ধরনের ক্রিকেটের জন্য টিভি এবং ডিজিটাল স্বত্ব বিক্রি করা হচ্ছে ই-অকশনের মাধ্যমে। প্রথম দু’দিনের নিলামের শেষে দেখা যাচ্ছে একশো কোটি ডলারের দিকে এগোচ্ছে স্বত্বের দর। বুধবার সন্ধে ছ’টার সময় স্বত্বের দর পৌঁছে গিয়েছে ভারতীয় মুদ্রায় ৬০৩২.৫০ কোটিতে (প্রায় ৯২৫ মিলিয়ন ডলার)। বৃহস্পতিবার সকালে এগারোটায় আবার দর হাঁকাহাঁকি শুরু।
এখনও চূড়ান্ত মূল্য ঠিক হওয়া বাকি। সেটা জানা যাবে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে লড়াই শেষ হয়ে সর্বোচ্চ দর ঠিক হওয়ার পরেই। তবে বুধবার সন্ধে পর্যন্ত যা হিসেবনিকেশ পাওয়া গিয়েছে, তাতেই অতীতের সব মূল্য তো পিছিয়ে পড়ছেই, বিশ্বের অনেক খেলার সঙ্গেও তুলনা শুরু হয়ে গিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটের। বুধবার পর্যন্ত যা হিসেব, নতুন স্বত্ব অনুসারে ভারতের একটি ক্রিকেট ম্যাচের দর ৫৯ কোটি, যা বিস্ময়কর ভাবে আইপিএলের প্রত্যেক ম্যাচের দরের চেয়েও বেশি। গত বছরের সেপ্টেম্বরেই আইপিএলের নতুন মিডিয়া স্বত্ব (টিভি এবং ডিজিটাল) বিক্রি হয়েছে। তাতে আইপিএলের প্রত্যেক ম্যাচের দর দাঁড়াচ্ছে ৫৪.৫ কোটি। সাধারণ ধারণা হচ্ছে, ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টির জনপ্রিয়তা সব চেয়ে বেশি এবং লোকে ভারতের টেস্ট বা সীমিত ওভারের ক্রিকেটের চেয়েও বেশি করে দেখে আইপিএল। সে দিক দিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন স্বত্বের জন্য এই আকাশছোঁয়া দর ওঠাটা বেশ চমকপ্রদ।
বিরাট কোহালি এবং রবি শাস্ত্রী জমানায় ভারতীয় ক্রিকেটে যে সাফল্যের জোয়ার এসেছে, সেটাকেই এই আকাশছোঁয়া দর ওঠার কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। ভারতীয় বোর্ডের অন্দরমহলে এখন আর কর্তাদের তেমন অস্তিত্ব নেই। সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্স (সিওএ) সমস্ত ব্যাপারেই শেষ কথা বলছে। টিভি এবং ডিজিটাল স্বত্বের নিলামও বিনোদ রাই-দের পরিচালনায় হচ্ছে, যা সরেজমিনে দেখছেন বোর্ডের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার (সিইও) রাহুল জোহরি।
জরুরি প্রশ্নের উত্তর
ই-অকশন কী
• এই ধরনের নিলামে আগ্রহী সংস্থারা অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে দর হাঁকেন। আগে বোর্ডের স্বত্ব বিক্রির সময় খামে বন্ধ করা দরপত্র জমা দেওয়া হতো। সর্বোচ্চ দর হাঁকা সংস্থাকে জিতে নিল স্বত্বের অধিকার।
কেন ই-অকশন করছে বোর্ড?
• বন্ধ খামে জমা দেওয়ার প্রক্রিয়ার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। সমস্ত প্রশ্নের ঊর্ধ্বে থাকার জন্য বিচারপতি লোঢা তাঁদের কমিটির রিপোর্টে ই-অকশন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। সেই পরামর্শ মেনেই সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত সিওএ এই ধরনের নিলাম করছে।
কারা আছে দৌড়ে?
• অন্তত ছ’টি সংস্থা আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাদের মধ্যে ক্রিকেট সম্প্রচারকারী পরিচিত চ্যানেলরা তো আছেই, ফেসবুক এবং গুগ্ল-ও দরপত্র জমা দিয়েছে।
ক’বছরের জন্য স্বত্ব বিক্রি হবে?
• পাঁচ বছরের জন্য নতুন স্বত্ব বিক্রি করা হবে। ১৫ এপ্রিল, ২০১৮ থেকে ৩১ মার্চ, ২০২৩ পর্যন্ত।
কী কী বিভাগে স্বত্ব বিক্রি হবে?
• তিনটি বিভাগ থাকছে। এক) ভারতে ম্যাচ সম্প্রচারের টিভি স্বত্ব এবং বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল স্বত্ব, দুই) ভারতীয় উপমহাদেশের জন্য ডিজিটাল স্বত্ব, তিন) বিশ্বব্যাপী সংযুক্ত স্বত্ব, যার মধ্যে থাকছে ভারতীয় উপমহাদেশে সম্প্রচারের স্বত্ব, বাকি বিশ্বে সম্প্রচারের স্বত্ব এবং বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল স্বত্ব।
ওয়াকিবহাল মহলের বিশ্লেষণ, অনেক পেশাদারি ভঙ্গিতে ভারতীয় বোর্ডের বাণিজ্যিক দিকটি সামলানো হচ্ছে। তার চেয়েও বড় কথা, কোহালির নেতৃত্বে ভারতীয় দল যে রকম ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলছে, যে ভাবে দক্ষিণ আফ্রিকাতে গিয়েও তাঁরা দাপট দেখিয়েছেন, সেটাই বাণিজ্য মহলে আরও উৎসাহ বাড়িয়ে দিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট সিরিজ হারলে কোহালিরা জোহানেসবার্গে বিপজ্জনক পিচে সাহসী ক্রিকেট খেলে টেস্ট জিতেছেন। তার পরে ওয়ান ডে এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছেন। শ্রীলঙ্কায় টি-টোয়েন্টি নিদাহাস ট্রফি জিতেছেন। আইসিসি-র বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে এখন টেস্ট এবং ওয়ান ডে দু’টোতেই এক নম্বরে ভারত। একমাত্র টি-টোয়েন্টিতে তারা শীর্ষে নেই, তবে খুব কম পয়েন্টের ব্যবধানে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এর আগের বারে ভারতীয় ক্রিকেটের মিডিয়া স্বত্ব বিক্রি হয়েছিল ৩৮৫১ কোটি টাকায় (প্রায় ৭৫০ মিলিয়ন ডলার)। তার চেয়ে প্রথম দু’দিনেই প্রায় ৫৬.৬ শতাংশ বেশি দর উঠে গিয়েছে।