গ্যালারিতে নির্বাসিত ফিকরু যখন দর্শক। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
ঘরের মাঠই এখন বিভীষণ আটলেটিকো দে কলকাতার!
তাদের জয়ের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে যুবভারতীর কৃত্রিম ঘাসের মাঠ। এমনও মনে করছেন আটলেটিকো ফুটবলাররা।
পরপর দুটো হোম ম্যাচ ড্র করলেন তারা। ঘরের মাঠে কেন সাফল্য পাচ্ছে না টিম? আর্নাল থেকে অর্ণব প্রত্যেকেই দায়ী করছেন যুবভারতীর মাঠকে। ম্যাচ শেষে আর্নাল যেমন বলে দিলেন, “এ ধরনের কৃত্রিম ঘাসের মাঠে আমরা খেলতে অভ্যস্ত নই। দু’টো অ্যাওয়ে ম্যাচ ঘাসের মাঠে খেলেছি। কোনও সমস্যা হয়নি। জিতেওছি। কিন্তু এখানে কৃত্রিম ঘাসের জন্যই সমস্যা হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, এ রকম সারফেসে চোট পাওয়ার বিরাট সম্ভাবনা। যে কোনও সময় পেশিতে চোট লাগতে পারে।”
সারা বছর যুবভারতীতে খেলতে অভ্যস্ত অর্ণব মণ্ডলও বললেন, “এই মাঠে বরাবরই সমস্যা হয়। ফলে যারা এই মাঠে খেলতে অভ্যস্ত নয়, তাদের কাছে এখানে খেলা আরও বড় সমস্যা।” শুভাশিস রায়চৌধুরীর গলাতেও একই সুর। “এই মাঠ এখন ফুটবলের পক্ষেই অযোগ্য। পরিচর্যার অভাবে খুব খারাপ হাল হয়েছে। বাউন্স ঠিক নেই। কৃত্রিম ঘাস গুটিয়ে শক্ত হয়ে গিয়েছে। যখন তখন চোট লাগছে ফুটবলারদের।”
বছর পাঁচেক আগে সল্টলেক স্টেডিয়ামে কৃত্রিম ঘাসের টার্ফ বসানো হয়েছিল। কিন্তু বসানোর পর থেকে আর সে ভাবে পরিচর্যা হয়নি। ২০১১-এ মেসির আর্জেন্তিনা ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলতে এসেছিল যুবভারতীতে। সে সময় একবার ঢাক-ঢোল পিটিয়ে মাঠের পরিচর্যা হয়েছিল। তবে সেটাই প্রথম আর শেষ। আইএসএলে টিমের ম্যানেজমেন্ট এখন মাঠের পরিচর্যা করে হাল ফেরানোর চেষ্টা করছে ঠিকই, তবে মাঠের দশা এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছে যে, এতে বিশেষ লাভ হচ্ছে না।
যুবভারতীতে খেলতে গিয়ে ফুটবলারদের রোজ কিছু না কিছু সমস্যায় পড়তেই হচ্ছে।
এক) কৃত্রিম ঘাসের মাঠের বাউন্স ধরে রাখতে যে রবার কুচিগুলো রয়েছে, পরিচর্যার অভাবে সেগুলো সরে যাওয়ায় মাঠের অনেক জায়গা উঁচু-নিচু হয়ে গিয়েছে।
দুই) নিয়মিত জল না দেওয়ায় কৃত্রিম ঘাসের সারফেস গুটিয়ে শক্ত হয়ে গিয়েছে। খেলার সময় ফুটবলারদের পেশিতে মারাত্মক জোর পড়ছে। নিটফল, চোট পাচ্ছেন ফুটবলাররা। লুই গার্সিয়ার পেশির চোট সাত দিনেও সারেনি।
তিন) মাঠ অসমান হওয়ায় ফুটবলাররা যখন হেড করার জন্য বা গোলকিপাররা বলের জন্য লাফাচ্ছেন, তখন মাটিতে তাদের অবতরণের সময় গোড়ালির চোটের প্রবণতা বাড়ছে। শনিবারই প্র্যাকটিসে এ ধরনের চোট পেয়ে কেরল ব্লাস্টার্সের মাইকেল চোপড়া দু’সপ্তাহের জন্য মাঠের বাইরে ছিটকে গিয়েছেন।
চার) বাউন্সের সমস্যা থাকায় বল ধরে খেলা, পাসিং ফুটবল খেলতেও সমস্যা হচ্ছে।
কেরল ব্লাস্টার্সের ম্যানেজার-কাম- মার্কি ফুটবলার, ইংরেজ বিশ্বকাপার গোলকিপার ডেভিড জেমস বললেন, “এ রকম টার্ফে আমি বোধহয় সেই ষোলো বছর বয়সে শেষ খেলেছি। এ ধরনের মাঠে খেলা সমস্যা।”
আইএসএল যে আট মাঠে চলছে, একমাত্র যুবভারতী ছাড়া বাকি সাত স্টেডিয়ামেই ন্যাচারাল টার্ফ। স্বভাবতই বাকি দলগুলো যখন ঘরের মাঠের সুবিধে পাচ্ছে, তখন কলকাতার দল অ্যাওয়ে ম্যাচে জয় পেলেও আটকে যাচ্ছে নিজেদের ঘরের মাঠেই। অথচ এই মাঠে ফুটবলের উপচে পড়া আবেগ রয়েছে।
কিন্তু আসল জায়গাই তো এখন কাঁটা যুবভারতীর কৃত্রিম ঘাসের মাঠই আটলেটিকো দে কলকাতার কাছে যন্ত্রণা। ঘরের শত্রু বিভীষণ!