সাংবাদিক সম্মেলনে হিউম। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
আন্তোনিও লোপেজ হাবাস আর জোসে মলিনার কোচিং স্টাইলের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পান না তিনি।
কিন্তু হাবাস জমানার সেই সোনার স্ট্রাইকার মলিনার অধীনে এসে নিজের ফর্মে এখনও ফিরতে পারেননি!
যাঁর উপর ভরসা করে মার্কি ছাড়াই হাবাস গটগট করতে করতে সেমিফাইনাল উঠেছিলেন, সেই প্রতিভার ছিটেফোঁটাও এখনও ভোগ করতে পারছেন না মলিনা। তাতে কী? গত মরসুমের শুরুটাও তো তাঁর হয়েছিল ব্যর্থতায়। কিন্তু শেষটা হয়েছিল এগারো গোলে!
তিনি— আটলেটিকো দে কলকাতার কানাডিয়ান তারকা ইয়ান হিউম।
মঙ্গলবার রাজারহাটের এক পাঁচতারা হোটেলে বসে হিউম বলছিলেন, ‘‘গত বার আমি সাত নম্বর ম্যাচে এসে প্রথম গোল করেছিলাম। এ বার তো সেখানে চেন্নাইয়ানের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচেই গোল আছে। জানি আমার ফর্ম এখনও ভাল নয়। খুব খারাপ খেলেছি মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে। কোচ ঠিকই করেছিল আমায় তুলে নিয়ে। আস্তে আস্তে আবার ফর্ম পাচ্ছি। খুব তাড়াতাড়ি আবার গোলে ফিরব।’’
সত্যিই তো, গতবারের সেই হিউমের হলটা কী? স্কটিশজাত গোলমেশিনের মুখ তখন গম্ভীর। যিনি দাবি করছেন, স্ট্রাইকারদের সব সময় বল লাগে গোল করার জন্য। ‘‘আমাদের আরও বেশি সুযোগ তৈরি করতে হবে। স্ট্রাইকারদেরও সুযোগ লাগে। সেটা একটু কম হয়ে যাচ্ছে,’’ বললেন হিউম।
হাবাসের সেই কঠোর শৃঙ্খলা থেকে নরমসরম মলিনা। তাতেও দুই কোচের মধ্যে কোনও পার্থক্য খুঁজে পাচ্ছেন না হিউম। এটিকে স্ট্রাইকারের বক্তব্য, ‘‘মলিনা আর হাবাস, দু’জনের কোচিং পদ্ধতিতে খুব বেশি পার্থক্য নেই। দু’জনেই জিততে ভালবাসে। তবে মানুষ হিসেবে হাবাস একটু বেশিই আগ্রাসী।’’ আটলেটিকোর প্রাক্তন কোচের অধীনে গোলের পর গোল করেছেন। তা হলে কি হাবাসকে মিস করছেন বলে ফর্মে ঘাটতি? ‘‘না একদমই মিস করছি না। সারা বিশ্বের প্রতিটা ক্লাবেই কোচ পাল্টায়। আমরা পেশাদার। মানিয়ে নিতে হবে।’’ আর মলিনার স্ট্র্যাটেজি? ‘‘বললাম তো দুই কোচ একদমই একই স্টাইলের। মলিনাও ভাল কোচ। আমরা এখনও একটাও ম্যাচও কিন্তু হারিনি।’’
অপরাজিত থাকলেও প্রথম চার ম্যাচে মাত্র একটা জয়, তিনটে ড্র। লিগ টেবলে চার নম্বরে। তার ওপর আবার মার্কি সমস্যায় আক্রান্ত আটলেটিকো। গত বার চোটের জন্য মাত্র এক ম্যাচ খেলেই আইএসএল শেষ হয়েছিল হেল্ডার পস্টিগার। এ বার দেড়খানা ম্যাচ খেলে সেই এক অবস্থা। কবে ফিরবেন পস্টিগা কেউ জানে না। হিউম বললেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক ভাবে গত বার পস্টিগা প্রথম ম্যাচের পরই চোট পেয়ে যায়। এ বারও চোটের জন্য বাইরে। কিন্তু আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি ফিরবে। চেন্নাই ম্যাচে আমাদের কম্বিনেশন ভাল ছিল। গতবার হেল্ডারকে ছেড়েও আমি, দ্যুতি সবাই দায়িত্ব নিয়েছিলাম। এ বারও তাই করতে হবে।’’
প্রথম দুই আইএসএল মানেই ছিল ঠাসা গ্যালারি। রবীন্দ্র সরোবরে দু’টো ম্যাচ হয়ে গেলেও উপচে পড়ছে না। বারো হাজারের গ্যালারিও ভরছে না। যুবভারতীর সেই আবেগই যেন তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না এ বার। প্রসঙ্গ উঠতে স্বভাবতই মুখে হতাশার ছাপ। হিউম বললেন, ‘‘ভেবেছিলাম রবিবার ম্যাচ যখন, গোটা স্টেডিয়াম ভরবে। কিন্তু সেটাও হল না। আমি কর্তাদের সঙ্গে এই ব্যাপারে কথা বলেছি। কিন্তু পরের বার বিশ্বকাপ আছে। তাই কিছু করার নেই। আশা করব রবীন্দ্র সরোবর গ্যালারিও ফুলহাউস হবে।’’
হিউম কলকাতার গোলমেশিন যেমন। তেমনই তরুণ তারকাদের মেন্টরও। অবিনাশ রুইদাস তো সেই কথাই মানছেন। সাংবাদিক সম্মেলনে হিউমের পাশে বসে হাসতে হাসতে অবিনাশ বললেন, ‘‘হিউম খুব সাহায্য করছে। আমি খুশি এ রকম একজন প্লেয়ারের সঙ্গে খেলতে পেরে।’’
আই এস এলের পর হিউম আই লিগ খেলার প্রস্তাব পেয়েছেন দু’টো ক্লাবের। কী ভাবছেন? প্রশ্ন শুনে বিরক্ত কলকাতার স্ট্রাইকার বললেন, ‘‘আমি পেশাদার। সব রাস্তাই খোলা। তবে এখন আমি শুধু আইএসএল নিয়েই ভাবছি।’’
দিল্লি ম্যাচের আগে এ দিন প্র্যাকটিস করে কলকাতা। দলের থেকে আলাদা হয়ে ফিজিওর সঙ্গে সময় কাটান পস্টিগা। নিজের মতো ওয়ার্ম আপও করেন। শনিবারের ম্যাচ সম্পর্কে কী ভাবছেন? হিউম বললেন, ‘‘দিল্লি ভাল দল। কিন্তু আমরাও তৈরি ঘরের মাঠে প্রথম ম্যাচ জিততে।’’