চমক: পাকিস্তান ম্যাচের পরে আকর্ষণের কেন্দ্রে কেদার। ফাইল চিত্র
তাঁর হাতে প্রথমে বলটা তুলে দিয়েছিলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। বছর দু’য়েক আগে ধর্মশালায়। নিউজিল্যান্ড সিরিজের নেট প্র্যাক্টিসে।এশিয়া কাপে পাকিস্তানের মতো মহা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তাঁর হাতে বলটা তুলে দিয়েছিলেন রোহিত শর্মা। দু’জনেই আশাতীত ফল পেলেন। ধোনি প্রথম পরিচয় করে দিয়েছিলেন এক বিচিত্র স্পিনারের সঙ্গে। রোহিত পেয়ে গেলেন এক ম্যাচ উইনারকে।কিন্তু কেদার যাদবের বোলিংয়ের বৈশিষ্ট্য কী? কেন এই অনিয়মিত অফস্পিনারকে খেলতে সমস্যায় পড়ছেন ব্যাটসম্যানেরা?
প্রশ্নটা রাখা হয়েছিল হরভজন সিংহের সামনে। ভারতীয় ক্রিকেটে হ্যাটট্রিক পাওয়া অন্যতম এই সফল বোলার বলছিলেন, ‘‘পাকিস্তান ম্যাচে আমি কেদার যাদবের বোলিং দেখেছি। ভাল বল করেছে। ওর সাফল্যের অন্যতম কারণ হল, ব্যাটসম্যানরা স্পিন হচ্ছে ভেবে খেলতে যাচ্ছে, কিন্তু দেখছে, স্পিন হচ্ছে না। এই কারণেই শটে গোলমাল হয়ে যাচ্ছে।’’
কেদার নিজেও স্পিন করানোর দিকে বিশেষ ঝোঁকেন না। ‘‘আমি স্টাম্প টু স্টাম্প বল করতে চাই। লক্ষ্য থাকে, বলটা যেন উইকেটের লাইনে থাকে। এ বার ব্যাটসম্যান যদি মারতে গিয়ে ফসকায়, তা হলে উইকেট আমার,’’ বুধবার রাতে বলছিলেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তিন উইকেট নেওয়া ভারতের জয়ের অন্যতম কান্ডারি।
কেদারের বোলিংয়ে সব চেয়ে বেশি নজরে পড়বে এই অফস্পিনারের সাইড আর্ম অ্যাকশন। অনেকটা লাসিথ মালিঙ্গার স্পিন-সংস্করণ বলা যায়। অনেকেই মনে করছেন, এই অদ্ভুত বোলিং অ্যাকশনের জন্য বাড়তি সুবিধে পেয়ে যাচ্ছেন কেদার। কথাটা কতটা ঠিক? এক জন অফস্পিনারকে নিয়ে মন্তব্য করার ব্যাপারে আর এক জন অফস্পিনারের চেয়ে যোগ্য আর কে হতে পারে? কেদারের বোলিংকে কাছ থেকে দেখা হরভজন বলছিলেন, ‘‘একটা সুবিধে তো আছেই। ও রকম সাইড আর্ম অ্যাকশনের জন্য বল সে রকম বাউন্স করে না। ভাল, বাউন্সি উইকেটেও ওর বল বেশি ওঠে না।’’ এতে ব্যাটসম্যান কতটা সমস্যায় পড়ে যায়? হরভজনের ব্যাখ্যা, ‘‘সমস্যা তো হয়ই। ও রকম নিচু বাউন্সের বলকে হিট করা খুব কঠিন। ব্যাটের সুইট স্পটে না লাগলে বেশি দূর যাবেই না।’’
যে কারণে দেখা যাচ্ছে কেদার কখনওই বেশি রান দিচ্ছেন না। এখনও পর্যন্ত ওয়ান ডে ক্রিকেটে ২৩ ইনিংসে ১৯ উইকেট নিয়েছেন। গড় ২৯.৫৩। ইকনমি ৪.৯। পাকিস্তান ম্যাচেও নয় ওভারে মাত্র ২৩ রান দিয়ে তুললেন তিন উইকেট। কিন্তু এ সবের পরেও নেটে যে তিনি বোলিং নিয়ে বেশি খাটছেন, এমন নয়। পাকিস্তান ম্যাচের পরে সাংবাদিকদের সামনে এসে কেদার বলে যান, ‘‘সত্যি বলছি, ম্যাচের আগে নেটে এসে দু’তিন ওভার শুধু হাত ঘোরাই। তার চেয়ে বেশি কিছু করি না। আমি মনে করি, যদি বোলার হতে বেশি চেষ্টা করি, তা হলে যা আছে, সেটাও হারাব।’’
কেদার আরও মনে করেন, ভারতীয় পেসাররা শুরুর দিকে ভাল বল করায় স্পিনারদের কাজটা সহজ হয়ে যায়। পাকিস্তান ম্যাচে যেমন হয়েছিল। ‘‘আমাদের পেসাররা শুরুর দিকে ব্যাটসম্যানদের চাপে ফেলে দিচ্ছে। রান উঠছে না বেশি। এর ফলে পরের দিকে ব্যাটসম্যানেরা রান তোলার চেষ্টায় মারতে যাচ্ছে। তাই আমাদের সামনেও সুযোগ আসছে উইকেট তোলার।’’
পাকিস্তান ম্যাচটা ভাল করে দেখেছেন হরভজন। ভাজ্জি মনে করেন, কেদারের সাফল্যের পিছনে মণীশ পাণ্ডের কিছুটা হলেও অবদান আছে। কেন এ রকম মনে করছেন তিনি? হরভজন বললেন, ‘‘মণীশ খুব ভাল একটা ক্যাচ (সরফরাজ আহমেদ) ধরে কেদারকে প্রথম উইকেটটা পেতে সাহায্য করে। এর পরেই আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল কেদারের।’’ তা হলে কেদারের তূণে কী কী অস্ত্র আছে বলে মনে করছেন? ‘‘অবশ্যই অ্যাকশনটা। বলে বেশি বাউন্স না-থাকাটা। আর এর সঙ্গে যোগ করুন নিখুঁত লাইন-লেংথে বল রাখতে পারার দক্ষতা। সব মিলিয়ে তাই কেদারকে মারাটা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ও ভালই বল করছে,’’ ব্যাখ্যা দিলেন ভারতের অন্যতম সেরা অফস্পিনার।
বোলার হিসেবে তাঁর উত্থানের জন্য ধোনিকে কৃতিত্ব দিচ্ছেন কেদার। বলছেন, ‘‘নিউজ়িল্যান্ড সিরিজে ধোনি যে দিন আমার হাতে বল তুলে দিয়েছিল, সে দিন থেকে আমার জীবন বদলে গিয়েছে। বল করার সময় ব্যাটসম্যান কী ভাবছে, সেটা বোঝার চেষ্টা করি।’’চোট পেয়ে এপ্রিল মাস থেকে মাঠের বাইরে ছিলেন। প্রত্যাবর্তনে এই সাফল্যের পিছনে নিজের ফিটনেসকেও কৃতিত্ব দিচ্ছেন কেদার। বলছেন, ‘‘অস্ত্রোপচার আর রিহ্যাবের পরে আমার ফিটনেস অনেক বেড়ে গিয়েছে। যার জন্য নিজেকে এক জন অন্য রকমের ক্রিকেটার মনে হচ্ছে।’’ যে ‘অন্য রকম’ ক্রিকেটারকে সামলাতে এখন হিমশিম খাচ্ছেন ব্যাটসম্যানরা।