ফাইল চিত্র।
হেডিংলেতে এমন বিপর্যয়ের পরেও কি বিরাট কোহালি পাঁচ বোলারে খেলার সিদ্ধান্ত বজায় রাখবে? তিন টেস্টে ভারতের ব্যাটিংয়ের ছবিটা কিন্তু পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। ওপেনারেরা সফল হলে দলের রান দু’শো পেরোবে। তারা কোনও কারণে ব্যর্থ হলে সেই বিপর্যয় সামলে ফিরে আসার কোনও উপায় নেই। বিশেষ করে, মাঝের সারির ব্যাটসম্যানদের উইকেটে দাঁড়িয়ে থেকে স্কোরবোর্ড সচল রাখার কোনও তাগিদই দেখতে পাওয়া গেল না।
মাত্র ৭৮ রানে শেষ হয়ে গিয়েছিল প্রথম ইনিংস। তৃতীয় দিন দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ভারত শেষ করেছিল ২১৫-২ স্কোরে। চতুর্থ দিন সকালে ভারত আট উইকেট হারাল ৬৩ রানে। দ্বিতীয় নতুন বলের সামনে আত্মসমর্পণ করল চেতেশ্বর পুজারা, বিরাট কোহালি, অজিঙ্ক রাহানে, ঋষভ পন্থরা। মাত্র ১৯.৩ ওভারেই শেষ সব লড়াই। ইংল্যান্ড সফরে সুনীল গাওস্কর, জি বিশ্বনাথ, দিলীপ বেঙ্গসরকরদের সঙ্গে আমিও ছিলাম। খুব কাছ থেকে ওদের ব্যাটিংয়ের ধরনটা দেখেছি। যতটা সম্ভব, ওরা সামনের পায়ে শট কম খেলত। বলের জন্য অপেক্ষা করত। চেষ্টা করত পয়েন্ট ও গালি অঞ্চল দিয়ে রান করার। সুইং ভাঙার পরে বলের উপরে ব্যাট নিয়ে আসত। ব্যাকফুটে বিশ্বনাথের মতো শক্তিশালী অনেকেই ছিল না। অথচ এই প্রজন্মের ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ব্যাকফুটে শট খেলার কোনও চেষ্টাই দেখতে পেলাম না। সত্যি বলতে, ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের আউট করার জন্য বাড়তি কোনও পরিকল্পনাই করতে হচ্ছে না ইংল্যান্ডকে। তিনটি স্লিপ রেখে শরীরের সামনে থেকে বল বাইরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তাতে একের পর এক খোঁচা দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরছে বিরাট, রাহানেরা। যে বলটি বাইরের দিকে সুইং করছে না, সেটা আছড়ে পড়ছে প্যাডে।
বুঝতে পারছি না, বাকি ব্যাটসম্যানেরা কি এক বারও ওপেনারদের দেখে কিছু শিখছে না? কে এল রাহুল এবং রোহিত শর্মা কত দেরিতে বলের উপরে ব্যাট নিয়ে আসছে। তার সুফলও পাচ্ছে, অথচ বিরাট, রাহানেরা ক্রিজ়ের বাইরে দাঁড়িয়ে বলকে ক্রমাগত তাড়া
করতে যাচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ায় এই উইকেটের বাইরে বেরিয়ে এসে ব্যাটিং করে সুফল পেয়েছিল বিরাট। ওকে দেখে এখন অনেকেই সেই পথে হাঁটতে চাইছে। কিন্তু সকলের পক্ষে তো সফল হওয়া সম্ভব নয়। ঋষভ তো আবার এতটাই ক্রিজ়ের বাইরে চলে যাচ্ছে যে আম্পায়ারকে পর্যন্ত সতর্ক করতে হচ্ছে এই বলে যে, ও উইকেটের বিপজ্জনক জায়গায় ঢুকে পড়ছে! একবার-দু’বার এ ধরনের ভুল হলে মানা যায়। কিন্তু প্রত্যেক ইনিংসে একই ভঙ্গিতে আউট হওয়ার অর্থ নিশ্চয়ই টেকনিকে সমস্যা আছে। যা দ্রুত শুধরে নিয়ে এগোনো উচিত। লর্ডসে রাহানে ম্যাচ বাঁচানো ইনিংস খেলেছে ঠিকই, হেডিংলেতে তুলনামূলক সহজ পিচে ও কেন বাইরের বলে ব্যাট বাড়িয়ে দেবে?
ওভালে রাহানের পরিবর্তে হনুমা বিহারীকে খেলানো যেতে পারে। সঙ্গে পাঁচ বোলারের পরিবর্তে তিন পেসার ও এক স্পিনার খেলানো হোক। ওভালে রবীন্দ্র জাডেজাকে খেলিয়ে কতটা সাহায্য পাওয়া যাবে, বলা যাচ্ছে না। ওর মতো স্পিনার ভাল ব্যাটিং উইকেটে ফায়দা তুলতে পারে না। সেখানে আর অশ্বিন অনেক বেশি ভয়ঙ্কর হতে পারে। হাতে বৈচিত্রও আছে। ব্যাট হাতেও সফল। হনুমাকে ব্যবহার করা যেতে পারে পঞ্চম বোলার হিসেবে। তাতে ব্যাটিং কিছুটা হলেও শক্তিশালী হবে। ইংল্যান্ডে কাউন্টি খেলার অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যেতে পারে।
ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বাজে আউট হয়েছে ঋষভ পন্থ। ওর ব্যাটিংয়ের মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না। দুই ইনিংসেই অলি রবিনসনের সপ্তম স্টাম্পের বল তাড়া করে উইকেট উপহার দিয়ে এল। তার উপরে দেখলাম জেমস অ্যান্ডারসনের প্রথম বলটাই ও উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে মারতে গেল! এটা যে কী ধরনের ব্যাটিং, তা আমার মাথায় ঢুকছে না। ঋদ্ধিমান সাহাকে সুযোগ দিয়ে কেন দেখা হচ্ছে না? ভুললে চলবে না টেস্টে ওর তিনটি সেঞ্চুরি আছে। ঋষভ-বন্দনা করতে গিয়ে ঋদ্ধিকে আমরা হারিয়ে ফেলছি না তো?