করুণ নায়ারের ট্রিপল সেঞ্চুরি আমাকে একটুও অবাক করেনি। কারণ আমি তো জানি, এই ছেলেটার ইতিহাস খুব ভাল। জানি, ওর মধ্যে বিগ ম্যাচ টেম্পারামেন্ট রয়েছে। বড় রান করার অভ্যেস রয়েছে।
ভাবতে পারেন, যে বছর রঞ্জিতে ওর অভিষেক হল, সে বছরই রঞ্জি ফাইনালে তিনশো করেছিল করুণ! শুধু তাই নয়, ছয় মেরে টিমকে ট্রফি জিতিয়েছে। পনেরো বছর যে ট্রফিটা কর্নাটকের অধরা ছিল। আবার এটাই ওর অভিষেক টেস্ট সিরিজ। আর সেখানেই কি না একেবারে তিনশো!
সোমবার সেঞ্চুরি করার পরে যে ভাবে খেলল করুণ, দেখে চোখ ভরে গিয়েছে। নিশ্চয়ই ওর মাথায় এই ব্যাপারটা ছিল যে, এর আগের দুটো টেস্টে রান পাইনি। এ বারও ব্যর্থ হলে আর টিমে রাখবে না আমাকে। সেই চাপ নিয়ে এই ইনিংস খেলার কৃতিত্ব কী, যারা মাঠে নামেনি তাদের বোঝানো কঠিন।
আর সেঞ্চুরিটা হয়ে যাওয়ার পর ক্রিকেট ম্যানুয়্যালে যে ক’টা শট রয়েছে, সব বোধহয় খেলেছে করুণ। দুর্দান্ত স্ট্রোক প্লেয়ার। বিশেষ করে ওর সুইপ শটগুলো দেখতে দারুণ লাগল। দুটো ইনিংসে রান না পেয়ে একেবারে তিনশো করে ফেলা— ইতিহাসে কত বার হয়েছে? তরুণ ক্রিকেটাররা স্বপ্ন দেখে দেশের হয়ে খেলার, দেশের হয়ে খেলে সেঞ্চুরি করার। কিন্তু প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিটা তিনশো হবে, এমন স্বপ্ন দেখার সাহস কি কারও থাকে? তাই আমার মনে হয়, করুণ স্বপ্নেরও উপরে চলে গিয়েছে।
করুণের সাফল্যের জন্য কিন্তু এক জনকে কৃতিত্ব দিতেই হবে— রাহুল দ্রাবিড়। যে নিজে নেপথ্যে থাকছে, আর চুপচাপ ভারতের সাপ্লাই লাইন মজবুত করে যাচ্ছে। রাহুল দ্রাবিড় আর করুণ নায়ার ব্যাটসম্যান হিসেবে আলাদা। করুণ মেরে খেলতে পারে, যেটা দ্রাবিড় খুব একটা করত না। কিন্তু করুণের টেম্পারামেন্টের মধ্যে স্পষ্ট দ্রাবিড়-ফ্যাক্টর দেখতে পাচ্ছি। এই যে বিপক্ষ বোলিংকে সুযোগ দেব না, ক্রিজ আঁকড়ে পড়ে থাকব, ক্রিজে অক্লান্ত খাটব, নিজের উইকেটটাকে ক্রমশ দুর্মূল্য করে তুলব, সেঞ্চুরি পেয়েও না থেমে আরও বড় স্কোরের দিকে এগবো— এগুলো তো দ্রাবিড়েরই উত্তরাধিকার।
ইন্ডিয়া ‘এ’ টিমের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিল করুণ। মাস দু’য়েকের সফরে দ্রাবিড়কে খুব কাছ থেকে দেখেছে ও, দ্রাবিড়ের ক্রিকেট-দর্শনটা নিজের মজ্জায় ঢুকিয়ে নেওয়ার সুযোগটাও পেয়েছে। আইপিএলেও যে দুটো দলে খেলেছে করুণ, কোচ আর মেন্টর হিসেবে দ্রাবিড়কে পেয়েছে। রাজস্থান রয়্যালসের পর দিল্লিতেও।
করুণ এ দিন যে টেম্পারামেন্টটা দেখাল, কেএল রাহুলের মধ্যেও কিন্তু সেটা আছে। এই ছেলেটাও দ্রাবিড়ের রাজ্যের। কঠোর পরিশ্রম, মানসিক ভাবে নিজেকে তৈরি রাখা, ক্রিকেটের প্রতি দায়বদ্ধতা, সম্ভবত দেশের সবচেয়ে সেরা ক্রিকেট স্কুল থেকে এগুলোর শিক্ষা পেয়ে এসেছে এই ছেলেগুলো।
দ্রাবিড় স্কুল অব ক্রিকেটের কথা বলছি।
ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস: ৪৭৭
ভারত প্রথম ইনিংস (আগের দিন ৩৯১-৪):
করুণ ন.আ. ৩০৩, বিজয় এলবিডব্লিউ ডসন ২৯, অশ্বিন ক বাটলার বো ব্রড ৬৭, জাডেজা ক বল বো ডসন ৫১, উমেশ ন.আ. ১, অতিরিক্ত ৭, মোট ৭৫৯-৭ ডিঃ। পতন: ১৫২, ১৮১, ২১১, ৩৭২, ৪৩৫, ৬১৬, ৭৫৪। বোলিং: ব্রড ২৭-৬-৮০-২, বল ২৩-২-৯৩-০, মইন ৪১-১-১৯০-১, স্টোকস ২০-২-৭৬-১, রশিদ ২৯.৪-১-১৫৩-১, ডসন ৪৩-৪-১২৯-২, রুট ২-০-১২-০, জেনিংস ৫-১-২০-০।
ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস:
কুক ন.আ. ৩, জেনিংস ন.আ. ৯, অতিরিক্ত ০, মোট ১২-০। বোলিং: ইশান্ত ১-০-২-০, অশ্বিন ২-০-৭-০, জাডেজা ২-০-৩-০।