টিমে ইশান্ত-হার্দিক কেন বুঝলাম না

ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম দুটো টেস্টের জন্য বাছা টিম দেখে সবচেয়ে ভাল লাগছে গৌতম গম্ভীরের জন্য। ছেলেটার উপর ফের একটা বড় দায়িত্ব চাপল ভারতীয় দলের। যা ও বরাবরই নিতে ভালবাসে।

Advertisement

অশোক মলহোত্র

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:১৪
Share:

ভারতে পা। মুম্বইয়ে অ্যালিস্টার কুক। বুধবার। ছবি: পিটিআই।

ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম দুটো টেস্টের জন্য বাছা টিম দেখে সবচেয়ে ভাল লাগছে গৌতম গম্ভীরের জন্য। ছেলেটার উপর ফের একটা বড় দায়িত্ব চাপল ভারতীয় দলের। যা ও বরাবরই নিতে ভালবাসে। অবস্থা যা বুঝছি, তাতে তো মুরলী বিজয় আর গম্ভীরই এই টিমে ‘ফার্স্ট চয়েস’ ওপেনিং জুটি। কাজে লাগাতে পারলে এই সুযোগটাই গম্ভীরের ক্রিকেট জীবনে একটা বড় টার্নিং পয়েন্ট হয়ে যেতে পারে।

Advertisement

চোটের জন্য কেএল রাহুল নেই। শিখর ধবনেরও চোট। রোহিত শর্মার তো শুনছি থাই-মাসলে অপারেশনও হতে পারে। শুনলাম ওকে দেড়-দু’মাস মাঠের বাইরে থাকতে হতে পারে। অর্থাৎ পুরো সিরিজেই নেই রোহিত। নির্বাচকরা যখন ওকে টেস্ট দলের জন্য পাকাপাকি ভাবে ভাবতে শুরু করছিল, তখন এটা ওর কাছে অবশ্যই একটা বড় ধাক্কা। কিন্তু এটাই তো একজন খেলোয়াড়ের জীবন। কখন যে কী ভাবে চোট লাগবে, কী ভাবে যে তার কেরিয়ারে একটা বড় ধাক্কা লাগবে, কেউ তা বলতে পারে না। এ রকম জায়গা থেকে ফিরে আসাটাও বড় চ্যালেঞ্জ।

গম্ভীরের চ্যালেঞ্জটা অবশ্য আরও কঠিন ছিল। ও তো আর চোটের জন্য দলের বাইরে ছিল না। পরিস্থিতির জন্য ওকে বসে থাকতে হয়েছিল এত দিন। দু’বছর অপেক্ষার পর এমন যে একটা সুযোগ ওর সামনে আসবে, যেখানে ওকে ছাড়া আর কাউকে ভাবাই যাবে না, তা কে ভেবেছিল? রোহিত আর গৌতমের ঘটনা দুটোই বড় দৃষ্টান্ত, যাতে বোঝা যায় ক্রিকেটারদের জীবন কত অনিশ্চিত।

Advertisement

প্রথম দুই টেস্টের দল

বিরাট কোহালি (অধিনায়ক), মুরলী বিজয়, গৌতম গম্ভীর, অজিঙ্ক রাহানে, চেতেশ্বর পূজারা, করুণ নায়ার, হার্দিক পাণ্ড্য, ঋদ্ধিমান সাহা (উইকেটকিপার), রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাডেজা, অমিত মিশ্র, উমেশ যাদব, ইশান্ত শর্মা, মহম্মদ শামি, জয়ন্ত যাদব।

পনেরো জনের যে টিমটা হয়েছে, তার মধ্যে থেকে এগারো বেছে নেওয়াটা এমন কিছু কঠিন কাজ নয়। ওপেনারদের কথা তো বললামই। মুরলী-গম্ভীর। তিনে পূজারা। চার-পাঁচে বিরাট ও রাহানে। ছয় থেকে আটে অশ্বিন, ঋদ্ধিমান ও জাডেজা। শেষ তিনটে জায়গায় মিশ্র, ইশান্ত আর শামি। করুণ নায়ারকে সম্ভবত নেওয়া হয়েছে তৃতীয় ওপেনার হিসেবে। জয়ন্ত যাদব পরিবর্ত স্পিনার। উমেশ যাদব তৃতীয় পেসার আর হার্দিক পাণ্ড্য অলরাউন্ডার।

টিম সিলেকশনের পর চিফ সিলেক্টর যা বলেছেন, তার রিপোর্ট পড়ে এ রকমই মনে হল। ভালই টিম। কিন্তু এই দলের দু’জনকে নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে।

ইশান্ত শর্মা আর হার্দিক পাণ্ড্য।

ইশান্তের চিকুনগুনিয়া হয়েছিল। ছন্দে ফেরার জন্য দিল্লির হয়ে ও দুটো রঞ্জি ম্যাচে নামে। প্রথমটা ইডেনে কর্নাটকের বিরুদ্ধে। পরেরটা মোহালিতে ওড়িশা ম্যাচে। প্রথমটাতে তো বিন্দুমাত্র ফর্মে ছিল না। কর্নাটকের কাছে দিল্লি ইনিংসে হারে। আর ইশান্ত সেখানে মাত্র একটা উইকেট পায়। মোহালিতে দ্বিতীয় ইনিংসে তিনটে উইকেট পায়। কিন্তু ওড়িশার বিরুদ্ধে তিনটে উইকেট পাওয়া টেস্ট দলে আসার যোগ্যতা পাওয়ার মতো কি না, প্রশ্নটা এটা নিয়েই। অসুস্থতার পর ও ফিটনেস ফিরে পেলেও ফর্ম যে ফিরে পেয়েছে, বলা যায় কি?

বিশেষ করে দলে যখন শামি আর উমেশ আছে এবং প্রথম দুই টেস্টের উইকেট হয় পাটা নয় স্পিন সহায়ক হবে, তখন তো কোনও তরুণ প্রতিভাবান পেস বোলারকে অনায়াসে দলে রাখা যেত। ইশান্ত যদি একটা রঞ্জি ম্যাচে তিনটে উইকেট নিয়ে টেস্ট দলে ঢুকে পড়তে পারে, তা হলে যুবরাজ সিংহ চারটে রঞ্জি ম্যাচে একটা ডাবল সেঞ্চুরি, একটা সেঞ্চুরি আর একটা হাফ সেঞ্চুরি করে কেন টেস্ট দলে সুযোগ পাবে না?

যুবরাজকে আমি দলে নিতে বলছি না। জানি যে, টিম ম্যানেজমেন্টের ‘স্কিম অব থিংসে’ ও নেই। কিন্তু ইশান্তকেও আপাতত এর মধ্যে রাখা উচিত নয়। আরও কয়েকটা রঞ্জি ম্যাচে ওর পারফরম্যান্স দেখে তার পরে না হয় ওকে টেস্ট দলে ডাকা যেত। ওকে নিয়ে সিদ্ধান্তটা বোধহয় বড্ড তাড়াহুড়ো করে নিয়ে ফেলা হল। ইশান্তের মতো সিনিয়রকে নিশ্চয়ই না খেলানোর জন্য দলে রাখা হয়নি। কিন্তু ওকে নিয়ে নামা মানে ভারতের সাড়ে দশ জনে মাঠে নামা। আমার ধারণাটা ও ভুল প্রমাণ করলে খুশিই হব। কিন্তু সেই সম্ভাবনাটা বোধহয় কম।

আর হার্দিক পাণ্ড্যকে এই দলে দেখে আমি বেশ অবাক হয়ে যাচ্ছি। ওর এখানে ভূমিকাটা কী? সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। ওয়ান ডে সিরিজে যার এমন কিছু ভাল পারফরম্যান্স নয়। যাকে শেষ ওয়ান ডে-তে পারফরম্যান্সের জন্য বসিয়েই দেওয়া হল, সে টেস্ট দলে! তা হলে তরুণ, উঠতি ক্রিকেটারদের কাছে ভারতের টেস্ট দলে ঢোকার যোগ্যতামানটা ঠিক কী দাঁড়াচ্ছে, সেটা জানতে ইচ্ছে করছে। ভারত ‘এ’ দলের হয়ে অস্ট্রেলিয়া সফরে ভাল পারফর্ম করে দেখানোটা যদি ওর টেস্ট দলে ঢোকার যোগ্যতা হয়, তা হলে মণীশ পাণ্ডেরও তো এই টিমে থাকার কথা। বিরাট কোহালিরা না হয় তাদের টিম বাসে একজন বাড়তি নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানকে রাখত। ম্যাচ শুরুর দিন সকালে কোনও ব্যাটসম্যানের চোট হলে অন্তত আর একজন ভাল ব্যাটসম্যানকে তো পাওয়া যেত। হার্দিক দিয়ে সেই সমস্যা মিটবে তো?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement