ইডেন পিচ নিয়ে লেখাটা যখন লিখতে বসছি, নিশ্চিত যে ততক্ষণে পিচ নিয়ে আবার প্রচুর কথাবার্তা শুরু হয়ে গিয়েছে। খোঁজ না নিয়েই এটা লিখলাম। কারণ শনিবার ইডেনের স্কোরবোর্ড দেখলে পিচ নিয়ে ফের প্রশ্ন লোকের মনে এমনিই উঠবে। বাংলাদেশ তো ১৪৫ তাড়া করতে গিয়ে ৭০ রানে শেষ হয়ে গেল!
এ দিনের ম্যাচটা দেখার পর সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন হল, ফাইনালের পিচ কেমন হবে? সেখানে কী রান উঠবে? নাকি এমনই চলবে? আমি বলব, সিএবি-র একজন শুভানুধ্যায়ী হিসেবে ফাইনাল পিচ নিয়ে আমার চিন্তা হচ্ছে।
আসলে একটা ভাল ম্যাচ দেখতে গেলে, বড় রান দেখতে গেলে সবার আগে দরকার একটা হার্ড বেস পিচ। যেখানে বল এসে ব্যাটে লাগবে, ব্যাট বলে নয়। দুঃখের সঙ্গে বলছি, ফাইনালের ইডেন পিচে সে জিনিস দেখার সম্ভাবনা কম, খুব কম।
শনিবার যে পিচে খেলা হল, সেটা পাকিস্তান ম্যাচের মতো র্যাঙ্ক টার্নার ছিল না। কিন্তু বল এ দিনও টার্ন করেছে, সঙ্গে হয়ে দাঁড়িয়েছে ভীষণ স্লো ব্যাটিং উইকেট। যেখানে বল পড়ে ব্যাটে আসছে না। ম্যাচটা টিভিতে দেখতে দেখতে মনে পড়ে গেল, আশির দশকে মার্চের ইডেনে আমরা যখন ক্লাব ক্রিকেটের নকআউট স্টেজ খেলতাম, একই জিনিস পেতাম। বল পড়ে ঠিকমতো ব্যাটে আসত না। থমকে-থমকে যেত। আদতে দাঁড়াত একটা স্লো ব্যাটিং উইকেট, যেখানে শট খেলা খুব কঠিন। বলতে চাইছি, আমাদের সময়ে যা ছিল, ইডেন পিচ আজও তাই। পঞ্চাশ বছর পরেও কোনও উন্নতি ঘটেনি।
ফাইনালের পিচে শুনলাম ঘাস থাকবে। আমি শুধু একটা কথা বলতে চাই। পিচে ঘাস থাকলেই সেটা ভাল সারফেস হয়ে যায় না। ঘাস থাকলেই বল যে দারুণ যাবে, এমন নয়। বল ভাল ভাবে যেতে প্রয়োজন পড়ে শক্ত সারফেসের। আসলে বাংলায় যে ক’টা মাঠ আছে, সব’কটার পিচেরই এক অবস্থা। কী জানেন, আমরা রঞ্জি ট্রফি জিততে পারি না বলে কান্নাকাটি করি। ভাল টেস্ট ক্রিকেটার বার করতে পারি না বলে কান্নাকাটি করি। কিন্তু একবারও ভাবি না যে, রঞ্জি জেতানোর মতো প্লেয়ার তৈরি হবে কী ভাবে? যে মাঠে তরুণ ক্রিকেটার ইচ্ছেমতো শট খেলার আগে দু’বার ভাবতে বাধ্য হচ্ছে, প্রথম থেকেই চলে যাচ্ছে ডিফেন্সিভ মনোভাবে, সেখানে ভাল স্ট্রোকপ্লেয়ার উঠবে কী ভাবে?
আমার খারাপ লাগছে সৌরভের কথা ভেবে। কারণ একজন ক্রিকেটার-প্রশাসক হিসেবে সৌরভ সিএবিকে সব দিয়েছে। দিতে পারেনি শুধু একটা ভাল পিচ। জানি ওর এ নিয়ে যন্ত্রণা থাকবে। কিন্তু এটা এত পুরনো রোগ যে একদিনে সারবে না। আর বিশ্বকাপে শুধু মুম্বই-মোহালি আর কিছুটা দিল্লি বাদ দিলে, সব পিচেরই এক অবস্থা। বেঙ্গালুরু-নাগপুর-ইডেন কেউ পাশমার্ক পাবে না। আশা করব, সামনের বছরের মধ্যে এ নিয়ে ভাবনাচিন্তা আরও বেশি হবে। যাতে স্থানীয় ক্রিকেট থেকেই উন্নতিটা শুরু করা যায়। বিশ্বকাপে ইডেনে আর একটা ম্যাচই পড়ে। ৩ এপ্রিলের ফাইনাল। যা নিয়ে একটাই কথা বলার আছে।
ইডেন পিচ যদি আমার ধারণা সে দিন ভুল প্রমাণ করতে পারে, সবচেয়ে খুশি আমিই হব!