পর্বত আরোহণের সঙ্গে সঙ্গে অন্য সাফল্যের সিঁড়িতেও তরতর করে উঠে চলেছেন।— ফাইল চিত্র।
একটা পা নেই। তা বলে থেমে থাকেননি পর্বতারোহী অরুণিমা সিংহ। পর্বত আরোহণের সঙ্গে সঙ্গে অন্য সাফল্যের সিঁড়িতেও তরতর করে উঠে চলেছেন তিনি। নকল পা নিয়েই ২০১৩ সালে মাউন্ট এভারেস্ট জয় করে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। সেই অরুণিমার মুকুটেই নয়া পালক। প্রথম মহিলা হিসেবে ওই নকল পা নিয়েই আন্টার্কটিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট ভিনসনও জয় করলেন উত্তরপ্রদেশের অরুণিমা সিংহ।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও টুইটারে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অরুণিমাকে। টুইটারে প্রধানমন্ত্রী লিখছেন, ‘‘চমৎকার! সাফল্যের নতুন উচ্চতায় ওঠার জন্য অরুণিমা সিংহকে অভিনন্দন। তিনি দেশের গর্ব, অক্লান্ত পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে নিজেকে আলাদা করে তুলেছেন। ভবিষ্যতের জন্য তাঁকে অনেক শুভকামনা।’’
টুইটারেই নিজের এই সাফল্যের কথা জানিয়েছিলেন অরুণিমা। লিখেছিলেন, ‘‘অপেক্ষার অবসান। বিশ্ব রেকর্ড। বিশ্বের প্রথম মহিলা যিনি এক পা নিয়েই ভারতবর্ষের হয়ে আন্টার্কটিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট ভিনসন জয় করলেন।’’
ট্রেনের কামরায় ছিনতাইবাজদের সামনে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। যার ‘শাস্তি’ হিসেবে তাঁকে ট্রেন থেকে ফেলে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। উল্টো দিক থেকে আসা ট্রেনের চাকায় কাটা পড়েছিল বাঁ পা। সারা রাত যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে দেখেছিলেন, তাঁর কাটা পড়া পায়ে ভিড় করছে ইঁদুরের দল। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে শুয়েই পর্বতারোহীদের নানান পর্বতশৃঙ্গ জয়ের কাহিনি সংবাদপত্রে পড়তেন অরুনিমা। সে সব কাহিনি পড়েই শৃঙ্গ জয়ের স্বপ্ন দেখতেন তিনি।
আরও পড়ুন: ‘জীবন সংশয় হতে পারে জেনেও শবরীমালায় ঢোকার ঝুঁকিটা নিয়েছিলাম’
উত্তরপ্রদেশের অম্বেদকর নগরের মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণী অরুণিমা সিংহ তখন ২৩। জাতীয় স্তরের ভলিবল খেলোয়াড়। মুহূর্তে জীবনে নেমে এসেছিল ঘোর অন্ধকার। যদিও লড়াইয়ের ময়দান থেকে সরে আসেননি। অস্ত্রোপচার করে নকল পা বসানোর পরেই অরুণিমা এভারেস্ট জয়ের সঙ্কল্প করেছিলেন। বহু লড়াইয়ের পর ২০১৩ সালের ২১ মে জয় করেছিলেন এভারেস্ট। প্রস্থেটিক পা নিয়ে তিনিই বিশ্বের প্রথম এভারেস্টজয়ী মহিলা। আর তার ছ’বছরের মধ্যেই সেই প্রস্থেটিক পা নিয়েই এখন মাউন্ট ভিনসনও জয় করে রেকর্ড করে ফেললেন অরুণিমা।
আরও পড়ুন: ‘দারুণ মঞ্চ পেয়েছ ঋষভ, মনে রেখো উন্নতির শেষ নেই’
মাউন্ট ভিনসনের আগেই আরও পাঁচটি পর্বতশৃঙ্গ জয় করে ফেলেছিলেন অরুনিমা। মাউন্ট এভারেস্ট, মাউন্ট কিলিমাঞ্জেরো, মাউন্ট এব্রাস, মাউন্ট কোসিয়াজকো, মাউন্ট অ্যাকোনকাগুয়া। পেয়েছেন পদ্মশ্রী সম্মানও। সংবাদমাধ্যমকে অরুণিমা এক বার বলেছিলেন, ‘‘ছ’টি মহাদেশে ছ’টি পর্বতশৃঙ্গ জয় করাই আমার লক্ষ্য। কিছু সময় এখনও আমার শরীরে ব্যথা হয়। একটা প্লেট এবং রড বসানো আছে আমার পায়ে।’’
(খেলার দুনিয়া নিয়েবাংলায় খবরপড়তে চোখ রাখুন আমাদেরখেলাবিভাগে।)