আলোচনা: কম আলোর জন্য তখন খেলা স্থগিত। বাংলার ক্রিকেটারদের সঙ্গে কোচ অরুণ লাল। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
দিল্লির বিরুদ্ধে রঞ্জি ম্যাচের দ্বিতীয় দিনই বাংলা দলের কোচ অরুণ লালের আশঙ্কা ছিল, ‘‘খারাপ আলোর জন্য ম্যাচ না স্থগিত থাকে।’’ আশঙ্কা স্বাভাবিক। অন্ধ্রপ্রদেশ ও গুজরাতের বিরুদ্ধে জয়ের সম্ভাবনা তৈরি হলেও খারাপ আলোর জন্য তিন পয়েন্ট নিয়েই খুশি থাকতে হয়েছে বাংলাকে। বুধবার দিল্লির বিরুদ্ধে তৃতীয় দিন পুরো খেলা হলে অনায়াসে প্রথম ইনিংসে এগিয়ে যেতে পারত বাংলা। কিন্তু বৃষ্টি ও খারাপ আলোর জন্য মাত্র ৯.৩ ওভার ম্যাচ পরিচালনা করার সুযোগ পান আম্পায়ারেরা।
বাংলার ৩১৮ রানের জবাবে তৃতীয় দিনের শেষে দিল্লির রান সাত উইকেটে ২১৭। এখনও পিছিয়ে ১০১ রানে। সকালে বৃষ্টি হওয়ায় ম্যাচ শুরু হয় দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে। ১টা বেজে ২৪ মিনিটে খেলা বন্ধ হওয়ার পরে তা আর শুরু করা যায়নি। এই ৫৪ মিনিটেই অবশ্য তিন পয়েন্ট নিশ্চিত করে ফেলতে পারত বাংলা। ৬৮তম ওভারে মুকেশের দুরন্ত ডেলিভারি প্যাডে আছড়ে পড়ে অনুজ রাওয়াতের। এলবিডব্লিউ দিতে বাধ্য হন আম্পায়ার। ৭০তম ওভারে তার পুনরাবৃত্তি ঘটে জন্টি সিধুর বিরুদ্ধেও। ফের আউট দিতে বাধ্য হন আম্পায়ার। কিন্তু নো-বল পরীক্ষা করে দেখা যায়, পপিং ক্রিজের লাইনে মুকেশের পা। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ সময় নেন টিভি আম্পায়ার। কারণ পা ফেলার সময় মুকেশের পায়ের কিছুটা অংশ পপিং ক্রিজের ভিতরে ছুঁয়ে বাইরে গিয়েছে কি না, তা নিয়ে ছিল সংশয়। প্রায় চার মিনিট অপেক্ষা করার পরে টিভি আম্পায়ার নট আউট ঘোষণা করেন।
ঘটনার সময় বিপক্ষের রান ছিল সাত উইকেটে ১৯৫। তখনও দিল্লি ১২৩ রানে পিছিয়ে। পিচে থিতু হয়ে যাওয়া ব্যাটসম্যান আউট হলে বাকি দু’টি উইকেটও দ্রুত পড়ে যেতে পারত। কারণ, স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া ও হাওয়ার মিশেলে পেসারদের স্বর্গ হয়ে উঠেছিল ইডেন। কিন্তু একটি নো-বল বাংলার স্বপ্নে কাঁটা হয়ে দাঁড়াল। কোচ অরুণ লাল বলছিলেন, ‘‘আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু এক জন বোলার কেন নো-বল করবে? প্রত্যেকটি নেট সেশনে এই ব্যাপারে বার বার সতর্ক করা হয় বোলারদের। এ বার থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ কী রকম ব্যবস্থা? অরুণের ঘোষণা, ‘‘এ বার থেকে নেটে নো-বল করলে পাঁচশো টাকা জরিমানা দিতে হবে। সেই টাকা আমরা কোনও দুঃস্থ সংস্থাকে দান করে দেব।’’ আরও বলেন, ‘‘বিজয় হজারে ট্রফিতে তামিলনাড়ুর বিরুদ্ধে নো-বলের জন্য হেরেছি। অন্ধ্রপ্রদেশের বিরুদ্ধে নো-বল করে ছয় পয়েন্ট হাতছাড়া করেছি। এ বার দিল্লির বিরুদ্ধে একই দৃশ্য।’’
অরুণের এই আশঙ্কার কারণ অবশ্যই রয়েছে। বৃহস্পতিবার সারা দিন বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এক বলও না হলে তিন পয়েন্টের স্বপ্নও শেষ হয়ে যাবে বাংলার। যা কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারে তাদের কোয়ার্টার ফাইনাল যাত্রার লক্ষ্যে। গ্রুপ ‘এ’ ও ‘বি’ মিলিয়ে বুধবার পর্যন্ত পঞ্চম স্থানে বাংলা। কোয়ার্টার ফাইনালে যাবে প্রথম পাঁচটি দল। বাংলার পরের দু’টি ম্যাচই বাইরে। রাজস্থান ও পঞ্জাবের বিরুদ্ধে। এখানে এক পয়েন্ট পেলে ২০ পয়েন্টে পৌঁছবে বাংলা। সে ক্ষেত্রে শেষ দু’টি ম্যাচ থেকে কম পক্ষে ৯ পয়েন্ট পেতেই হবে শেষ আটের দৌড়ে থাকার জন্য। আজ তিন পয়েন্ট নিশ্চিত করতে পারলে লড়াইয়ে থেকে যাবেন মনোজ তিওয়ারিরা। না হলে তাকিয়ে থাকতে হবে শেষ দু’টি ম্যাচের দিকে।
এ দিকে, দিল্লি শিবিরের বোলিং কোচ হয়ে ইডেনে পা রেখেছেন বিরাট কোহালির ছোটবেলার কোচ রাজকুমার শর্মা। বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছেপ্রকাশ করেছেন তিনি।
বৃষ্টিতে বিঘ্নিত মুম্বই ম্যাচও: ধর্মশালায় হিমাচল প্রদেশের বিরুদ্ধে তৃতীয় দিনের ম্যাচ ভেস্তে গেল বৃষ্টিতে। দ্বিতীয় দিনের শেষেই ২২৬ রানে অপরাজিত ছিলেন সরফরাজ খান। মরসুমের দ্বিতীয় ত্রিশতরান এ দিনই করে ফেলার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। সরফরাজ বলেছিলেন, ‘‘দ্বিতীয় ত্রিশতরান পেলে ভালই লাগবে। প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরি শেষ ম্যাচে পাওয়ার পরে আমি আত্মবিশ্বাসী। এ বার দেখা যাক, দ্বিতীয়টি পাই কি না।’’ কিন্তু পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াল সেই বৃষ্টি। অন্য দিকে উত্তরপ্রদেশকে সাত উইকেটে হারাল মধ্যপ্রদেশ। তরুণ ওপেনার আরিয়ান জুয়াল অপরাজিত ৭৪ রানে। এ দিন বরোদাকে চার উইকেটে হারায় সৌরাষ্ট্র। নয়াদিল্লিতে রেলওয়েজের বিরুদ্ধে ১৭ রানে এগিয়ে গেল কর্নাটক।