যেন গোল পাই। ডুডুর প্রাণপাত। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
ডুডু এসে পড়ার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই ইস্টবেঙ্গলে ঢুকে পড়লেন তাদের ‘চতুর্থ বিদেশি’! রবিবারের ডার্বিতে র্যান্টি, বার্তোসের সঙ্গে তিনিও শুরু করবেন প্রথম একাদশে। কলকাতা লিগে এগারো জনের দলে দু’জন বিদেশি খেলানোর নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে!
উপরের লেখা শব্দগুলো পড়লে ময়দানের ফুটবলপ্রেমীদের অনেকেই আঁতকে উঠতে পারেন! চমকে উঠতে পারেন স্বয়ং লাল-হলুদ কোচ আর্মান্দো কোলাসোও। তাঁর অনুমতি ছাড়াই যে দলে ঢুকে পড়েছেন সেই বিদেশি ফুটবলার! মর্গ্যান-ব্রিগেডের অন্যতম সদস্য অ্যান্ড্রু বরিসিচ। রবিবারের ডার্বিতে তিনি না থেকেও ভীষণ ভাবে উপস্থিত থাকবেন যুবভারতীতে। ইস্টবেঙ্গলের আইকন ফুটবলার লিও বার্তোসের হৃদয়ে।
ডার্বির খুঁটিনাটি জানতে শনিবারই বরিসিচকে তাঁর অস্ট্রেলীয় নম্বরে ফোন করেছিলেন বার্তোস। নতুন ক্লাবে প্রথম ডার্বি বলে কথা। বন্ধুর পরামর্শ খুব জরুরি! বিশেষ করে যেখানে এই ডার্বিতে গোল করার অভিজ্ঞতাও আছে আর্মান্দোর পূর্বসুরি কোচের প্রিয় এই বিদেশি ফুটবলারের।
এ দিন সকালে প্র্যাকটিসের পরে নিউজিল্যান্ডের বিশ্বকাপার স্ট্রাইকার বার্তোস বলছিলেন, “এক কমন ফ্রেন্ডের মাধ্যমে বরিসিচের সঙ্গে আমার পরিচয়। ও অস্ট্রেলিয়ায় যে ক্লাবে খেলত, সেখানে আমারও একজন বন্ধু ছিল। বরিসিচের মুখেই প্রথম শুনি কলকাতা ডার্বি সম্পর্কে। তাই ম্যাচের আগে ভাবলাম ওর থেকে এই ম্যাচের টিপস নেওয়া যেতে পারে।”
‘গাইড’ বরিসিচ কি উপদেশ দিলেন? নানা আলোচনার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেটা উঠে এসেছে শহরের বিরাট সমর্থককূল। বার্তোস বলছিলেন, “খেলার সময় আমাকে গ্যালারির দিকে তাকাতে বারণ করেছে ও। এতে নাকি মনঃসংযোগ নষ্ট হতে পারে। আমাদের মতো বিদেশিদের সঙ্গে এখানকার ফুটবলারদের টেকনিক আলাদা। কিন্তু ওদের সঙ্গে মানাতে হলে আমাকে ওদের মতো হতে হবে। ওরা চাইলে আমার মতো হতে পারবে না। যদি সুযোগ পাই, এটা মাথায় রেখেই খেলব।”
মানে বার্তোস রবিবারের ডার্বিতে খেললে তাঁর সঙ্গে খেলবেন বরিসিচ-ও। ইস্টবেঙ্গলের ‘চতুর্থ বিদেশি’!
শনিবার সকালে ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে ঢুঁ মারতে ডার্বির প্রস্তুতি নিয়ে আরও রহস্যের সন্ধান পাওয়া গেল। মাঠের বাইরের পরিস্থিতি যতই থমথমে থাকুক না কেন, মাঠের ভিতরে তার কু-প্রভাব আটকাতে দারুণ তৎপর ফুটবলাররা। কোথাও যাতে মনোবল ভেঙে না পড়ে, সে জন্য সারাক্ষণ অর্ণব-রফিকদের সঙ্গে ডাকটিকিটের মতো সেঁটে ছিলেন অ্যালভিটো ডি’কুনহা। অধিনায়ক হরমনজ্যোৎ থেকে শুরু করে র্যান্টি, দলের অভিজ্ঞ ফুটবলারদের সবাইকেই বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেল। প্র্যাকটিস শেষে লাল-হলুদ অধিনায়ক বলছিলেন, “এই ডার্বিটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। জীবন-মরণ ম্যাচ। জিতলে স্বস্তি। হারলে চরম অস্বস্তি।”
অস্বস্তি তো সবচেয়ে বেশি বাড়বে আর্মান্দোর! আগের ম্যাচেই তাঁকে গ্যালারি থেকে ‘গো ব্যাক কোলাসো, ব্রিং ব্যাক মর্গ্যান’ শুনতে হয়েছে। নিশ্চিত ভাবেই লাল-হলুদের গোয়ান কোচ চাইবেন না, ডার্বির পরে সেই স্লোগান আরও জোরাল হোক ক্লাবে। হয়তো সে কারণেই এ দিন প্র্যাকটিসের পরেও পাক্কা এক ঘণ্টা ফুটবলারদের নিয়ে আলোচনায় বসেন তিনি। সব ফুটবলার বেরিয়ে যেতে ফের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার দীপক মণ্ডলকে নিয়ে একান্তে ক্লাবের কাফেটেরিয়ায় কাটান তিনি। বুঝতে অসুবিধের কারণ নেই যে, বাগান-আক্রমণের ত্রিমূর্তি কাতসুমি-জেজে-সাবিথকে আটকানোর রাস্তা খুঁজতে কতটা মরিয়া ইস্টবেঙ্গল কোচ।
লাল-হলুদ স্ট্রাইকারদের আবার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে অভিভাবকের ভূমিকায় র্যান্টি। রফিক-বলজিতের মতো দেশি ফুটবলাররা তো বটেই নতুন বিদেশি ডুডুকেও টিপস দিলেন ভারতীয় ফুটবলে পোড়খাওয়া নাইজিরিয়ান। র্যান্টির শরীরী ভাষা দেখলে মনেই হবে না, জীবনের প্রথম কলকাতা ডার্বি খেলতে নামছেন। গলায় আত্মবিশ্বাস, “লিগে প্রথম দু’টো ম্যাচের পরে আর গোল পাইনি। তার মানে এটা নয় যে, আমি চাপে আছি। আমার কাছে ভাল খেলার গুরুত্ব অনেক বেশি। রোজ রোজ তো আর গোল আসে না!”
তবে ইস্টবেঙ্গল শিবিরে যেন এক গামলা দুধে এক ফোঁটা চোনা লাল-হলুদ সমর্থকেরা! ডার্বির আগের দিন ফুটবলারদের তাতাতে যে ভাবে তাঁবুতে ভিড় করেন এই ক্লাবের সমর্থকেরা, তা বরাবর চোখে পড়ার মতো। কিন্তু শনিবারের সকালটা সেখানে ব্যতিক্রম হয়ে থাকল। উদাসীন, উচ্ছ্বাসহীন পরিবেশ। হাতে গোনা সমর্থক হাজির। বরং লাল-হলুদ সমর্থকদের ডার্বি-চ্যালেঞ্জের জায়গায় থাকল ইস্টবেঙ্গল অধিনায়কের ছোড়া আইস ব্যাকেট চ্যালেঞ্জ।
প্র্যাকটিস শেষে পুণে এফসি-র দেওয়া আইস বাকেট-চ্যালেঞ্জ সম্পূর্ণ করে পাল্টা চ্যালেঞ্জ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, তাঁর দল আটলেটিকো দে কলকাতা এবং লাজং এফসি-কে ছোড়ার পর খাবরার শপথ, “ক্যাপ্টেন হিসেবে এটাই আমার প্রথম ডার্বি। যে কোনও ক্যাপ্টেনই এই ডার্বি জিততে চাইবে। তবে রবিবার আমি নিজের জন্য জিততে চাই না। আমাদের ক্লাবের সমর্থকদের জন্য জিততে চাই।”
লাল-হলুদ ক্যাপ্টেন যেন ইস্টবেঙ্গল তাঁবুতে ঝোলা ‘ব্যতিক্রম’-এর অদৃশ্য সাইনবোর্ডটা ডার্বি জিতে খুলে ফেলতে চাইছেন!