তেভেজকে আটকানোর চেষ্টায় কলম্বিয়া ডিফেন্স। ছবি: রয়টার্স।
লিওনেল মেসির বাঁ পায়ের স্কিল না হামেস রদ্রিগেজের দূরপাল্লার শট। হুয়ান কুয়াদ্রাদোর ইনসাইড কাট করে ঢোকা না অ্যাঞ্জেল দি’মারিয়ার গতি। আর্জেন্তিনার আক্রমণ না কলম্বিয়ার পাওয়ার গেম। শুক্রবার রাতে কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনালে ছিল কলম্বিয়া বনাম আর্জেন্তিনার স্বপ্নের লড়াই। যে ম্যাচকে কোপা ২০১৫-র সেরা লড়াইয়ের তকমা দেওয়া হয়েছিল।
আক্রমণের রসদ উপস্থিত ছিল দু’দলের কাছেই। দু’দলেই উপস্থিত ছিল এমন সব ফুটবলার, যাঁরা ক্লাব জার্সি গায়ে এক কথায় বলে বলে গোল করেন। কিন্তু কোছায় গোল? বরং গোটা ম্যাচ ০-০ থাকার পর টাইব্রেকারে কলম্বিয়াকে ৫-৪ হারিয়ে কোনওমতে সেমিফাইনালে উঠতে হল আর্জেন্তিনাকে। আর নব্বই মিনিট এমন একটা ম্যাচ দেখা গেল যেখানে গোলের থেকে বেশি হলুদ কার্ড হল।
গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের জন্য আগেরোকে সেন্টার ফরোয়ার্ডে রেখে মেসি-দি’মারিয়া-পাস্তোরেকে নিয়েই আক্রমণ সাজান আর্জেন্তিনা কোচ জেরার্দো মার্টিনো। জবাবে রাদামেল ফালকাওকে রিজার্ভ বেঞ্চে বসিয়ে জ্যাকসন মার্টিনেজকে সেন্টার ফরোয়ার্ডে রাখেন হোসে পেকারম্যান। সাপোর্টে হামেস রদ্রিগেজ-হুয়ান কুয়াদ্রাদো। প্রথমার্ধের শুরুর থেকেই আর্জেন্তিনা আক্রমণ করতে থাকে। জামাইকা ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও দ্রুত গোল পাওয়ার আশায় ছিল মার্টিনোর দল। জবাবে কলম্বিয়া প্রতিটা ফুটবলারকে নীচে নামিয়ে দেয়। যাতে প্রতি আক্রমণে বিপদে ফেলতে পারে আর্জেন্তিনাকে। নিজেদের মধ্যে ফের কম্বিনেশন তৈরি করে দি’মারিয়া-মেসি জুটি। দি’মারিয়ার দেওয়া পাসে ভাল সু্যোগ নষ্ট করেন পাস্তোরে। আবার কর্নার থেকে ফ্রি-হেডার পেয়েও বাইরে মারেন রোখো। মেসি কিন্তু মেসির ছন্দেই ছিলেন। ফুটবলারদের ড্রিবল করে, ছোট ছোট পাস খেলে, আক্রমণে যোগসূত্র তৈরি করে এলএম টেন প্রতিটা সময় চেষ্টা করে গেলেন দলকে এগিয়ে দিতে। বারবার জায়গা বদল করছিলেন মেসি। কখনও উইংয়ে তো কখনও শ্যাডো স্ট্রাইকারে। তবে কলম্বিয়ার গোলরক্ষক ডেভিড ওসপিনার কাছেই আটকে যেতে হয় আর্জেন্তিনার ফরোয়ার্ড লাইনকে। যাঁর কাছে পৌঁছে আর্জেন্তিনার প্রতিটা আক্রমণই শেষ হচ্ছিল। পাস্তোরের দুর্দান্ত পাসে আগেরোর শট সেভ করেন ওসপিনা। ফিরতি বলে মেসির হেডটাও অবিশ্বাস্য রিফ্লেক্সে বাঁচান তিনি। সেট পিস পরিস্থিতিতেও মাথা ঠান্ডা রাখেন কলম্বিয়া গোলরক্ষক। আর চলতি কোপার অন্য ম্যাচগুলির মতো শুক্রবারের ম্যাচটাও দেখল খারাপ ট্যাকলের মহড়া। এক আধজন নয়, দু’দল মিলিয়ে প্রথমার্ধেই ছ’জন হলুদ কার্ড দেখেন।
গ্রুপের বাকি ম্যাচগুলোর মতোই দ্বিতীয়ার্ধে আর্জেন্তিনা ছন্দ হারায়। পরিসংখ্যানে এগিয়ে থাকলেও স্কোরলাইনে এগোতে পারেনি ‘লা অ্যালবিসেলেস্তারা’। প্রথমার্ধের পুরো সময়ে নীচে নেমে বসার পরে কলম্বিয়াও সাহস করে আক্রমণ তৈরি করতে থাকে। তবে তা-ও একটা দু’টোর বেশি নয়। বাকি ম্যাচ আরাম করেই কাটিয়েছেন আর্জেন্তিনা গোলরক্ষক সের্জিও রোমেরো। কর্নার থেকে একমাত্র ভাল সু্যোগ পান জ্যাকসন মার্টিনেজ। যাঁর হেড রোমেরো সহজেই বাঁচিয়ে দেন। ম্যাচ যত এগোতে থাকে ততই যেন ঘুমিয়ে পড়ে আর্জেন্তিনা আক্রমণ। যা নিয়ে কিছু দিন আগেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মার্টিনো। বলেছিলেন, ক্লান্তিই নাকি আসল কারণ। ম্যাচের শেষের দিকে কর্নার থেকে আর্জেন্তিনার নিকোলাস ওটামেন্ডির শট ফের দুর্দান্ত সেভ করেন ওসপিনা। যাঁর হাতে লেগে বল বারপোস্টে লেগেও গোলে বেরিয়ে যায়। আবার তেভেজের একটা শট গোলের মুখ থেকে ক্লিয়ার করে কলম্বিয়া ডিফেন্স। মেসি নিজের স্কিলের সাহায্যে ডিফেন্সের মুখ খোলার চেষ্টা করলেও ফাইনাল থার্ডে গিয়ে ব্যর্থ হন।
এ বারে কোপার ম্যাচ মানেই বিতর্ক থেকেই যাচ্ছে। এ দিনও তা-ই হল। কলম্বিয়া কোচকে অকথ্য গালিগালাজ করে লাইন্সম্যানের সঙ্গে তর্কাতর্কি শুরু করে দেন আর্জেন্তিনা কোচ। রেফারি এসে সতর্ক না করলে হয়তো পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরোতেই পারত।
নব্বই মিনিট শেষে কোনও ৩০ মিনিটের একস্ট্রা টাইম হয়নি। সোজাসুজি ম্যাচ চলে যায় টাইব্রেকারে। দু’দলই প্রথম পাঁচটা শটে চারটে মারে। সাডেন ডেথে গিয়ে কলম্বিয়ার মুরিয়ো ও জুনিগা পেনাল্টি নষ্ট করেন। তবে আর্জেন্তিনার কার্লোস তেভেজ কোনও ভুল করেননি। তাঁর পেনাল্টি শট গিয়ে জালে জড়ায়। শেষ চারের টিকিট পাকা করে আর্জেন্তিনা।
তবে সেমিফাইনালে উঠেও কোচের কিন্তু চিন্তা থেকে যাবে, এত সু্যোগ তৈরি করেও আর্জেন্তিনার গোল না পাওয়ায়। তা হলে কি সত্যিই দ্বিতীয়ার্ধে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে দল। নাকি এখনও কোনও যোগসূত্র তৈরি হয়নি আক্রমণে? সত্যি বলতে, ১৫ নম্বর কোপা জিততে হলে এখনও অনেক কাজ বাকি আর্জেন্তিনার।