ঝকঝকে সবুজ একটা জ্যাকেট!
রোমান সাম্রাজ্যে বেগুনি যেমন ছিল রাজকীয় রং, গল্ফে সেই আভিজাত্য বরাদ্দ এই সবুজ জ্যাকেটের। যেটা গায়ে চড়িয়ে গল্ফ বিশ্বের অঘোষিত সম্রাট হওয়ার স্বপ্ন যত্নে লালন করেন প্রত্যেক গল্ফার। কিংবদন্তি জ্যাক নিকোলাস এটা জিতেছেন ছ’বার। টাইগার উডস চার বার। নিক ফালডো তিন বার।
সেই সবুজ জ্যাকেটের লড়াইয়ে এ দিন আগাস্টার পান্না সবুজ কোর্সে মাস্টার্স টুনার্মেন্টে নিজের অভিষেক রাউন্ড খেললেন অনির্বাণ লাহিড়ী।
একাশি বছর প্রাচীন, গল্ফের সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত আমন্ত্রণী মেজর টুর্নামেন্টে খেলার ডাক ভারত থেকে এর আগে পেয়েছিলেন শুধু মাত্র জীব মিলখা সিংহ এবং অর্জুন অটওয়াল। বিশ্বর্যাঙ্কিং তালিকায় সেরা পঞ্চাশে থাকা অনির্বাণ এ বছর সেই আমন্ত্রণ পেয়েছেন রোরি ম্যাকিলরয়, টাইগার উডস-সহ সেরাদের পাশে।
বৃহস্পতিবার এ দেশে সন্ধ্যা নামার ঠিক মুখে, মার্কিন মুলুকের সুদূর জর্জিয়ায় টি-অফ করলেন অনির্বাণ। শেষ করলেন এক-আন্ডার পার ৭১ স্কোরে। দুই বার্ডি, এক বোগি। লিডারবোর্ডে প্রথম সতেরোয়। ভারতে তাঁর বন্ধুরা যা নিয়ে উচ্ছ্বসিত। জীব মিলখা সিংহ, গগনজিৎ ভুল্লার, দ্বিগবিজয় সিংহরা একমত, আগাস্টায় বাঙালি তারকার ভাল প্রদর্শন মানে ভারতীয় গল্ফের পাগড়িতে নতুন জহরত।
দ্বিগবিজয় মোবাইলে বলছিলেন, ‘‘লর্ডসে অভিষেক ইনিংস খেলার সঙ্গে আগাস্টায় খেলার রোমাঞ্চটার তুলনা হতে পারে।’’ ২০০৭ থেকে ২০০৯, টানা তিন বছর মাস্টার্সে নামা জীব মিলখার আবার প্রথম বছর ম্যাগনোলিয়া লেন ধরে কোর্সে যাওয়ার সময় গায়ে কাঁটা দিয়েছিল!
অনির্বাণ নিজেও বলেছেন, ‘‘আগাস্টায় ভাল খেলতে চাই। কিন্তু তারও আগে, ভারতীয় গল্ফের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের হয়ে ভাল খেলতে চাই। কারণ এখানে আমার সাফল্য দেশে গল্ফের চেহারাটা আরও বদলে দিতে পারে। তাই আগাস্টায় অনেক কিছু পাওয়ার আছে।’’
বেঙ্গালুরুর ছেলে এই টুনার্মেন্টে কাট নিশ্চিত করলে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়েও লম্বা লাফ দিয়ে পৌঁছে যেতে পারেন আরও অনেকটাই উপরের দিকে।
এ দিন মোবাইলের ওপ্রান্তে যে ব্যাপারে একশো ভাগ নিশ্চিত শোনাল গগনজিৎ ভুল্লারকে। বন্ধু অনির্বাণকে সকালেই মেসেজ করে শুভকামনা জানিয়েছেন। বলছিলেন, ‘‘কাল রাতে আমাদের প্লেয়ারদের আড্ডায় অনির্বাণকে নিয়েই কথা হচ্ছিল। মিলিয়ে নেবেন, যে রকম দুরন্ত ফর্মে আছে, ভাল একটা কিছু করে দেখাবেই!’’ নিজে ব্রিটিশ ওপেনের মতো অভিজাত মেজর খেলেছেন। সাতাশ বছরের গগনজিৎ অনির্বাণের সমবয়সীও। বলছিলেন, ‘‘এর আগে আরও তিনটে মেজর টুর্নামেন্টে খেলেছে। সেরাদের সঙ্গে টক্কর দিতে জানে। তার চেয়েও বড়, গত এক বছর অবিশ্বাস্য উন্নতির করার পাশাপাশি ও অনেক বেশি পরিণত এখন। কাট তো পাবেই। লিডারবোর্ডে বেশ উপরের দিকেই শেষ করবে বলে আমার বিশ্বাস!’’
২০১৪-র এপ্রিলে আবু ধাবিতে নামার আগে বিশ্বের ১০২ নম্বর ছিলেন অনির্বাণ। এক বছরে কো-স্যাঙ্কশনড টুর্নামেন্ট-সহ চারটি খেতাব ও একগুচ্ছ ভাল পারফরম্যান্স তাঁকে তুলে এনেছে চৌত্রিশ নম্বরে। পেয়েছেন পিজিএ ট্যুরে খেলার যোগ্যতা। তবে পিজিএ ট্যুরে গত সপ্তাহে শেল হিউস্টন ওপেন ও তার আগের বিশ্ব গল্ফ চ্যাম্পিয়নশিপে কাট পাননি। সেটা কি প্রভাব ফেলবে মাস্টার্সের? গগনজিৎ বলছেন, ‘‘একদম না।’’ ‘‘ওকে খুব কাছ থেকে জানি। মানসিক ভাবে অনির্বাণ অবিশ্বাস্য মজবুত। নেগেটিভ চিন্তাকে প্রশ্রয় দেয় না। গত সপ্তাহে কী হয়েছে, মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছে এতক্ষণে। ওর ড্রাইভিং খুব ভাল। তবে পাটিং পেশাদার গল্ফারের খেলার আসল মেরুদণ্ড। যেটায় উন্নতি করতে করতে অনির্বাণ এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা পাটার। এই দু’টো ব্যাপারই আগাস্টায় ওকে সাহায্য করবে।’’ দ্বিগবিজয়ও মানেন, মানসিক শক্তিটাই অনির্বাণের সাফল্যের আসল রহস্য। বলছিলেন, ‘‘আমাকে সবচেয়ে অবাক করে চূড়ান্ত চাপের মুখেও ওর লাড়াই না ছাড়াটা। শেষ চারটে টুর্নামেন্টই দেখুন! তিনটেয় এক শটে জিতেছে, একটা প্লে অফে! ওই যে বলে না, উইনার্স নেভার কুইট!’’ প্রথম রাউন্ডে অনির্বাণের খেলা সম্পর্কে বললেন, ‘‘হয়তো লর্ডসে প্রথম বলটা দেখে খেলার মতোই প্রথম রাউন্ডে অচেনা কোর্সের হালচালটা বুঝে নিল। তবে ইদানীং যা ফর্মে, হি উইল বি রাইট আপ দেয়ার!’’
জীবকে আবার ভাবাচ্ছে আগাস্টার ঢেউ খেলানো কোর্স। যেখানে চিপিং আর পাটিংটা বুঝে করতে হয়। বলছিলেন, ‘‘অনির্বাণের সেরা গুণ ধৈর্য! আর আগাস্টার কোর্স গল্ফারের বিশাল ধৈর্য পরীক্ষা নেয়। তাই আমার ধারণা ও ভাল করবে।’’
আগাস্টায় অনির্বাণ নিয়ে আপাতত আলোড়িত ভারতীয় গল্ফ। জর্জিয়ার গল্ফ কোর্সে অনির্বাণ এখন কতটা আলোড়ন ফেলেন, তারই অপেক্ষা!