সিংহের ডেরায় সিংহ শিকার

ফুটবল ছেড়ে ক্রিকেটে এসে হুঙ্কার ক্যারিবিয়ান ঔদ্ধত্যের

মাত্র উনিশ বছর বয়স যখন, জীবন দাঁড়িয়ে কৈশোর আর যৌবনের সন্ধিক্ষণে, জামাইকার স্কুলে হেডস্যরের ঘরে ডাক পড়েছিল আন্দ্রে রাসেলের। কাঁপতে কাঁপতে ঘরে ঢুকে ক্যারিবিয়ান তরুণ দেখেছিলেন হেডস্যরের হাতে দুটো চিঠি আর ঠোঁটে অপেক্ষা করছে একটা প্রশ্ন। তুমি কোনটা চাও? ক্রিকেট টিমে ঢুকতে? না ফুটবলে? জামাইকার দুটো টিম থেকেই চিঠি এসেছে!

Advertisement

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

পুণে শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২৪
Share:

উইকেট তোলার উচ্ছ্বাস। পুণেয় নাইটরা।

মাত্র উনিশ বছর বয়স যখন, জীবন দাঁড়িয়ে কৈশোর আর যৌবনের সন্ধিক্ষণে, জামাইকার স্কুলে হেডস্যরের ঘরে ডাক পড়েছিল আন্দ্রে রাসেলের। কাঁপতে কাঁপতে ঘরে ঢুকে ক্যারিবিয়ান তরুণ দেখেছিলেন হেডস্যরের হাতে দুটো চিঠি আর ঠোঁটে অপেক্ষা করছে একটা প্রশ্ন।

Advertisement

তুমি কোনটা চাও? ক্রিকেট টিমে ঢুকতে? না ফুটবলে? জামাইকার দুটো টিম থেকেই চিঠি এসেছে!

ক্যারিবিয়ানদের কাছে একই সঙ্গে দুটো খেলায় সমনৈপুণ্য দেখানো নতুন নয়। ভিভ রিচার্ডস ক্রিকেট এবং ফুটবল দুটোই চুটিয়ে খেলতেন। উসেইন বোল্ট চলমান বিদ্যুত্‌ হয়েও বাইশ গজে নেমে পড়তে চেয়েছেন বারবার। হেডস্যরের ইচ্ছে মেনে সে দিন উনিশের রাসেলের জামাইকার ফুটবল টিমে চলে গেলে কারও কিছু বলার থাকত না। পরে হেডস্যরের সঙ্গে একবার দেখা হয়েছিল রাসেলের। তত দিনে ক্রিকেট-পৃথিবীতে রাসেলের একটু-আধটু পরিচিতি হয়েছে। ‘খুনে’ ক্রিকেটার বলে খ্যাতি ছড়াচ্ছে। শোনা যায়, ছাত্রকে দেখে সে দিন আবেগে কেঁদে ফেলেছিলেন ‘গুরু’।

Advertisement

পুণের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার আন্দ্রে রাসেলের হেডস্যরের থাকার সম্ভাবনা ছিল না। যদি থাকতেন, দু’এক ফোঁটা আনন্দাশ্রু নিঃসন্দেহে আবারও ঝরত! কপাল ভাল গৌতম গম্ভীরের। আন্দ্রে রাসেল ক্রিকেটের বদলে ফুটবলে চলে গেলে তো কেকেআর ক্যাপ্টেনের গম্ভীর মুখে হাসি আজ ফোটে না। সূর্যকুমার যাদবকেও দেখা যায় না উল্লাসের চোটে ডাগআউটে সতীর্থের কোলে উঠে পড়তে! স্কোরকার্ড, পরিসংখ্যান ছেড়ে দিন। সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে শনিবারের ক্যারিবিয়ান ঔদ্ধত্য মাপতে গেলে মূর্খামি হবে। দেখতে হবে বরং নাইট ডাগআউট। যেখানে প্যাড পরে বাইশ গজের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে ঠায় বসে ছিলেন গম্ভীর। ওয়াসিম আক্রম নখ খেতে খেতে প্রায় তুলে দেওয়ার উপক্রম করছেন! ট্রেভর বেলিসকে দেখলে মনে হবে রক্তমাংসের নয়, তাঁর মর্মর মূর্তি বসে। বিদুত্‌পৃষ্ট হয়ে বসে যাঁরা দেখছেন, জেতা ম্যাচেও কী করে অপমৃত্যুর দিকে তিল তিল করে এগোনো যায়!

সফল উমেশ।

কেকেআরের তো একটা সময় ষাট রানে পাঁচটা উড়ে গিয়েছিল! মাত্র ১৫৫ তাড়া করতে গিয়ে।

আন্দ্রে রাসেল যখন দুলকি চালে ক্রিজের দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন, অতি বড় নাইট সমর্থকের পক্ষেও বোধহয় ভাবা সম্ভব ছিল না যে ম্যাচটা শেষ হবে দু’ওভার আগে! ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার যে আদতে ‘মানববোমা’ সেটা এমএসডির চেন্নাই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি-টোয়েন্টিতে হাড়ে-হাড়ে টের পেলেও তা রোজ বিস্ফোরণ ঘটাবে, তার কী গ্যারান্টি? না পারলেও তাঁকে দোষ দেওয়া যাবে কী ভাবে? দুটো উইকেট নিয়েছেন। দুর্ধর্ষ ক্যাচ নিয়েছেন দুটো। মাঠ থেকে প্রেবক্স, সবাই বরং ধরে নিয়েছিল ম্যাচ শেষ। আর পাঁচটা যেতে বড়জোর আরও গোটা পঞ্চাশ-ষাট রান। আগুন রঙা জার্সিতে চোখ তখন ঝলসে যাচ্ছে। মেক্সিকান ওয়েভ উঠছে পরের পর। সবুজ আভা উইকেটে বল হাতে ছুটছেন ‘মিচ’ আর সিংহ-গুহা থেকে আদিম গর্জন উঠছে জ-ন-স-ন...জ-ন-স-ন। একটা বল দেখলেন, পরেরটায় বাউন্ডারি। একটা ছেড়ে তার পর আবার! কয়েক ওভার পর থেকে শুধু পরপর।

শেষ পর্যন্ত ৩৬ বলে ৬৬! স্ট্রাইক রেট ১৮৩। বীরেন্দ্র সহবাগের উইকেট নেওয়ার পর। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের অবিশ্বাস্য ক্যাচ নেওয়ার পর।

ঘটনা হল, এমন অতিমানবিক পারফরম্যান্সের পরেও কেকেআর নিয়ে খুব ঊর্ধ্ববাহু হওয়া যাচ্ছে না। কারণ রাসেলেরটা ‘ওয়ান ম্যান শো’। ব্যাটে, বলে, ফিল্ডিংয়ে একক প্রতিরোধের গিরিশৃঙ্গ হয়ে ওঠা নিয়ম নয়, ব্যতিক্রম। বরং গম্ভীর নয়াদিল্লির ফ্লাইটে উঠবেন ব্যাটিং নিয়ে চিন্তা নিয়ে। টপ অর্ডারে তাঁর ব্যাট না চললে ইনিংস থমকে যাচ্ছে। রবিন উথাপ্পা আইপিএল সেভেনের উথাপ্পা নন। মণীশ পাণ্ডের ডাকাবুকো ব্যাটিং অদৃশ্য। সাকিব আল হাসানের পরিবর্তকেও দেখে নেওয়া গেল না। রায়ান টেন দুশখাতে এ দিন খেললেন এক বল। প্রথম বলেই এলবিডব্লিউ। বল করেননি। অতএব পরীক্ষা করা গেল না। বরং একটা সময় ম্যাচ হারার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গেল।

দিনটা যখন ক্যারিবিয়ান কালিসের
• বোলিং: ৪-০-৩৯-২ • ক্যাচ ২, শিকার ম্যাক্সওয়েল
• ৩৬ বলে ৬৬ রান বাউন্ডারি ৯, ছক্কা ২।
সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন।

অথচ একটা সময় পর্যন্ত মনে হচ্ছিল, ম্যাচ প্রথমার্ধেই বোধহয় শেষ। ‘চাণক্য’ গম্ভীরের চাতুর্য আর কেকেআর পেস আক্রমণের সামনে সবুজ পিচে পঞ্জাবকেই একটা সময় মনে হচ্ছিল ‘পঞ্চত্বপ্রাপ্তির’ দিকে এগোচ্ছে। মনে হচ্ছিল, যতই লেখালেখি হোক যে আইপিএল সেভেন ফাইনালের রিপিট টেলিকাস্ট চলছে, মোটেও তা নয়। এটা একপেশে আধিপত্যের ম্যাচ। যেখানে নির্মম টিমটার নাম কেকেআর।

তখন অসহায় ভাবে সহবাগ দেখছেন তাঁর একশোতম আইপিএল ম্যাচকে ‘মর্যাদা’ দিতে শর্ট লেগ আমদানি করছেন গোতি। ওঁত পেতে যে অপেক্ষা করছে মর্কেলের বাউন্সারে একটা খোঁচার। একটু পর শর্ট লেগকে স্কোয়্যার লেগ করে দিলেন এবং সহবাগ আউট।

তখন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল আবিষ্কার করছেন বিশ্বকাপে স্বপ্নের ফর্ম তিনি ইয়ারায় ফেলে এসেছেন। ৩০ বলে নব্বইয়ের দিনগুলো অতীত, এখন কুড়ি বলে ৩৩ তুলতেও আকাশে উঠে যাচ্ছে বার দুয়েক।

তখন জর্জ বেইলি টের পাচ্ছেন, সবুজ উইকেট বানিয়ে মর্কেলদের ‘নেমন্তন্ন’ করলে কী দশা হয়। দেখছেন ১৫৫ তুলতে টিমের ন’টা চলে গেল। যার সাতটা তুলে নিল কেকেআর পেসাররা!

কিন্তু এর পরের পঁয়তাল্লিশ মিনিটে দৃশ্যপট বদল আরও আশ্চর্য। আরও অভাবনীয়।

মণীশ কী করতে চাইলেন বোঝা গেল না। সোজা বেইলির হাতে। কেকেআর ৩৮-২।

সূর্য মিচেল জনসনকে ‘ইন্সটিঙ্কটে’ দুটো বিশাল ছক্কা মেরে বুঝতে পারলেন ঋদ্ধিমান উইকেটকিপিংটাও ‘ইন্সটিঙ্কটে’ করেন! স্লিপ দিয়ে পাঠাতে গেলেন, সমাপ্তি হল ডান দিকে অবিশ্বাস্য ক্যাচে। কেকেআর ৬০-৩।

কয়েকটা বল পর এ বার গম্ভীর। আবার ঋদ্ধি, আর ষাটে চার।

রায়ান টেন দুশখাতে এক বল। ষাটেই পাঁচ।

যার পর প্রশ্ন ওঠা অসম্ভব নয়, কোন যুক্তিতে অত তাড়াহুড়োর দিকে যাচ্ছিল কেকেআর। রান রেট যেখানে ছিল প্রয়োজনের চেয়ে বেশি। এটাও বলা অন্যায় হবে না যে, কেকেআর ব্যাটিং গত বারের মতো অপ্রতিরোধ্য এখনও নয়। দুর্গে ফাটল দেখা যাচ্ছে। যে ফাটল দিয়ে আজ একটা ‘ডাবল উইকেট মেডেন’ গলল। যা দিয়ে এক অজানা আতঙ্ক ২৫ রানে চার উইকেট নিয়ে চলে গেলেন। উইকিপিডিয়ায় গেলে পরিচিতিতে পাঁচটা লাইন পাওয়া যাবে বড়জোর। বিখ্যাত ক্রিকেট ওয়েবসাইটে গোটা তিনেক প্যারাগ্রাফ। অনূর্ধ্ব উনিশ বিশ্বকাপ খেলেছেন। রঞ্জিতে পঞ্জাবের হয়ে বল-টল করেন। বছর দুয়েক ধরে কিঙ্গস ইলেভেন পঞ্জাবে। ব্যস। খুব মনে রাখার মতো নয়।

শুধু কেকেআর মনে রাখবে। মনে রাখবে কোনও এক সন্দীপ শর্মা কী ভাবে স্রেফ চারটে ওভারে চ্যাম্পিয়নের ঔদ্ধত্য চুরমার করে দিয়েছিল!

আজ নামতে পারেন স্টার্ক
নিজস্ব প্রতিবেদন

বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মিচেল স্টার্ক মাঠে নামতে পারেন রবিবার। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে ফিটনেসের কারণে এত দিন খেলেননি তিনি। রবিবার মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে তিনি নামতে পারেন বলে জানালেন বিরাট কোহলির দলের আর এক বিদেশি তারকা ড্যারেন সামি। শনিবার দলের প্র্যাক্টিসের পর তিনি বলেন, ‘‘কাল স্টার্ক খেলবে বলেই মনে হচ্ছে। সাদা বলের ক্রিকেটে ও ভাল ফর্মে আছে। এখানেও ভাল করবে। ওর খেলা মানে দলের বাড়তি মনোবল পাওয়া।’’ মুম্বই ইন্ডিয়ান্স চারটি ম্যাচের একটিতেও জিততে পারেনি। লিগ টেবলের একেবারে নীচে তারা। বেঙ্গালুরু তাদের ঠিক উপরে। তবে কোহলিরা এখনও দু’টির বেশি ম্যাচ খেলেননি। শেষের দুই দল যেমন মুখোমুখি হবে, তেমন রবিবার অন্য ম্যাচে সেরা দুই দলও মুখোমুখি হবে। চেন্নাই সুপার কিঙ্গস ও রাজস্থান রয়্যালস। এই নিয়ে তাদের দ্বিতীয় ঘরের মাঠ মোতেরায় খেলবে রাজস্থান।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement