ঈশানের দাপটে কোণঠাসা অন্ধ্রপ্রদেশ।৩৬ রানে দুই উইকেট তুলে নিলেন (ডান দিকে) মুকেশ কুমারও। ছবি-দেশকল্যাণ চৌধুরী ও নিজস্ব চিত্র।
দেখা যায়নি সেই চেনা লাফ। চোখে পড়েনি সেই বিষাক্ত আউটসুইংও। অন্ধ্রপ্রদেশের বিরুদ্ধে বাংলার ম্যাচের আগের দিনই বাদ পড়েছেন অশোক ডিন্ডা। কিন্তু তাঁর উত্তরসূরিদের পারফরম্যান্সে ফুটে উঠল তাঁর ছেড়ে যাওয়া পরিচিত আগ্রাসন, গতি ও বিপক্ষকে ভয় পাইয়ে দেওয়ার মনোভাব।
বাংলার ২৮৯ রানের জবাবে ঈশান পোড়েল, মুকেশ কুমার, বি অমিত ও আকাশ দীপের দাপটে তৃতীয় দিনের শেষে অন্ধ্রপ্রদেশের রান ১১০-৭। ফলো-অন থেকে বাঁচতে এখনও ৩০ রান দূরে রয়েছে হনুমা বিহারীর দল। প্রথম দিন কাঁধের হাড় সরে যাওয়ায় ব্যাট করবেন না মণীষ গোলামারু। তাঁর পরিবর্ত হিসেবে ব্যাট করছেন বি আয়াপ্পা (অপরাজিত ৫)।
শুক্রবারই বিপক্ষকে ফলো-অন করিয়ে দেওয়া যেত। ৪০তম ওভারে বি অমিতের বলে ওপেনার জ্ঞানেশরের ক্যাচ গিয়েছিল অধিনায়ক অভিমন্যু ঈশ্বরনের হাতে। টিভি আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে নো-বল হওয়ায় তিনি এখনও অপরাজিত। ৪৫ রানে ক্রিজ কামড়ে পড়ে রয়েছেন তিনি।
এ দিন মাঠ ভেজা থাকায় নির্ধারিত সময়ের পৌনে দু’ঘণ্টা পরে শুরু হয় ম্যাচ। কনকনে ঠান্ডা হাওয়া ও স্যাঁতস্যাঁতে পিচ পেসারদের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করেছিল। উইকেট ও পরিবেশের লোভ সামলাতে না পেরে খাটো লেংথের বল করার সম্ভাবনা থাকে তরুণ পেসারদের। ঠিক যে ভুল করেছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের পেস-ত্রয়ী। এই পরিবেশে কী রকম জায়গায় বল রাখলে সুবিধা পাওয়া যায়, তার উদাহরণ হয়ে থাকল বাংলার পেস ব্রিগেডের দাপট। বিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের শরীরের কাছ থেকে দু’দিকে সুইং করাচ্ছিলেন ঈশান, মুকেশরা। শুরুতে হাই কোর্ট প্রান্ত থেকে টানা ১২ ওভার বল করানো হল ঈশানকে। তাঁর প্রভাব পড়ল বিপক্ষ শিবিরে। প্রথম স্পেলে ঈশানের বোলিং পরিসংখ্যান ১২-৪-২৪-৩। ফিরিয়ে দেন অন্ধ্রের তিন স্তম্ভ হনুমা, রিকি ভুই ও শ্রীকর ভরতকে। উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া হনুমা (২৩) পরাস্ত ঈশানের সুইং ও বাউন্সে। ১৭তম ওভারের তৃতীয় বলে হনুমার শরীরের সামনে থেকে বাইরে সুইং করান ঈশান। ভারতীয় ক্রিকেটার বলের কাছে শরীর নিয়ে যাওয়ার আগেই বল তাঁর ব্যাট ছুঁয়ে দ্বিতীয় স্লিপে মনোজ তিওয়ারির হাতে চলে যায়। পরের বল ছিল ইনসুইং। ব্যাট নামানোর আগেই রিকির প্যাডে আছড়ে পড়ে তা। শেষ দু’ম্যাচে সেঞ্চুরি করে আসা রিকি ইডেনের উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার আগেই আউট। হ্যাটট্রিকের সুযোগ চলে এসেছিল ঈশানের সামনে। ভরত নামতেই চার স্লিপ ও দুই গালি সাজিয়ে তাঁকে হ্যাটট্রিক পূরণের সুযোগ করে দেন অধিনায়ক। কিন্তু হ্যাটট্রিক ও ঈশানের মাঝে দূরত্ব ছিল কয়েক ইঞ্চির। একেবারে স্টাম্পের গা ঘেঁষে বেরিয়ে যায় তাঁর বল। ডিফেন্ড করার সাহস পাননি ভারতীয় দলের রিজার্ভ কিপার ভরত (২)।
কিন্তু ঈশান-আতঙ্ক কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি ভরতের। বাংলার পেসারের ইনসুইংয়েই এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরলেন তিনি। এক দিক থেকে ঈশান যে চাপ তৈরি করেছিলেন, তা বজায় রাখার কাজ সুষ্ঠু ভাবে সারলেন মুকেশ, আকাশ এবং অমিত। ১৮ ওভারে ৩৫ রানে তিন উইকেট নিয়ে দিন শেষ করেন ঈশান। দুই উইকেট মুকেশের। একটি করে উইকেট নেন অমিত ও আকাশ।
ঈশানের জ্বলে ওঠার দিনেই বাংলা পেয়ে গেল তাদের দ্রুততম পেসারকেও। অভিষেক ম্যাচে বিপক্ষ শিবিরের অন্যতম আতঙ্ক হয়ে ওঠেন আকাশ দীপ। অনূর্ধ্ব-২৩ কর্নেল সি কে নাইডু ট্রফির প্রথম দুই ম্যাচে আট উইকেট পেয়ে বাংলা দলে সুযোগ পেয়েছেন আকাশ। ডিন্ডার পরিবর্ত হিসেবে প্রথম একাদশে সুযোগ পান। শুরু থেকেই নিজেকে প্রমাণ করার চাপ ছিল তাঁর মধ্যে। অনায়াসে সেই চাপ কাটিয়ে সাত ওভারে আট রান দিয়ে এক উইকেট তাঁর ঝুলিতে।
সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলার এই পেস আক্রমণের অভিজ্ঞতা মাত্র ৩৩ ম্যাচের। কিন্তু তাঁদের শরীরীভাষা, আত্মবিশ্বাস ও উইকেট পাওয়ার খিদে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিচ্ছে।