১২ ফেব্রুয়ারি, বিশ্বকাপ শুরুর আগে আনন্দবাজারে গৌতম ভট্টাচার্যকে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাত্কারে যা বলেছিলেন মাইকেল ক্লার্ক...
প্রশ্ন: অ্যাডিলেডে আপনার সেই সাংবাদিক সম্মেলনে ছিলাম বলেই আজ টিম জার্সিতে আপনাকে দেখে এত অবাক লাগছে। সে দিন আপনি প্রায় চোখে জল এনে বলেছিলেন আর হয়তো আমার ক্রিকেট খেলা হবে না।
ক্লার্ক: সত্যি সে দিন মনে হয়েছিল আর বুঝি বাকি জীবনে ক্রিকেট খেলা হল না। আমার পিঠ আর ডান পায়ের হ্যামস্ট্রিং আগেই গেছিল। এর পর যখন বাঁ পায়ের হ্যামস্ট্রিংটাও গেল, ধরেই নিয়েছিলাম সব শেষ।
প্র: অস্ট্রেলিয়ান মিডিয়া আপনার কামব্যাক করার চেষ্টা নিয়ে নেগেটিভ লিখছে কেন? ওরা বলছে ক্যাপ্টেনের আনফিট হয়ে দলে ঢোকার এই সংস্কৃতি আর যাই হোক, অস্ট্রেলীয় নয়!
ক্লার্ক: পাগলামি করছে! ওরা কি ভুলে গেছে ২০০৭ বিশ্বকাপে সাইমন্ডসকে আমরা নিয়ে গেছিলাম হাত স্লিংয়ে ঝোলানো অবস্থায়। একটাই কারণে যে, সবাইয়ের ভরসা ছিল, ও যদি একটু সুস্থও হয়ে যায়। শেষ দিকের ম্যাচে দারুণ কাজে দেবে। মিডিয়া সব জানে, তবু লিখছে। ওদের তো কাগজ বিক্রি করতে হবে না!
প্র: মিডিয়া আভাস দিচ্ছে আপনার আর স্টিভ স্মিথের মধ্যে ছায়াযুদ্ধের।
ক্লার্ক: ওরা কি জানে যে টিমের ক’জনের সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ গত দু’মাস ধরেও ছিল? ওরা কি জানে টিমে ক’জন আমাকে অনবরত এসএমএস করে? ওরা কি জানে স্টিভ স্মিথের দল ওরা যেটা বলছে সেটা করছেন আসলে নির্বাচকেরা? ওরা না জেনেই যা ইচ্ছে ছাইপাশ লিখে চলছে। যা বাবা লেখ। লিখে ভাল থাক।
প্র: এই যে উপমহাদেশে আমাদের সবার ধারণা অস্ট্রেলিয়ান মিডিয়া হল অস্ট্রেলিয়ান টিমের ব্যাপারে অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র। সেটা কি বলতে চান ফ্যালাসি? সত্যি নয়?
ক্লার্ক: (তীব্র বিরক্তির সঙ্গে) হাসাচ্ছেন তো দেখছি! অস্ট্রেলিয়ান মিডিয়া করবে সাপোর্ট অস্ট্রেলিয়ান টিমকে তা হলেই হয়েছে। আমাদের সোনার টিমের সময়ই করেনি। আমরা তখন টানা জিতছি। অথচ ওরা আপসেট হয়ে যেত। বলত, ক্রিকেট বোরিং হয়ে যাচ্ছে। এর পর আমাদের টিমটা অনেক বদলাল। আমরা মাঝেমধ্যেই হারতে শুরু করলাম। তাতেও তীব্র সমালোচনা কোথায় গেল সেই টিম! আমি তো আজও বুঝতে পারি না তোরা কী করলে খুশি হবি বল তো? আমরা জিতলে, না হারলে?
প্র: বিরানব্বইয়ে এখানে হওয়া শেষ বিশ্বকাপে ইমরানের একটা মোটিভেশন ছিল। মায়ের নামে ক্যানসার হাসপাতাল তৈরির জন্য কাপ জেতো! এ বারের বিশ্বকাপে কি আপনাদের স্লোগানটাও হতে পারে হিউজের স্মৃতিতে কাপ জেতো?
ক্লার্ক: হওয়া উচিত। আমি ব্যক্তিগত ভাবে ফিলের জন্য কাপ জিততে চাইব। তবে টিমের সঙ্গে কথা হয়নি। জানি না ওদের মানসিকতা কী? তবে আশা করব ওরা এ ভাবেই ভাববে।
কাপ জিতে উঠে সাংবাদিক সম্মেলনে যা বললেন মাইকেল ক্লার্ক...
(মেলবোর্ন থেকে চেতন নারুলা)
গত দু’মাস আমার জন্য খুব কঠিন গিয়েছে। আমরা এখনও ফিল হিউজের কথা ভাবি। সব সময় ভাবব। টুপিতে ওর নম্বর না লাগিয়ে আমি কখনও টেস্ট খেলব না। বাকি ক্রিকেট কেরিয়ারও কালো আর্মব্যান্ড পরে খেলে যাব। আমরা বিশ্বাস করি এই বিশ্বকাপটা আমরা ষোলো জন মিলে খেলেছি। এই ট্রফিটা হিউজের জন্য।
এই দিনটা আমাদের সবার জন্য দারুণ স্পেশ্যাল। জীবনের শুরু থেকে অবিশ্বাস্য সব প্লেয়ারের সঙ্গে খেলেছি। এই টিম সম্পর্কেও সে কথা বলা যায়। আমি নিশ্চিত, যাদের মধ্যে অনেকেই কেরিয়ারের শেষে এসে গ্রেট হিসেবে চিহ্নিত হবে। আমি এর চেয়ে আর বেশি কিছু চাইতে পারতাম না।
ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ...অস্ট্রেলীয় দর্শকদের সামনে খেলা। আমাদের উপর অনেক অতিরিক্ত চাপ ছিল। ছেলেরা সেই সব চাপ সামলে, গোটা টুর্নামেন্টটা উপভোগ করেছে। সেমিফাইনালের পরেই বলেছিলাম, আমরা ফাইনালের জন্য তৈরি। সেটা এ দিন বুঝিয়ে দিলাম।
এটাই আমার সরে যাওয়ার ঠিক সময়। এই টিমটা আরও সাফল্য পাবে। আরও উঁচুতে পৌঁছবে।