বিদেশি: টালিগঞ্জের বিরুদ্ধে কাসিম খেললেও বিশ্রামে আমনা। বৃহস্পতিবার অনুশীলনে। সুদীপ্ত ভৌমিক
টানা আট বার জিতে যে খেতাব জেতাটা অভ্যাস করে ফেলেছে ইস্টবেঙ্গল, সেই কলকাতা লিগ কি সুভাষ ভৌমিকের দলের কাছে এ বার গুরুত্বহীন প্রতিযোগিতা?
পনেরো বছরের অধরা আই লিগ জিততে কি কলকাতা লিগকে মহড়ার মঞ্চ করতে চাইছে লাল-হলুদ?
মনোরঞ্জন ভটাচার্যের টালিগঞ্জ অগ্রগামীর বিরুদ্ধে আজ, শুক্রবার ঘরোয়া লিগের উদ্বোধনী ম্যাচ খেলতে নামার আগে ইস্টবেঙ্গলের পরিবেশটা অন্তত সে রকমই। লাল-হলুদের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর সুভাষ ভৌমিক ঘোষণা করে দিয়েছেন, হাতে দুই বিদেশি থাকা সত্ত্বেও একজনকেই খেলাবেন তিনি। ‘‘আল আমনা প্রথম আঠেরোয় থাকবে। কিন্তু খেলবে না। ওকে বিশ্রাম দেব,’’ বলে দিয়েছেন আশিয়ান জয়ী কোচ। টিডি এ কথা বললেও এ দিনের অনুশীলনে বেশির ভাগ কর্নার এবং ফ্রি-কিকই মারছিলেন আমনা।
সুভাষ বনাম মনোরঞ্জন— লড়াইকে ময়দানে বলা হচ্ছে লাল-হলুদের ‘ঘরের লড়াই’। কারণ যুযুধান দুই দলের দ্রোণাচার্যই আদতে ইস্টবেঙ্গলের ‘ঘরের ছেলে’।
এ রকম একটা ‘সম্মানের ম্যাচে’ স্বদেশী ব্রিগেডের উপর আস্থা রাখছেন সুভাষ। এমনিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গলে আল আমনা ছাড়া কোনও বিদেশি ছিল না। অন্য বিদেশি কাসিম আইদারার সই আটকে ছিল ছাড়পত্র না আসায়। রাতে তা এসে যাওয়ার পরই তাঁকে সই করিয়ে নেওয়া হল তড়িঘড়ি। আই এফ এ অফিসে নাম নথিভুক্ত করার পর কাসিমের মুখ উজ্জ্বল। বলে দিলেন, ‘‘এটা ক্লাবের প্রথম ম্যাচ। খেলার জন্য মুখিয়ে ছিলাম। সেই সুযোগটা পাব না জেনে মনটা সারাদিন খারাপ ছিল। কী যে ভাল লাগছে।’’ কাসিমের সইয়ের খবর পাওয়ার পর সুভাষও রাতে জানিয়ে দিলেন, ‘‘কাসিমকে পেয়ে গিয়েছি। ওকে তো খেলাবই।’’
কিন্তু আমনার মতো ‘মিডফিল্ড জেনারেল’ কে বসিয়ে রাখাটাও তো ঝুঁকির! প্রশ্ন শুনে সুভাষের জবাব, ‘‘বড় আকাঙ্খা পূরণ করতে হলে ছোটটা ছাড়তে হবে। কাল আমাদের খারাপ ফল যদি হয় আমাকে ঘেরাও করুন। আটকে রেখে দিন। কিন্তু ফুটবলারদের কিছু বলবেন না।’’
ইস্টবেঙ্গল এ বার নান নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ফুটবলারদের উপরে। মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলা তো বন্ধই, কোনও অনুষ্ঠানে যেতে হলেও নিতে হবে অনুমতি। দেরিতে অনুশীলনে এলে জরিমানা, ম্যাচের দিন মোবাইল নিয়ে ড্রেসিংরুমে ঢোকা যাবে না, একা একা খেতে যাওয়া চলবে না— এ রকম অসংখ্য শর্তের কবলে পড়েছেন বালি গগনদীপ,
জোবি জাস্টিনরা।
আই লিগের স্বপ্ন দেখানোর পাশাপাশি সুভাষ অবশ্য বলে দিয়েছেন, ‘‘আমি কলকাতা লিগে আমনাকে বিশ্রাম দিতে চাইছি আই লিগের কথা ভেবে। চাপের মুখে কর্তারা চাইলে নামিয়ে দেব।’’ এ বারের ইস্টবেঙ্গল সেই অর্থে তারকাহীন। নতুন ও অনামীদের ভিড়। কিংশুক দেবনাথ, অভ্র মণ্ডল, লালরিন্দিকা রালতে, সামাদ আলি মল্লিকের মতো হাতে গোণা পুরনো মুখ। মিনার্ভা পঞ্জাব-সহ বিভিন্ন ক্লাব থেকে যে ফুটবলারদের নিয়েছেন কর্তারা, তাদের কলকাতা মাঠের পরিবেশে খেলার অভিজ্ঞতা নেই।
আমনাকে খেলাচ্ছেন না। কিন্তু টালিগঞ্জ অগ্রগামী তো তিন জন বিদেশি নিয়ে খেলবে! তাঁদের সম্পর্কে আপনার অভিজ্ঞতা? প্রশ্ন শুনে সুভাষ দেখিয়ে দেন কোচ বাস্তব রায়কে। এতক্ষণ কাঁচুমাচু মুখে পাশে বসে থাকা বাস্তব বললেন, ‘‘কিছু খোঁজ খবর নিয়েছি। ভাল দল।’’ আপনারা কেউ কি টালিগঞ্জের অনুশীলন ম্যাচ দেখেছেন? বাস্তবকে থামিয়ে দিয়ে সুভাষ বলেন দেন, ‘‘ওদের বিরুদ্ধে যে সব দল অনুশীলন ম্যাচ খেলেছে সেই দলের কোচেদের চা-বিস্কুট খাইয়ে সব জেনে নিয়েছি।’’ যে উত্তর থেকে স্পষ্ট টালিগঞ্জ ম্যাচ নিয়ে ভাবছেনই না সুভাষ। তাঁর চোখ যে এখন আই লিগে।
শুক্রবারে কলকাতা লিগ—ইস্টবেঙ্গল: টালিগঞ্জ অগ্রগামী (ইস্টবেঙ্গল ৪-৩০)