Amarjit Singh Kiyam

অধিনায়কের আট নম্বর জার্সিতে অমরজিৎ ধরে রাখল গোটা দলকে

হারের যন্ত্রণা কাটিয়ে আবার তরজাতা রহিম, অমরজিৎরা। একটা রাতেই বদলে গিয়েছে অনেক কিছু। পরিবারের লোকেদের কাছে এসে যেন অনেক স্বস্তি। ছেলেদের দীর্ঘ ইন্টারভিউ চলছে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে।

Advertisement

সুচরিতা সেন চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৭ ২০:১০
Share:

নিজের জার্সিতে সতীর্থদের সই সংগ্রহ করছে অমরজিৎ।-নিজস্ব চিত্র।

হোটেলের লবিতেই সস্ত্রীক দাড়িয়ে ছিলেন কোচ নর্টন দে মাতোস। গায়ে আর ভারতীয় দলের অফিশিয়াল জার্সি নেই। স্ত্রীকে নিয়ে দিল্লি ভ্রমণে বেরচ্ছেন। হাসি মুখে মাতোসের স্ত্রী বলছিলেন, ‘‘আমি ইন্ডিয়ার ফুটবল ক্রেজ দেখে মুগ্ধ। বিশ্বকাপ দেখতেই এসেছি। আবার ফিরে যাব।’’ আর মাতোস কী করবেন? প্রশ্ন শুনে স্ত্রীর দিকে তাকালেন। তার পর বললেন, ‘‘এখনও জানি না। কিছু কথা হয়নি। দু’একদিনের মধ্যেই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’’ এই দল তো আই লিগ খেলবে। একদম অন্য ফরম্যাট। জাতীয় লিগ খেলা আর আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। সেটা কতটা সঠিক? প্রশ্নটা ঘুরছে ফেডারেশনের মাথায়ও। তবে যা খবর মাতোসকেই রেখে দেওয়া হল অনূর্ধ্ব-১৯ দলের পরবর্তী টুর্নামেন্টের জন্য।

Advertisement

আরও পড়ুন: ভারতীয় ফুটবলকে ঠিক কী চোখে দেখল বিশ্ব? এক নজরে

আরও পড়ুন: এই বিশ্বকাপ থেকে কী পেল ভারত

Advertisement

আই লিগ না খেললে ছেলেদেরও যে খেলার মধ্যে রাখা যাবে না। সামনে অনূর্ধ্ব-১৯ এএফসি কাপ। অনূর্ধ্ব-১৯ ও অনূর্ধ্ব-১৭ দলকে এক করেই তৈরি হবে আই লিগের দল। আবার এই দল থেকেও অনেকেই সুযোগ পেয়ে যেতে পারে এএফসি কাপের অনূর্ধ্ব-১৯ ভারতীয় দলে। বিশ্বকাপে নিজেদের খেলা দিয়ে নজর কেড়ে নিয়েছে এই ছেলেরা। যদিও মাতোস বলছেন, আই লিগ খেলতে হলে দলটাকে সংঘবদ্ধ করতে হবে। ‘‘কী টুর্নামেন্ট খেলব, কী ভাবে পরবর্তী কালে দল চালানো হবে, সব কিছুর উপরই নির্ভর করবে আমার পরিকল্পনা। আরও সংগঠিত করতে হবে।’’ কথা বলতে বলতেই ডাক এল, গাড়ি এসে গিয়েছে কোচের। কোচকে বিদায় জানিয়েই দেখা হয়ে গেল দলের ফুটবলারদের সঙ্গে। সকলেই বাড়ি ফেরার আনন্দে উচ্ছ্বসিত।

হারের যন্ত্রণা কাটিয়ে আবার তরজাতা রহিম, অমরজিৎরা। একটা রাতেই বদলে গিয়েছে অনেক কিছু। পরিবারের লোকেদের কাছে এসে যেন অনেক স্বস্তি। ছেলেদের দীর্ঘ ইন্টারভিউ চলছে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে। একটুও ভাল লাগছিল না জিকসনের মায়ের। ছেলের সঙ্গে কথা বলার জন্য ছটফট করছিলেন তিনি। দিল্লির পাঁচতারা হোটেলের লবিতে সকাল থেকেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসে ভারতীয় দলের ফুটবলারদের পরিবারের লোকজন। ছেলেরা বাড়ি ফিরবে এটা ভেবেই উচ্ছ্বসিত সকলে। জিকসনের অসুস্থ বাবা তো লবির সোফায় শুয়েই ঘুমিয়ে পড়লেন। কলকাতা লিগ খেলে সিকিম গোল্ড কাপ খেলে সরাসরি দিল্লি উড়ে এসেছেন জনি (জিকসনের দাদা)। ভাই গেলে তবেই সে বাড়ি যাবে, না হলে ফিরে যাবে কলকাতায়। তখনও কেউ জানেন না, ছেলেরা বাড়ি ফেরার ছাড়পত্র কবে পাবে। দুপুরের খাওয়া সেরে অভিজিৎরা ফিরতেই জানা গেল, আজ আর কালকের মধ্যেই সবাইকে বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মণিপুরের ফুটবলাররা ফিরবে শনিবার ভোরের ফ্লাইটে। বঙ্গ ব্রিগেড অবশ্য ইতিমধ্যেই বাড়ি পৌঁছে গিয়েছে। জিকসন বলছিল, ‘‘প্রায় তিনমাস পর ফিরছি। ওখানে আমাদের ঘিরে কী চলছে জানি না। হয়তো পৌঁছলে চমক থাকবে। কিন্তু মাকে বলে দিয়েছি, সব খাব কয়েকটা দিন।’’

পরিবারের সঙ্গে ভারতীয় ফুটবল দলের অমরজিৎ ও জিকসন।-নিজস্ব চিত্র।

অধিনায়ক অমরজিতের অবশ্য সারা দিন ধরে আজ একটাই কাজ। তার নিজের দুটো জার্সিতে সতীর্থদের সই সংগ্রহ করা। আর সঙ্গে কমেন্টস। জানতে চাইতেই অমরজিতের মন্তব্য, ‘‘এটা একটা স্মৃতি। আমাদের একটা প্রাপ্তি। সবাই মিলে আমরা এই জায়গাটা পেয়েছি। তাই সেটা এ ভাবে ধরে রাখতে চাই। বাড়িতে রেখে দেব। সারাজীবন থাকবে আমার কাছে। এমন সময় আর কবে আসবে তো জানি না।’’ বাড়ির দেওয়ালে আট নম্বরের ওই দুটো জার্সি ঝুলবে অমরজিতের। আর কয়েকদিনের মধ্যে হয়তো অমরজিৎ, জিকসনের বাড়ির দেওয়ালও পাকা হয়ে যাবে। সেখানে সুন্দর ফ্রেমে বাঁধানো অবস্থায় টানানো থাকবে অধিনায়কের জার্সি। ফ্রেমের ভিতরে থেকে যাবে দলের বাকিরাও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement