Derby

সব প্রজন্ম ঐতিহ্যের ডার্বিরই অপেক্ষায়

এটিকের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে মোহনবাগান আইএসএলে খেলবে। অথচ শতবর্ষে ইস্টবেঙ্গল নেই দেশের সর্বোচ্চ লিগে, মেনে নিতে পারছিলেন না লক্ষ লক্ষ লাল-হলুদ সমর্থক থেকে ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন তারকারা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:২৬
Share:

আশা: ইস্টবেঙ্গল ভক্তদের মধ্যে ফিরছে উচ্ছ্বাস, ফিরছে আবেগ। ফাইল চিত্র

উৎকণ্ঠার অবসান। নতুন লগ্নিকারীর সঙ্গে সংযুক্তিকরণের পরে আইএসএলে ইস্টবেঙ্গলের খেলা নিশ্চিত হয়ে যেতেই যেন আবেগের বিস্ফোরণ ঘটে গেল।

Advertisement

এটিকের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে মোহনবাগান আইএসএলে খেলবে। অথচ শতবর্ষে ইস্টবেঙ্গল নেই দেশের সর্বোচ্চ লিগে, মেনে নিতে পারছিলেন না লক্ষ লক্ষ লাল-হলুদ সমর্থক থেকে ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন তারকারা। অবশেষে স্বস্তি। বুধবার বিকেলে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন লগ্নিকারীর নাম সরকারি ভাবে ঘোষণা করার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ভাইচুং ভুটিয়া সোশ্যাল মিডিয়ায় ইস্টবেঙ্গলের প্রতীক পোস্ট করে লেখেন, ‘‘আইএসএল, আমরা আসছি।’’

ভারতীয় ফুটবলের সর্বকালের অন্য সেরা স্ট্রাইকার আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘লক্ষ লক্ষ লাল-হলুদ সমর্থকের জন্য আমার দারুণ আনন্দ হচ্ছে। প্রচণ্ড উদ্বেগের মধ্যে ছিলেন ওঁরা।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘ব্যক্তিগত ভাবেও আমিও প্রচণ্ড উত্তেজিত। কারণ, আইএসএলে ডার্বি হবে না, এটা ভাবতেই কষ্ট হচ্ছিল। এই কারণে আমি দীর্ঘ দিন ধরেই বলছি, কলকাতার দুই প্রধানকে দরকার আইএসএলের। না হলে প্রতিযোগিতার আকর্ষণ বাড়বে না। পাশাপাশি ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানেরও আইএসএলের মতো মঞ্চ দরকার।’’ লা লিগার উদাহরণ দিয়ে ভাইচুং আরও বলেন, ‘‘রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনাকে ছাড়া কেউ লা লিগার কথা ভাবতে পারে? ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানকে ছাড়াও দেশের সর্বোচ্চ লিগ অসম্পূর্ণ থেকে যেত। তাই দুই প্রধানের আইএসএলে খেলাটা ছিল সময়ের অপেক্ষা। এ বারই তা হওয়ায় দারুণ আনন্দ হচ্ছে। সেই সঙ্গে কলকাতা ময়দানে কর্মকর্তাদের যুগেরও সমাপ্তি ঘটল।’’ কেন? প্রাক্তন ভারত অধিনায়কের ব্যাখ্যা, ‘‘এখন ক্লাব পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন পেশাদারেরা।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, ইস্টবেঙ্গলে এল নতুন লগ্নিকারী

ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের মতোই উদ্বিগ্ন ছিলেন সুকুমার সমাজপতি। তাঁর কথায়, ‘‘এটিকে-মোহনবাগান আইএসএলে খেলবে, অথচ ইস্টবেঙ্গল থাকবে না, ভাবতেই খুব কষ্ট হচ্ছিল। কোনও বাঙালির পক্ষেই এটা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানকে কেন্দ্র করেই যুগ যুগ ধরে বাঙালি বেঁচে রয়েছেন। দুই প্রধান আমাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘আমার মনে হয়, মোহনবাগান সমর্থকেরাও

খুশি হয়েছেন।’’

শ্যাম থাপাও একই রকম আবেগপ্রবণ। বললেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানকে ছাড়া ভারতীয় ফুটবলের বৃত্ত কখনও সম্পূর্ণ হয় না। যত তারকাই থাকুক, ডার্বির উন্মাদনা এটিকে-মোহনবাগান বনাম বেঙ্গালুর এফসি ম্যাচে কখনও দেখা যাবে না। তাই মনেপ্রাণে চাইছিলাম, যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে ইস্টবেঙ্গল যেন আইএসএলে খেলে।’’ মুখ্যমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘‘বাংলার ফুটবলের স্বার্থে মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে এগিয়ে এসেছেন, তাতে আমি অভিভূত।’’

ইস্টবেঙ্গলের ঘরের ছেলে বলে পরিচিত সমরেশ চৌধুরী (পিন্টু) বললেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের বারবার বলতাম, যে ভাবে হোক আইএসএলে খেলতেই হবে। এটিকে-মোহনবাগান দেশের সর্বোচ্চ লিগে খেলবে, আমরা পারব না, হতে পারে না। প্রচণ্ড উৎকণ্ঠার মধ্যে প্রত্যেকটি মুহূর্ত কাটিয়েছি। মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। অবশেষে স্বস্তি।’’ সমরেশের প্রিয় বন্ধু ও সতীর্থ আর এক প্রাক্তন তারকা গৌতম সরকারও উচ্ছ্বসিত। তাঁর কথায়, ‘‘ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানকে ছাড়া কোনও প্রতিযোগিতারই জৌলুস থাকে না। লাল-হলুদ জার্সি গায়ে দীর্ঘ দিন খেলেছি। অধিনায়কও ছিলাম। আমার প্রিয় ক্লাব দেশের সর্বোচ্চ লিগে খেলবে না, কল্পনাই করতে পারছিলাম না। এখন দারুণ আনন্দ হচ্ছে। বিদেশেও অসংখ্য ইস্টবেঙ্গল সমর্থক রয়েছেন, তাঁরাও আমার মতো উদ্বেলিত। তবে মহমেডানের মতো ঐতিহ্যশালী ক্লাবকেও

বাঁচিয়ে রাখতে হবে।’’

ভারতীয় ফুটবলের সর্বকালের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের বেশি আনন্দ হচ্ছে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের জন্য। বলছিলেন, ‘‘লাল-হলুদ সমর্থকেরা প্রায়ই আমাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করতেন, দাদা আমরা কি এই মরসুমে আইএসএলে খেলব না? আমি কোনও উত্তর দিতে পারতাম না। প্রচণ্ড হতাশায় ভুগছিলেন ওঁরা।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ডার্বির উপরেই বেঁচে রয়েছে ভারতের ফুটবল। ঐতিহ্যের এই দ্বৈরথের ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল।’’ আর এক প্রাক্তন তারকা ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, ‘‘হতাশা গ্রাস করেছিল আমাকে। তার থেকে মুক্তি পেলাম। এই আনন্দ বর্ণনা করা কঠিন।’’ আসিয়ান কাপ ও দু’বার ইস্টবেঙ্গলকে জাতীয় লিগে চ্যাম্পিয়ন করা কোচ এবং প্রাক্তন তারকা সুভাষ ভৌমিক বললেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান ও মহমেডানকে ছাড়া ভারতীয় ফুটবল ভাবা যায় না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement