ছিয়াশি বছরের ইতিহাসে প্রথম বন্ধ করা হল বোর্ডের লেনদেন

কে জানত, ইডেনের গ্যালারিতে ধুনুচি নাচ, ঢাক আর এক নম্বর হওয়ার উৎসবের আড়ালে এমন ভয়ঙ্কর ময়াল সাপ লুকিয়ে রয়েছে! ভারতীয় বোর্ড তার ছিয়াশি বছরের অস্তিত্বে বহু কোণঠাসা পরিস্থিতি দেখেছে। সাম্প্রতিক অতীতে তো নিয়মিত দেখছে।

Advertisement

গৌতম ভট্টাচার্য

মুম্বই শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৬ ০৪:৪২
Share:

কে জানত, ইডেনের গ্যালারিতে ধুনুচি নাচ, ঢাক আর এক নম্বর হওয়ার উৎসবের আড়ালে এমন ভয়ঙ্কর ময়াল সাপ লুকিয়ে রয়েছে!

Advertisement

ভারতীয় বোর্ড তার ছিয়াশি বছরের অস্তিত্বে বহু কোণঠাসা পরিস্থিতি দেখেছে। সাম্প্রতিক অতীতে তো নিয়মিত দেখছে। কিন্তু এই সব কিছুকে ছাপিয়ে সোমবার সপ্তাহের প্রথম দিন যা ঘটল, তাকে এক কথায় বলা যেতে পারে মিনি কেলেঙ্কারি। এক ঝটকায় বিচারপতি লোঢা কার্যত ভারতীয় বোর্ডের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে লেনদেন বন্ধ করে দিলেন। ক্রিকেট বোর্ডের ইতিহাসে যা নজিরবিহীন।

ভারতীয় বোর্ডের দুটো অ্যাকাউন্ট আছে। একটা মহারাষ্ট্র ব্যাঙ্কে, একটা ইয়েস ব্যাঙ্কে। এই দুটো ব্যাঙ্কেই এ দিন চিঠি পাঠিয়ে লোঢা বলে দেন, বোর্ডের তরফে কোনও লেনদেনের যেন অনুমতি না দেওয়া হয়।

Advertisement

শোনা যাচ্ছে এর পেছনে চাঞ্চল্যকর কারণ রয়েছে। তা হল— মাত্র ক’দিন আগে বোর্ড কর্তারা তাঁদের বৈঠকে এক গোপন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বহির্জগৎকে না জানিয়ে। যে, বোর্ড কোষাগারের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি টাকা তাঁরা ৬ অক্টোবরের আগেই বিলি করে দেবেন। অর্থাৎ ৬ অক্টোবরের পরে যদি সুপ্রিম কোর্ট নতুন কমিটি বা রিসিভারও আনে, তাদের জন্য বোর্ড কোষাগারে পড়ে থাকবে বারোশো কোটির বদলে তিনশো কোটি টাকা। তবে বোর্ড সূত্রে এর কোনও সমর্থন পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হচ্ছেন না।

বোর্ড ইমার্জেন্ট ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে সম্প্রতি টেস্ট খেলোয়াড়দের ফি দ্বিগুণেরও বেশি করে ম্যাচ পিছু পনেরো লাখের ঘোষণা সাড়ম্বরে করলেও এই ব্যাপারে মুখটিও খোলেনি। এ কথা কোথাও জানায়নি, তারা সদস্যদের দেওয়া ভর্তুকিও যে এ ভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে। গোপনে তারা সিদ্ধান্ত নেয়, প্রত্যেক সদস্য সংস্থাকে তিরিশ কোটি টাকা করে পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য দেবে। হিসেব করে দেখা হয়, তিরিশ সদস্যকে তিরিশ কোটি করে দিলে ন’শো কোটি টাকা চলে যাবে। পড়ে থাকবে তিনশো কোটির কাছাকাছি। এই সিদ্ধান্ত শুধু গোপনই রাখা হয়নি, সদস্যদের মন্ত্রগুপ্তির শপথও নেওয়ানো হয়।

কেউ দূরতম কল্পনাতেও ভাবেনি যে, বোর্ডের ভেতর থেকেই খবরটা বিচারপতি লোঢার কাছে লিক হয়ে যাবে। এবং তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে নেবেন। বিচারপতি লোঢা দুপুরেই বোর্ড কোষাধ্যক্ষ অনিরুদ্ধ চৌধুরি ও সচিব অজয় শিরকেকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেন, ‘আপনারা যা করতে যাচ্ছেন সেটা বেআইনি। আমাদের পরের অর্ডার পর্যন্ত আপনারা কোনও ব্যাঙ্ক লেনদেন করতে পারবেন না।’ রাতে জিজ্ঞেস করা হলে বোর্ডের মিডিয়া ম্যানেজার নিশান্ত অরোরা এড়িয়ে যাওয়ার ভঙ্গিতে বললেন, ‘‘শুনছি। অনেক কিছু কানে আসছে। সরকারি ভাবে আমি কিছু জানি না।’’

রাতে মুম্বই এবং নয়াদিল্লি ক্রিকেট এবং আইনজীবী মহলে কথা বলে দেখা গেল, অশ্বিনের আবার পাঁচ উইকেট নয়। এ দিনের ঘটনা নিয়ে তীব্র বিস্ময় সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোনও কোনও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বললেন, বোর্ড বোকামি করে পুরো যুদ্ধের রাস্তায় চলে গেল। বোঝাই যাচ্ছে আদালতের কাছে আর্থিক বিশ্বাসযোগ্যতাও তারা হারিয়েছে।

এ বার অপেক্ষা মহাপঞ্চমীর পর্দা ওঠার। বান্দ্রা কুর্লা কমপ্লেক্সে মুখোমুখি পড়ে যেতে আদিত্য বর্মা বললেন, ‘‘চতুর্থীর দিন দিল্লি পৌঁছচ্ছি। দেখুন না পরের দিনটা কী হয়!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement