ইতিবাচক: সিরিজে ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে আত্মবিশ্বাসী রাহানে। ফাইল চিত্র
অজিঙ্ক রাহানে সচরাচর মুখে জবাব দেওয়া পছন্দ করেন না। বিশ্বাস করেন, মাঠে দাঁড়িয়ে ব্যাট বা বল হাতেই যা কথা বলার বলতে হয়।
চেন্নাইয়ে দ্বিতীয় টেস্ট শুরুর আগের দিন ‘ভার্চুয়াল’ সাংবাদিক সম্মেলনে অবশ্য অন্য দিকটা দেখা গেল। এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন, তাঁর সাম্প্রতিক ব্যাটিং ফর্ম নিয়ে যে চর্চা শুরু হয়েছে, তা নিয়ে তিনি কী বলবেন? রাহানে বলে দিলেন, যাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, তাঁদের উচিত রেকর্ড দেখা। ‘‘আমরা শেষ বার দেশের মাঠে টেস্ট খেলেছি দু’বছর আগে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। যদি আমার শেষ ১০-১৫টা টেস্ট ম্যাচের স্কোর মেলালে, নিশ্চয়ই কিছু রান দেখতে পাবেন,’’ বলে ওঠেন রাহানে। দ্রুত যোগ করেন, ‘‘এখানে প্রথম টেস্ট ম্যাচে কী হয়েছে, তা নিয়ে ভেবে উদ্বিগ্ন নই। ক্রিকেট মাঠে ব্যক্তি নয়, আসল হচ্ছে টিম। আমি কত রান করেছি তার চেয়েও জরুরি হচ্ছে, আমি দলের প্রয়োজনে কতটা আসতে পারলাম। দলের জন্য কী অবদান রাখতে পারলাম। আমি দলের জন্য অবদানের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।’’
অস্ট্রেলিয়ায় দুরন্ত জয়ের টেস্ট সিরিজে সদ্য মেলবোর্নে সেঞ্চুরি করেছেন রাহানে। কিন্তু গত বছরের মাঝ ফেব্রুয়ারি থেকে বাকি ১৩টি ইনিংসে কোনও সেঞ্চুরি বা হাফ সেঞ্চুরি নেই। কথা উঠছে তাঁর ধারাবাহিকতার অভাব এবং বড় স্কোর না পাওয়া নিয়ে। সঞ্জয় মঞ্জরেকর সম্প্রতি টুইট করেন, ‘‘রাহানেকে অধিনায়ক করার কথা হচ্ছে। কিন্তু অধিনায়ক রাহানের ক্ষেত্রে আমার প্রশ্ন ব্যাটসম্যান রাহানেকে নিয়ে। মেলবোর্নে সেঞ্চুরি করার পরে ওর স্কোর যথাক্রমে ২৭ নট আউট, ২২, ৪, ৩৭, ২৪, ১ ও ০। সেঞ্চুরি করার পরে বড় ব্যাটসম্যানেরা সেই ফর্ম ধরে রাখে। দলে যারা ফর্মে নেই, তাদের খামতি পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।’’
অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সিরিজ জেতার পরে তাঁকে অধিনায়ক করার দাবি উঠেছিল। আর দিন কয়েকের মধ্যে প্রশ্ন উঠে গেল, ব্যাটসম্যান রাহানের ফর্ম নিয়ে। রাহানে নিশ্চয়ই বুঝছেন, ক্রিকেট যেমন দু’হাত ভরে দেয়, তেমন এক লহমায় ছিনিয়েও নেয়। সহ-অধিনায়কের পাশে যদিও দাঁড়াচ্ছেন অধিনায়ক। চেন্নাইয়ে প্রথম টেস্ট হারের পরেও বিরাট কোহালি বলে দিতে ছাড়েননি, ‘‘অজিঙ্ক ও পুজারা আমাদের দলের ব্যাটিং সম্পদ। সেই বিশ্বাসে কোনও পরিবর্তন হবে না। ওর দক্ষতায় পূর্ণ আস্থা রয়েছে আমাদের।’’
এ দিন ছিল রাহানের পালা। অধিনায়কের প্রতি বিশ্বাসের কথা শুনিয়ে দিলেন তিনি। এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, প্রথম টেস্টে দলের শরীরী ভাষা আগের জায়গায় ছিল না। অস্ট্রেলিয়ায় যে দাপটের সঙ্গে সিরিজ জিতেছেন তার কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি ভারতের পারফরম্যান্সে। বিরাট ফিরে আসায় কি কোনও পরিবর্তন ঘটল? রাহানের জবাব, “বিরাট ফিরে আসার সঙ্গে আমাদের শরীরী ভাষার কোনও যোগসূত্র নেই। যদি মশলাদার মন্তব্য শুনতে চান, তা হলে ভুল জায়গায় এসেছেন।” যোগ করেন, “আগেও বলেছি, বিরাটই আমার অধিনায়ক। এখনও আলাদা কিছু বলব না।”
তবে রাহানেদের ছন্দে ফেরার বড় পরীক্ষা আসছে দ্বিতীয় টেস্টে। তিনি নিজেই যে বলে দিচ্ছেন, প্রথম টেস্টের তুলনায় এই টেস্টের পিচ সম্পূর্ণ আলাদা। শুক্রবার পিচ দেখেছেন রাহানে। বলে গেলেন, “প্রথম ম্যাচের পিচের থেকে অনেকটাই আলাদা। প্রথম দিন থেকে ঘুরতে পারে বল। তবে দিনের প্রথম সেশনের খেলা দেখার পর থেকেই বোঝা যাবে কী রকম আচরণ করবে পিচ। প্রথম টেস্টে কী ঘটেছে, তা ভুলে যেতে হবে আমাদের। মনঃসংযোগ করতে হবে এই টেস্টের উপরে।”
শেষ তিনটি টেস্টের একটিতেও বড় রান নেই রোহিত শর্মার। তাঁর ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুললে রাহানের উত্তর, “রোহিত অনবদ্য ক্রিকেটার। ও ক্রিজে টিকে গেলে বড় রান হবেই। রোহিতের ছন্দে ফেরা শুধু সময়ের অপেক্ষা।” ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানেরা, বিশেষ করে জো রুট এত ভাল সুইপ খেলছেন। আর দেশের মাটিতে ভারতীয়দেরই এই শট খেলতে দেখা যাচ্ছে না। দ্বিতীয় টেস্টে কি সুইপ-স্ট্র্যাটেজি দেখা যাবে? রাহানে বলছেন, ‘‘ওরা কী ধরনের বোলিং করছে, তার উপরে নির্ভর করবে। কী রকম লাইন, লেংথে বল করে। সে সব দেখেই আমরা শট খেলব। ওরা যা করবে, সেটাই আমাদের করতে হবে এমন তো কোনও কথা নেই।’’